পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশে শুধু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথের সদস্যসচিব ডা. গোলাম রাব্বানী বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনারে এ তথ্য জানান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বাংলাদেশের বর্তমান জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
লিখিত বক্তব্যে ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ, দীর্ঘায়িত জীবন ও স্বাস্থ্য—এই তিনটিই জনস্বাস্থ্যের মৌলিক উপাদান, যা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়।
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে আমরা কি বলতে পারি, এই দেশের নাগরিকরা স্বাস্থ্যকে উপভোগ করতে পারছি? আমরা কি এই অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করেছি? মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার কথা উল্লেখ না করে শুধু শারীরিকভাবেও কি আমরা সুস্থ?’
দেশে টেকসই অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সুস্বাস্থ্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন গোলাম রাব্বানী। দেশের যেকোনো উন্নয়নের জন্য পরিবেশের প্রধান উপাদানগুলো যেমন—বায়ু, পানি ও মাটিকে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে এই চিকিৎসক জানান।
ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ জনস্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হিসেবে নিরাপদ পানি সংকট, অনিরাপদ খাদ্য, সংক্রামক ব্যাধি, করোনা পরিস্থিতি, পুষ্টি সমস্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, পানি-বায়ু-শব্দদূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দায়ী করছে।
নিরাপদ পানি সংকটের কথা উল্লেখ করে গোলাম রাব্বানী আরো বলেন, গত ২৬ মার্চ প্রায় এক হাজার ২০০ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে আইসিডিডিআরবিতে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০০। ২০২১ সালের মার্চে হাসপাতালটিতে এক দিনে ৭৫০ জনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই বছর হাসপাতালটিতে ১৩ মার্চ থেকে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গোলাম রাব্বানী বলেন, বাংলাদেশে ৪১ শতাংশের বেশি মানুষ দূষিত পানি পান করে থাকে। দেশে প্রতি পাঁচ পরিবারের মধ্যে দুটি, অর্থাৎ জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ, রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসে দূষিত উৎসর পানি পান করে। এ ছাড়া জীবাণু, দূষণসহ পানি পান করা লোকের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।
ইউনিসেফের বরাত দিয়ে ডা. রাব্বানী বলেন, ৮৩ শতাংশ শহুরে আর ৭২ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাঙ্গণে উন্নত পানির ব্যবস্থা আছে। বায়ুদূষণের প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, বায়ুদূষণের ফলে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি হয়। একই কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, গ্রাম পর্যায়ে সেবা পৌঁছানোর জন্য পুরো স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে। মানুষ যেন সহজে স্বাস্থ্যসেবা পায়। এ ছাড়া জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হলে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আবু সাঈদ, ডা. ফয়জুল হাকিম লালা, সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতারসহ সংগঠনটির সদস্যরা বক্তব্য দেন।