পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তাজমহলে নামাজ পড়া নিয়ে বিতর্ক ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কিছুদিন আগে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (এএসআই) এখন শুক্রবার বাদে তাজমহলের মসজিদে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করেছে। আর শুক্রবারের নামাজে শুধু স্থানীয়রাই অংশ নিতে পারবে বলে জানায়।
তাজমহল ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। নির্মাণের পর থেকেই তাজমহল বহু পর্যটককে আকর্ষিত করেছে। এমনকি তাজমহলের দক্ষিণ পাশে ছোট শহর তাজ গঞ্জি বা মুমতাজাবাদ আসলে গড়ে তোলা হয়েছিল পর্যটকদের জন্য সরাইখানা ও বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে যাতে পর্যটক এবং কারিগরদের চাহিদা পূরণ হয়।
তাজমহলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ পর্যটনে আসে। মুসলমানরা তাজমহলে নামাজ আদায় করে থাকে। কিন্তু আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া তাজমহলে নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তাজমহলে নামাজ নিষিদ্ধ নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও নিজেকে নাস্তিক বলে দাবি করেন তিনি। ইসলামের বিরুদ্ধে মুখ খোলার কারণে বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়েছিল লজ্জার লেখিকাকে।
আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সিদ্ধান্ত অনুসারে, শুধুমাত্র শুক্রবার এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে না। সেদিন ওই মসজিদে নামাজে কোনও বাধা থাকছে না মুসলিম ধর্মাবিলম্বীদের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই কেন এমন সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, তাজমহল নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বিতর্কের ঝড় উঠতে পারে। এই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত তাঁদের নয়। বরং তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলবৎ করলেন।
এই বিষয়ে তলসিমা নাসরিন নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন নিজের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে। তিনি বলেছেন, কেবলমাত্র জুম্মাবার বা শুক্রবার কেন, তাজমহলে সম্পূর্ণরূপে নামাজ নিষিদ্ধ করার দাবি করেছেন তিনি। তসলিমা লিখেছেন, ‘তাজমহলে কখনোই নামাজ পাঠ উচিত নয়। শুক্রবারেও নয়।’
তলসিমা নাসরিন আরও লিখেছেন, তাজমহল একটি দরগা, ভালোবাসার প্রতীক। সপ্তম আশ্চর্যের একটি। জাতিসংঘের এই ঐতিহ্যশালী জায়গায় প্রতি বছর বহু পর্যটক আসেন। তাজমহল সংলগ্ন মসজিদগুলো এখন স্মৃতিস্তম্ভ বা মিউজিয়াম হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তসলিমা নাসরিন। তাজমহলের ওই মসজিদের ইমাম সাদিক আলি ও অন্য কর্মীদেরও শুক্রবার ছাড়া অন্যদিন নামাজে নিষেধ করা হয়েছে আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে। মসজিদের ইমাম ও তাঁর পরিবার কয়েক দশক ধরে সেখানে নামাজ পড়াচ্ছেন। এর জন্য তাঁরা মাসে মাত্র ১৫ টাকা করে নেন। সাদিক আলি এএসআই-এর এই সিদ্ধান্তে অবাক।
তাজমহলের ইন্তেজামিয়া কমিটির সভাপতি সৈয়দ ইব্রাহিম হুসেন জাইদি এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশের সরকার মুসলিমবিরোধী। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা নামাজের এই রীতি বন্ধ হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি।