১৮ই আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা ভাদ্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১৯শে মহর্রম, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশের নৌপথ ও সড়কপথের দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পান না। আইনি জটিলতা ও মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত হন তারা। এসব কারণে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মামলা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
সোমবার ৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নৌপথ ও সড়কপথে অবহেলাজনিত মৃতু্য : ক্ষতিপূরণ ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলোচকদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।
বাংলাদেশ লিগ্যালএইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) আয়োজিত এ সেমিনারে আইনি দীর্ঘসূত্রতার কথা তুলে ধরে আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত বলেন, ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনে যাওয়ার পথে ২০০৩ সালের ৮ জুলাই চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় এমভি নাসরিন-১ লঞ্চটি ডুবে যায়। ঐ ঘটনায় নিহত হন ১১০ জন, ১৯৯ জন নিখোঁজ থাকেন। ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ব্লাস্ট একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন। দুর্ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৬ সালের ২ ফেব্র‚য়ারি নিম্ন আদালত ঐ মামলার রায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন।
ঐ আদেশের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএসহ বিবাদীপক্ষ ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করে। ঐ আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে ২০১৭ তারিখে রুলটি খারিজ করে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ রায়ের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও হতাহত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হন। কিন্তু দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও ভুক্তভোগী কেউ ক্ষতিপূরণ পাননি।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের ফলে যে আইনটি হয়, আজও সেটি কার্যকর হয়নি। এখন আবার সংশোধনের দাবি জানানো হচ্ছে। বিভিন্ন মামলায় দেখা যাচ্ছে, কোর্টের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন, কেন রায় বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সড়ক ও নৌপথে যে অরাজকতা তার জন্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্হিতি বিবেচনায় আনতে হয়। সাধারণ মানুষ কোনো প্রতিকার পাবে না, এটা ধরেই নিয়েছে। অধিকার কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ ও হতাশা চলে এসেছে। বলা হয়, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি, তাহলে আইনের এই অবস্হা কেন। পরিবহন ব্যবস্হা দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গেছে। তবে রাষ্ট্র চাইলে আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বিচারপতি নিজামুল হকের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সাংবাদিক জ ই মামুন, ব্লাস্টের গবেষণা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান সিদ্দিকী প্রমুখ।