পাথেয় রিপোর্ট : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের মরিচপাড়া গ্রামের অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর পর এলাকায় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ জনগণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্ত পরিবারের চারপাশে এক কিলোমিটার জায়গায় মানুষ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই এলাকার একটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিরাপত্তার জন্য এলাকার মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, ঢাকা থেকে আসা মেডিকেল টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে যদি এলাকায় মানুষ চলাচলে নিরাপদ মনে করেন, তাহলেই চলাচলের নিষেধাজ্ঞা আদেশ তুলে নেয়া হবে।
ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার ঢাকা থেকে রংপুরে এসেছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি বিশেষজ্ঞ দল। এছাড়া এলাকায় সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য ঘটনাস্থলে একটি মেডিকেল টিম বসানোর পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আর এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে ২০০টি বিশেষ মুখোশ।
প্রথমে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হন ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামের ফজর আলীর ছেলে আবু তাহের (৫৫)। ৯ ফেব্রুয়ারি আবু তাহের মারা যান। তার মৃত্যুর ১১ দিন পর একই রোগে আক্রান্ত হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান আবু তাহেরের জামাতা হাবিবুর রহমান (৩৫) ও স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫)।
এর দুইদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি আবু তাহেরের দুই ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) ও মেহেদী হাসান (২৭) অসুস্থ হলে রংপুর হাসপাতালে নেয়ার পথে ইউসুফ সকালে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টায় মৃত্যুবরণ করেন মেহেদী। এভাবে মানুষের মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়া দেখে আতঙ্কিত হয়ে যায় ওই গ্রামের সাধারণ মানুষ। গ্রামের অনেক পরিবার বাড়িতে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া শুরু করেছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর, তার কন্যাসন্তান, শ্বশুর রবিউল ইসলাম, আত্মীয় সাবেক ইউপি সদস্য, মাসুদ রানা নামে এক প্রতিবেশী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মোতালেব চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন শাহজাহান নেওয়াজের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রাম পরিদর্শন করেছেন এবং গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, কী কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আপাতত এটাকে অজ্ঞাত রোগ বলছি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এটি এনফালাটিজ রোগ হতে পারে। রোগ নির্ণয়ে কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তিনি বলেন, অজ্ঞাত রোগটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে আসবেন। আশা করি দুই এক দিনের মধ্যে অজ্ঞাত রোগের কারণ জানা যাবে।