- আমিনুল ইসলাম কাসেমী
মিস্টার চার্লস ডারউইন বির্বতনবাদের প্রবক্তা হলেও তিনি কখনো এর উদাহরণ দিয়ে যেতে পারেনি। শুধু বলেই গেছেন। তার মতে, বির্বতন হতে সময় লাগে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর। উদাহরণ নয়, শুধু তার এই ভ্রান্ত চিন্তাচেতনাই। আর সেই ভ্রান্ত চিন্তাচেতনা কোন মুসলিম বিশ্বাস করতে পারেনা। সুতরাং জোরপূর্বক পাঠ্যবইতে ডারউনের মতবাদ পড়ানো মানুষকে মহান আল্লাহর উপর থেকে আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়।
আজ পর্যন্ত কোনো গরু থেকে ছাগল হয়নি, ছাগল থেকে হাঁস বা মুরগি, বা মুরগি থেকে বির্বতিত হয়ে গরু-মহিষ হয়ে যায়নি। বরং গরু থেকে গরু হয় আর ছাগল থেকে ছাগল। হাঁস থেকে হাঁস। মুরগি থেকে মুরগি। এ সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু তারপরেও কিছু মানুষ মহান আল্লাহর উপরে আস্থা ও বিশ্বাস না রেখে ডারউনের ভ্রান্ত ধারণাকে গ্রহণ করতে চায়।
বির্ববতনবাদ হল এমন এক তত্ত্ব, যেটা এককোষী অণুজীব থেকে এলোমেলো পরিবর্বতন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু সেই অণুজীবের সৃষ্টির্কতা কে? সেটাকে তারা স্বীকার করতে চায় না। এখানেই হল সমস্যা। আপনি বিমান আবিস্কার করলেন, এখানে নিজেদের গবেষণাকেই প্রাধান্য দিলেন। কিন্তু যেসব মৌলিক পদার্থ দিয়ে বিমান বানানো হয়েছে, সেসব কোথায় পেয়েছেন? লোহা কোথায় পেয়েছেন? আরো যেসব জিনিসপত্র ব্যবহার হয়েছে সেসব কোথায় পেয়েছেন, ঐগুলোর কাঁচামাল কোথা থেকে এসেছে? আজ পর্যন্ত কেউ লোহা বানাতে পেরেছে? সবই তো মহান আল্লাহর দান। তিনি বানিয়েছেন। এরকম কোন এককোষী অনুজীব থেকে সৃষ্টি হচ্ছে, তাহলে সেই অনুজীবের সৃষ্টিকর্তা কে? এখানেই কিন্তু তারা নিরব।
বর্তমানে বিভিন্ন মিডিয়াতে বির্বতনবাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়। তারা মিস্টার চার্লস ডারউনের একহাজার বছর আগে মুসলিম বিজ্ঞানী আল্লামা আল জাহিজ-এর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, তিনি নাকি বির্বতনবাদের পক্ষে ছিলেন। এভাবে মুসলিমদের মাঝে এমন প্রচার দেওয়া হচ্ছে, যাতে মুসলমানমানদের সর্মথন আদায় করা যায়। আসলে বিষয়টা তাহকিক করে দেখলে একথা স্পষ্ট হয় যে, আল জাহিজ বির্বতনবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। বরং আল জাহিজের বক্তব্যকে কাঁটছাট করে এবং তাঁর আরবী ইবারত এর অনুবাদ যথাযথ না করে দুরভসন্ধিমুলক অনুবাদ করা হয়েছে।
মূলত আল জাহিজ বলতে চান, বিবর্বতন হতে পারে, যেমন কোন মানুষ ব্যায়াম করলে তার শরীর শুকিয়ে বিবর্তিত হয়ে যায়। ১২০ কেজি ওজন থেকে ৬০ কেজি হতে পারে। আগেকার দিনের মানুষ অনেক লম্বা ছিল, কিন্তু কালক্রমে মানুষ এখন খাটো। কোন প্রাণীর ঠোঁট অনেক লম্বা থাকে। কিন্তু বছরের পর বছর যাওয়ার পরে সেটা ছোট দেখা যায়। তাই বলে মানুষ পরির্ববতন হয়ে গরু–ছাগল হয়ে যায় না। বা বানর থেকে রূপান্তরিত হয়ে কোন মানুষ হয় না। মাছ থেকে ডাইনোসর আর ডাইনোসর থেকে পাখিতে রূপান্তরিত হয়না। আজ পর্যন্ত কেউ এর দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি। আল জাহিজের বক্তব্যটি এমনই ছিল। কিন্তু ডারউনের চিন্তাচেতনায় বিশ্বাসীগণ আল জাহিজের বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে, যাতে মুসলমানগণ নমনীয় হয়ে ডারউনের মতবাদ গ্রহণ করে। নিঃসন্দেহে এটা এক গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
বির্বতনবাদ নিয়ে ইসলাম কী বলে?
