পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পিচঢালা পাকা রাস্তা, কিন্তু দেখে বুঝার উপায় নেই এটি পাকা রাস্তা। জায়গা বিশেষে দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি মাটির আস্তরণ পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাকা রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে যায় নয়তো ধুলায় ঢাকা পড়ে। ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ১০টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। চলাচলে সমস্যা হওয়ায় স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাতটি স্কুলের শিশুরা।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুরালী গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে এক কিলোমিটার সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মুরালী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরিডিয়ান স্কুল, মুন্সিবাজার হাইস্কুল, কলাগাও হাইস্কুল এবং মুশুরিয়া মাদরাসাসহ ৭/৮টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত। সেই সঙ্গে মুরালী,বালিগাও, দুগাও, পইতুরা, বাঙালিগাও, আলিসের গাও এবং জামুরাসহ আশপাশের ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। কিন্তু স্কুলের পাশ ঘিরে পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে জনবসতির পাশে গড়ে ওঠা ‘কাজী খন্দকার ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই অঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ।
দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী এই সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করেও কোনো সমাধান না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক ও ট্রলিতে মাটি যাচ্ছে রাজনগর সদর ইউনিয়নের মুরালী গ্রামে অবস্থিত কাজী খন্দকার ব্রিকস নামের ইটভাটায়। সারাবছর পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে মাটি পরিবহনের কারণে পাকা রাস্তার ওপর দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটির স্তূপ পড়েছে। জমে থাকা এই মাটির কারণে শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) ভোররাত থেকে বৃষ্টির কারণে এক কিলোমিটারব্যাপী পাকা রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। এই রাস্তা দিয়ে এলাকাবাসী চলাচল করতে পারছেন না।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা করে জানা যায়, বৃষ্টি হলে কাদা আর বৃষ্টি না থাকলে ধুলাবালি সেই সঙ্গে ইটভাটায় প্রতিদিন মাটি বহনকারী ট্রাকের শব্দে তারা মহাবিপাকে পড়েছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে এই সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে না। ফসলের উর্বর জমি এমনকি বন্যা প্রতিরোধের বাঁধ কেটেও ইটভাটায় মাটি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বালিগ্রামের বাসিন্দা জুবায়ের আহমদ বলেন, প্রতিদিন বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রে শহরে যাওয়ার পথে ধুলাবালি আর কাদার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। বড়রা কোনোভাবে চলতে পারলেও শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। আশেপাশের ২০ হাজার মানুষের এই দুর্ভোগ নিয়ে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত কথা বললেও কোনো লাভ হয়নি। প্রশাসন মৌখিক আশ্বাস দিলেও এই দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি মিলছে না।
স্থানীয় যুবক আব্দুর রব জানান, কাদা মারিয়ে চলাচলের কারণে ৭/৮টি গ্রামের স্কুলমুখী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা মহাবিপাকে পড়েছেন। মাদরাসা ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা চরম বিরক্ত। মাদরাসা ও স্কুলে হেঁটে যাওয়ার সময় কাদার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ইটভাটার ট্রাক দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়ার সময় কাদাযুক্ত পানিতে কাপড় নষ্ট করে ফেলে। আমরা বড়রাসহ ছোট ছোট বাচ্চারা রাস্তা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জমিতে নেমে ওই স্থান অতিক্রম করতে হয়৷
তিনি বলেন, ইটভাটাটি আইন না মেনে জনবসতিতে করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফসলের মাঠ এবং ছড়ার পাড়ের মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়।
মুশুরিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী লুবনা বেগম জানায়, প্রতিদিন মাদরাসায় হেঁটে যাওয়ার সময় এসব ট্রাক দ্রুত গতিতে যায়। তখন তারা রাস্থা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জমিতে নেমে পড়ে৷
পরিবেশ অধিদফতরের মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, ওই ইটভাটার ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পেয়ে কাগজপত্র যাচাই করে আমরা যা পেয়েছি তাতে ইটভাটাটির কাগজপত্রে প্রচুর সমস্যা পেয়েছি। এছাড়াও সেখানে সনাতন পদ্ধতিতে ইট তৈরি করা হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আগামী সপ্তাহেই আমরা ব্যবস্থা নেব, প্রয়োজনে ইটভাটাটি ভেঙে দেয়া হবে।