এখনো ফিরে আসার সময় ফুরোয়নি
মুহাম্মাদ আইয়ূব : চোখের পলকে মমের মত গলে গলে রহমত, মাগফিরাতের বরকতময় দিনগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজিকের সূর্য অস্ত গেলেই খতম হয়ে যাবে ১৪৪১ হিজরির রমজানুল মুবারকের মাগফিরাত দশক। আমরা প্রবেশ করব নাজাতের দশকে। তাই সূর্যাস্তের আগে আগেই আমাদের ছোট্ট একটি হিসেব কিতেব করে নিতে হবে। আর এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ, বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। আল্লাহর ইবাদাত না করা, নবীজীর সুন্নত না মানা, পিতা মাতার অবাধ্যাচারণ, গীবত, মিথ্যা, চুরি, বাটপারি, রাহাজানি, ছিনতাই, ওয়াদাভঙ্গ, সূদ, ঘুষ গান-বাজনা সহ যাবতীয় পাপকর্ম থেকে মুক্ত হতে পেরেছি কিনা? যদি অন্তর সাক্ষী দেয় তাহলে এবার সামনে এগোনোর পালা। মুক্তি চাই মুক্তি চাই। ওগো আল্লাহ! আপনার এ গোনাহগার কে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিন।
আর যদি অন্তর পক্ষে সাক্ষী না দিয়ে বিপক্ষে বলে তাহলে আজ মাগফিরাতের শেষ বেলায় খাঁটি অন্তরে তওবা করে মহান মালিকের দরবারে ফিরে আসতে হবে। কাঁদতে হবে অঝোর ধারায়, ভ্যা ভ্যা করে কান্নার অভিনয় করতে হবে ভিক্ষুকের মত (হাদিসের ভাষায় আল্লাহ পাক এটাও পছন্দ করেন) তারপরও আমাদের ক্ষমা চাই ক্ষমা! ক্ষমা ছাড়া আমরা কিছুই বুঝিনা, বুঝিতেও চাইনা।
আপনার সমীপে পাঠক! যিনি রুটি-রুজি, অন্ন-বস্ত্র, মান-ইজ্জত দওলত সবই দিলেন তাঁর জন্য দু’ফোটা অশ্রু কি খুব বেশি! তাহলে আমরা কার জন্য অপেক্ষা করছি? এখনো কেন মাওলায়ে কারিমের কুদরতি পায়ে লুটিয়ে পড়ছিনা?!
তার মানে আমরা করোনা ভাইরাস নামক খোদায়ী গজব থেকে শিক্ষা নিইনি, সতর্ক হইনি।
করোনায় বিপর্যস্ত জীবন অথচ শিক্ষা নিয়ে ভালো হওয়ার পরিবর্তে আগে যেমন চুরি করতাম এখনো সেই চোর, আগে যেমন ডাকাতি করতাম এখনো সেই ডাকাত, আগে যেমন সুদ ঘুষ খেতাম এখনো সেই গু খোর,আগে যেমন নামাজ পড়তাম না এখনো সেই বেনামাজি, আগে যেমন রোযা রাখতাম না এখনও তেমন ভোজদার, আগে যেমন মদ, গাঁজা, ফেন্সি, বাবা খেয়ে বেড়াতাম এখনও তেমন খোর, আগে যেমন গান- বাজনা, অশ্লীলতায় জড়িত ছিলাম এখনও তেমন পাপিষ্ঠ একই পাপে পাপী!
তার মানে আমরা করোনা ভাইরাস নামক খোদায়ী গজব থেকে শিক্ষা নিইনি, সতর্ক হইনি। অন্তর কত পাষান হলে খোদার আজাব দেখেও শিক্ষা বিমুখ যে থাকা যায় তা কেবল আবু জেহেলের শিষ্যদের পক্ষে সম্ভব! মহা অহংকারী ফেরাউন ও আল্লাহর আজাব দেখে মুসা নবীর উপর ঈমান আনতে চেয়েছিল অথচ মুসলিম দাবী করা আমরা?!!!
এখনো সময় আছে বেঈমানের দল, এখনো সময় আছে! ঐ দেখ মহান মালিক বড় আদর আর সোহাগ নিয়ে ডাকছে, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের উপর অবিচার করেছ(গুনাহ করে) আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়োনা; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা ঝুমার আয়াত নং ৫৩)
আহ! কত দয়াবান আমার মাওলা!! তারপরও তুমি ফিরবেনা? সত্যিই ফিরবেনা?? ফিরে এসো, প্লিজ ফিরে এসো! করজোড় অনুরোধ ফিরে এসো!! হযরত ইউনুস আ.এর জাতীর মত কৃতজ্ঞ হয়ে যাও রক্ষা পাবে। হযরত নূহ আ.এর জাতীর মত অকৃতজ্ঞ হয়োনা, অকৃতজ্ঞ হয়োনা। আল্লাহর কসম রক্ষা পাবেনা ধরা খেয়ে যাবে। আবারো বলছি ধরা খেয়ে যাবে।
ফিরে এসো! এখনো সময় আছে ফিরে এসো!! আল্লাহ পাক বড়ই দয়ালু ও মেহেরবান। জীবনে আমি আপনি তাঁর দয়ার ঝলক কত হাজারবার যে, দেখেছি তা-কি বেমালুম ভুলে গেলে চলবে? ভুলে গেলে যে জীবনের সাথে বড় অন্যায় আচরণ হবে! মাগফিরাতের শেষ বেলায় এত বড় অকৃতজ্ঞ হলে চলবে?!! এই একটা প্রশ্ন রেখেই আজকের মত বিদায়।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক