কুরবানী সংশ্লিষ্ট মাসআলা | শেষ পর্ব

কুরবানী সংশ্লিষ্ট মাসআলা | শেষ পর্ব

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দুটি উৎসবের অন্যতম একটি। এই ঈদে কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে- ‘যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে অথচ সে কুরবানী করেনি সেজন্য আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ – ৩১২৩; মুস্তাদরাকে হাকেম – ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫]

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর পাঠকদের জন্য কুরবানী সংশ্লিষ্ট শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক কিছু মাসাআলা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন ‘আল জামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা’ হারিনালের শিক্ষক মুফতি আব্দুল মুহাইমিন। আজ রয়েছে এই আয়োজনের শেষ পর্ব-

১২. তিন দিনের বেশি গোশত সংরক্ষণ করা

মাসআলা: মদীনায় মুসলমানদের প্রথম যুগে খাদ্যের সংকট ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ রাখতে নিষেধ করেছিলেন। পরে যখন অভাব কমে গেল, তখন আবার সংরক্ষণ করে রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত জাবির রা. বর্ণনা করেনঃ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর (অবকাশ দিয়ে) বললেন, খাও, পাথেয় হিসেবে সঙ্গে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখ। [সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭২]

১৩. কর্মচারী-কাজের লোকদের কুরবানীর গোশত দেওয়া

মাসআলা: অনেকে কুরবানী পশুর কর্মচারী অথবা কাজের লোকদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া ও খাওয়ানোকে নাজায়েয মনে করেন। হ্যাঁ, তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত দেওয়া বৈধ নয়। কিন্তু তাদেরকে পারিশ্রমিক হিসাবে না দিয়ে হাদিয়া দিলে কোন অসুবিধা নেই। বরং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের মত এদেরকেও কুরবানীর গোশত দেওয়া উচিত। তবে অবশ্যই তার নির্ধারিত পারিশ্রমিক থেকে ভিন্নভাবে দিতে হবে।

হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা. বলেনঃ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার (কুরবানীর উটের) আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন। তিনি কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, আচ্ছাদনের কাপড় ছদকা করতে আদেশ করেন এবং এর কোনো অংশ কসাইকে দিতে নিষেধ করেন। তিনি বলেছেন, আমি তাকে (তার পারিশ্রমিক) নিজের পক্ষ থেকে দিব। [সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭১৬]

১৪. কুরবানীর দিনগুলোতে অন্য পশু জবাই করা

মাসআলা: কুরবানীর তিন দিন কুরবানীর পশু ছাড়া অন্য কোন পশু, হাঁস-মুরগী বা গরু-ছাগল ইত্যাদি জবাই করা যাবে না – এটি একটি ভুল ধারণা। তবে কুরবানীর নিয়ত-উদ্দেশ্যে হাঁস, মুরগী ইত্যাদি (যেগুলো দ্বারা কুরবানী করা শুদ্ধ নয়) জবাই করা ধনী-গরীব সকলের জন্যই নাজায়েয।

গোশতের প্রয়োজনে বছরের অন্যান্য দিনগুলোর মতোই কুরবানীর দিনগুলোতে পশু জবাই করতে কোন সমস্যা নেই। [খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪; বাযযাযিয়া ৬/২৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩; আলমগীরী ৫/৩০০]

অন্যান্য পর্বগুলো পড়ুনঃ 

  • পঞ্চম পর্ব
    জবাইয়ের আগে চামড়া বিক্রি | পশু কেনার পর যদি ত্রুটি দেখা দেয় | কুরবানীর গােশত বিধর্মীদের দেওয়া

  • চতুর্থ পর্ব
    শরিকি কুরবানীর গােস্ত ওজন না করা
  • তৃতীয় পর্ব
    কুরবানী দেওয়ার নিয়তে পশু কিনে পরে শরিক নেওয়া
  • দ্বিতীয় পর্ব
    নিজের ওয়াজিব কুরবানী না দিয়ে মা-বাবার কুরবানী দেওয়া
  • প্রথম পর্ব
    বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী | কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী না করতে পারলে করণীয় 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *