কওমী অবতার সেই সে নন্দলাল
আবদুস সালাম :: বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যখন চরম চেতনা ক্রাইসিসে জর্জরিত। দেশ জাতি জনতা যখন দেওবন্দ, দেওবন্দিয়াত ও উসুলে হাশতেগানার চেতনাকে হেলায় ভুলতে বসেছে, থানবী মাদানী শাইখুল হিন্দের রেখে যাওয়া উম্মত যখন অকুল দরিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে ঠিক তখনি হতভাগা এই জাতির অবতার হিসেবে আবির্ভূত হলেন আহা করো কি করো কি সেই ‘নন্দলাল’।
“বাহবা বাহবা বাহবা বেশ”।
যুগযুগ ধরে সরকারি ত্রাণের নৌকা পাহাড় বাইয়া মাদ্রাসায় ভিড়াতে, সুস্বাস্থ্যবান সাদা খাম হেলায় জুব্বার গহবরে অদৃশ্য করতে, সরকারি পয়সায় হাওয়াই জাহাজ চেপে আরব ভ্রমণ করতে, নানান ছুতোয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন মহাপরিচালক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ডাকে চা পান কাচ্চির নেমতন্ন খেতে, সরকারি স্বীকৃতির জননী খেতাব নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে, ইসলামী রাজনীতির নামে নোংরামি করে দেওবন্দের মান ডুবাতে, নারীর আঁচল তলে লেজুড়বৃত্তির অপরাজনীতির প্রজনন ঘটাতে নন্দলালের চেতনাদণ্ড এসব কোন কিছুতেই জেগে ওঠেনি।
যেই না কওমী মাদ্রাসার দরিদ্র সাধারণ শিক্ষকদের আর্থিক সম্মানির কথা ওঠলো, তখনই নন্দের দেওবন্দি চেতনার জাত গেলো, উসুলে হাশতেগানা চেতনা চেগিয়ে ওঠলো।
“বাহবা বাহবা বাহবা, নন্দলাল”
নন্দলালের আজকের বিবৃতিতে কওমীর ছাত্র শিক্ষকরা নতুন করে দেওবন্দী চেতনায় অভিসিক্ত হলো। না খেয়ে মরলেও নন্দলাল নামটি হাজার বছর সবাই স্মরণ রাখবে।
সমস্বরে বলবে,
“ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক চিরোকাল”
পাঠকের সুবিধার জন্যই সেই ঐহাতিসক নন্দলালের কবিতাটি নিচে উপস্থাপন করা হলো-
নন্দলাল । দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ –
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, ‘যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা’
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।’
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।’
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, ‘আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।’
তখন সকলে বলিল – ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!’
নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিসন’ হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’
লেখক : ফিকহে ইসলাম বিশেষজ্ঞ ও রম্য রচিয়তা