ইসলামের আকিদা-বিশ্বাস হলো সব কিছু আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। আসমান-জমিন এবং এর মধ্যে যাকিছু আছে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষকে আল্লাহ তাআলা বানিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ওয়ামা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনছা ইল্লা লিয়াবুদু’ অর্থাৎ, ‘আমি জিন এবং মানুষকে বানিয়েছি ইবাদতের জন্য।’ (সূরা যুররিয়াত : ৫৬)
কুরআনুল কারীমের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি কি তোমাদের নির্দেশ দেইনি যে তোমরা শয়তানের ইবাদত করবেনা, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা ইয়াসিন : ৬০)
মানবজাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম থেকে। আল্লাহ মানুষকে ‘আদম সন্তান’ বলে সম্বোধন করেছেন। বানরের সন্তান বলে আল্লাহ ডাক দেননি। মানুষ যদি বানরের থেকে হতো তাহলে আল্লাহ বানরের সন্তান বলে সম্বোধন করতেন। মোটকথা, পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে এবং আসবে সবাই আদম ও হাওয়ার সন্তান। মানুষ এবং এ পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। এগুলো এমনি এমনি হয়নি, বা কোন এককোষী অণুজীব থেকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এসবের সৃষ্টি নয়।
প্রাণীকুলে যা কিছু, সেটাও আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। পশু-পাখি, জীব-জন্তু তাঁর বানানো।
‘ইয়াছআলুনুকা আনির রুহ…’ —‘আপনাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, বলুন সেটা আমার প্রভুর আদেশঘটিত এবং তোমাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে সামান্যই।’ (সূরা বনী ইসরাইল : ৮৫)
এভাবে আসমান জমিনে যা কিছু রয়েছে এর সব কিছু আল্লাহ তাআলা বানিয়েছেন। জীব-জড় সব কিছু তাঁরই সৃষ্টি। ইরশাদ হচ্ছে, ‘লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ’ অর্থাৎ, ‘আকাশ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই সেই মহান প্রতিপালকের সৃষ্টি।’ ( সূরা আলে ইমরান : ২৫৫)
যে সব জিনিসে রুহ আছে আর যাতে রুহ নেই সবই আল্লাহর সৃষ্টি। যেসব জিনিস আমরা দেখি আর না দেখি সব কিছু তিনিই, আল্লাহ-ই বানিয়েছেন।
এজন্য মুসলিমদের আকিদা-বিশ্বাস স্পষ্ট। এতে কোন খুঁত নেই। মহান আল্লাহ তাআলাই মানুষ-জিন-প্রাণীজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং মিস্টার চালর্স ডারউন সাহেবের ভ্রান্ত চিন্তাচেতনা প্রত্যাখ্যাত।
ডারউন নিজেই তার গবেষণার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলো। সে নিজে এটার প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সে নিজের ভ্রষ্টতা মানুষকে বোঝাতে চেয়েছে। সেই অস্পষ্ট এবং ভ্রষ্টতা মুসলিমদের মাঝে প্রচার-প্রসার ঘটানো বড্ড বেমানান, ইসলামী আকিদায় বিশ্বাসীদের ঈমান ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু নয়।
যেদেশে ৯২ ভাগ মুসলিম বাস করে, যেখানে মানুষের ঘুম ভাঙে আজানের ধ্বনিতে, যে দেশে হাজার হাজার মসজিদ-মাদরাসা, যেখানে লক্ষ লক্ষ আলেম-উলামাদের বসবাস, সেদেশে একজন ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাসী মানুষের মতবাদ স্কুলের পাঠ্যবইয়ে থাকতে পারেনা। স্কুলের পাঠ্যবই থেকে সেগুলো সরিয়ে ভাল কিছু সংযোজন করা হোক।
আমাদের সংবিধানে রয়েছে মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস। সেখানে ডারউনের থিউরী কী ভাবে চলে? কোমলমতি শিশুদের চিন্তা–বিশ্বাসে ফাটল ধরানো নিন্দনীয়। ছোটবেলার শিক্ষা পাথরে নকশা আঁকার মতো, যেটা সহজেই মুছে যায়না। আমাদের সন্তানদের ভ্রান্ত মতবাদ শিক্ষা দিলে সেটা তাদের অন্তরে অঙ্কিত হয়ে থাকবে। অদূর ভবিষ্যতে এ জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট
আরও পড়ুনঃ ফেসবুক-ইউটিউবের মুনাফিক চক্র থেকে সাবধান | আমিনুল ইসলাম কাসেমী
মতামত বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় লেখকের