মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ● কালু আতাত্তাখিযূ না হুযুওয়া : এরা বলেছিল আপনি, আপনি কি আমাদের ধরে নিয়েছেন মশকরা হিসাবে? প্রশ্নবোধক শব্দ, কি? তাত্তাখিযু : ধরে নিয়েছেন। দ্বিতীয় পুরুষ। বর্তমান ও ভবিষ্যৎবাচক ক্রিয়া মুযারে’। ক্রিয়ামূল ‘আল ইত্তিখাযু’ ধরা। বানানো। ‘না’ আমাদেরকে, উত্তম পুরুষ, বহুবচন, যমীরে মুনফাসিল বিযুক্ত সর্বনাম। মাফঊল বা কর্মকারক। ‘হুযুওয়া’ মশকরারূপে। মাসদার বা ক্রিয়ামূল, মশকরা, তামাশা করা।
কালা আউযুবিল্লাহি আনআকুনা মিনাল জাহিলীন : তিনি বলেছেন, আউযুবিল্লাহ, স্মরণ নিচ্ছি আল্লাহর, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে। ‘আল জাহিলীন’ মূর্খগণ। বহুবচন, পূর্ববর্তী শব্দ ‘মিন’- এর কারণে জারযুক্ত হালতে শেষে ‘মিন’ হয়েছে। মূলত ‘আল জাহিলূন’Ñএর একবচন আল জাহিলু।
সারমর্ম
পরবর্তী ৭২ এবং ৭৩ নং আয়াতদ্বয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর যুগে বনূ ইসরাইলের জনৈক ব্যক্তিকে নিহত অবস্থায় পাওযা যায়। তার হত্যাকারী ছিল অজ্ঞাত। এমতাবস্থায় এরা পরস্পরকে দোষরোপ করছিল। শেষে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে তারা হত্যাকারী শনাক্ত করার অনুরোধ জানায়। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ওহির নির্দেশে ক্রমে তাদেরকে একটি গরু জবেহ করে নিহত ব্যক্তিকে এর একটি অঙ্গ ছোঁয়াতে আদেশ দিলেন। তৎকালীন মিসরবাসীদের কাছে গরু ছিল অত্যন্ত পবিত্র ও পূজনীয় দেবতা। এদের সাথে দীর্ঘকাল বসবাসের দরুণ বনূ ইসরাইলের আকিদা বিশ্বাসেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে তারা এই নির্দেশ পেয়ে বিস্মিত হয়। তারা বুঝতে পারছিল না হত্যাকারী শনাক্ত করার সঙ্গে গরু দেবতা জবেহ করার কি সম্পর্ক। তাই প্রথমে তারা ভাবলো গরুর মত পূজনীয় প্রাণীকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বুঝি তাদের সাথে মশকরা করছেন। এরা ভাবতে পারছিল না কোনো নবী আল্লাহর হুকুম নিয়ে মশকরা করতে পারেন। এদের মন্তব্য শোনে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর নাউযুবিল্লাহ বলা ছাড়া আর কিছুই বলার ছিলো না।
যা হোক, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর দৃঢ়তা দেখে তারা বুঝতে পারলো গরু জবেহ করা ছাড়া বিষয়টি সুরাহা করার অন্য কোনো পন্থা নেই। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টির সুরাহা হোকÑ এ বিষয়ে তারা আন্তরিক ছিলো বলে মনে হয় না। কিন্তু প্রশ্ন করে তারা ফেঁসে গিয়েছিলো। তাই তারা তাদের অভ্যাসমতো টালবাহানা করতে থাকে এবং গরুটি সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তুলে ধোঁয়াসা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়। তারা যতই প্রশ্ন তুলছিল ততই বিষয়টিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছিল।
● অক্টোবর ২০১৭, মাসিক পাথেয়, কুরআনের আলো