তাদের উচ্ছৃঙ্খল ব্যবহার আর কতদিন?

তাদের উচ্ছৃঙ্খল ব্যবহার আর কতদিন?

  • আব্দুর রহমান আল হাসান

আমাদের দেশে প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়।’ কেউ যদি কারো সাথে রূক্ষ আচরণে কথা বলে তাহলে স্বভাবগতই তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ধরা হয়। একজন ব্যক্তি অন্য একজনের সাথে কিভাবে কথা বলবে, কিভাবে কমিউনিকেশন করবে, এটাও কিন্তু একটা শেখার বিষয়। আজকের ঘটনাটাই বলি। সকাল ৭ টায় কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলাম। গন্তব্য ফার্মগেট। আমাদের মৌচাকের এদিক থেকে ফার্মগেট যাওয়ার একমাত্র সহজ উপায়, বাস। এই রুটে ‘লাব্বাইক’ ও ‘লাভলী’ নামে দুইটা বাস চলে। সকালবেলায় এমনিতেই বাসে অনেক ভীর থাকে।

সে সময় অফিস-আদালত, কর্মজীবি, শ্রমজীবি ও স্টুডেন্টরা বের হয় তাদের গন্তব্যে পৌঁছার জন্য। তাই এই সময়টায় বাসে সীট পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। সাধারণত সীট তেমন কোনোদিন পাইনি। আজও বরাবরের মতো দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম। সাধারণত এই বাসগুলো লোকাল বাসই হয়ে থাকে। এরা রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী উঠায় আবার নামায়। বিশেষ করে তারা স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থামায়। কারণ, এখানে অনেকেই নামে।

মৌচাকের একটু সামনেই হলো, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ। বাসে একজন নারী যাত্রী ছিলেন সীটে বসা। তিনি উক্ত কলেজের সামনে নামবেন। তিনি কলেজের সামনে আসার আগেই বললেন, আমি নামবো। হেলপার এটা শুনেও না শোনার ভান করে রইলো। ড্রাইভার গাড়ির স্পীড আরো বাড়িয়ে দিল। মেয়েটি বারবার বলছে, আমি নামবো আমি নামবো। কে শোনে কার কথা। অবশেষে তাকে নামানো হলো, ওয়ারলেসের সামনে। এতটা দূরে গাড়ি চলে আসায় উক্ত নারী যাত্রি স্বভাবগত একটু রেগে যান। এতে হেলপার তাকে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দেয় এবং তাকে মারতে যায়। এদিকে বাস টান দিয়ে দেয়ার কারণে সে বাসে উঠে পড়ে।

এরপর বাসে দাঁড়িয়ে সে বলতে লাগলো, ‘মহিলা হওয়ায় ছেড়ে দিলাম। এরা যে ক্যান বাসে উঠে?’ এই হলো লাব্বাইক বাসের হেলপারের আচরণ। এরপর বাসটি মগবাজার মোড়ের দিকে যায়। মগবাজার মোড়ের অপরপাশে সাধারণত বাস থাকে যাত্রী উঠানামা করার জন্য। সেখানে আগে থেকেই একটা ‘লাভলি’ বাস দাঁড়িয়ে ছিল। ‘লাব্বাইক’ বাসটি গিয়ে ‘লাভলী’ বাসের ডানপাশে দাঁড়ায়। যাত্রীরা তো সব বামদিক থেকে উঠে। তাই সে লাভলি বাসের গাঁ ঘেষে স্পীড দ্বিগুণ করে সামনে এগিয়ে যায়। এতে বাসে বাসে সংঘর্ষ হয়। যদিও কোনো যাত্রীর কিছু হয়নি। কিন্তু এমন কাজে তো জীবন হুমকির মুখে চলে যায়।

এই হলো, আজকে ‘লাব্বাইক’ বাসের উগ্র হেলপার ও ড্রাইভারের কাহিনী। বাস চালক ও হেলপার যদি এমন অনৈতিক আচরণ করে, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় উক্ত বাস মালিক কোন হিসেবে তাদের নিয়োগ দিল। বাসে নারীরা প্রায় সময় হেনস্থার শিকার হয় এসব উগ্র ও অনৈতিক হেলপারদের নিকট। ড্রাইভারদের গাড়ি চালানো দেখলে মনে হয়, তারা বিমান চালাচ্ছে। তাদের নিকট মানুষের নিরাপত্তা নেই। তারা স্পীডের গাড়ি চালিয়েই যেন শান্তি পায়। দেশে কোনো উধ্বর্তন কর্মকর্তা কি আছেন, যিনি মানুষকে এমন বিপদ থেকে রক্ষা করবেন?

আজ যদি একজন নারী তাদের নিকট হেনস্থার শিকার হয়, তাদের অদূর ভবিষ্যতে আপনার কোনো আত্মীয় যে হেনস্থার শিকার হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আজ যদি বাসে বাসে সংঘর্ষ লেগে কোনো যাত্রী আহত বা নিহত হয় তাহলে এই দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এই বাসচালক ও হেলপারদের মধ্যে অনেক ভালো ব্যক্তিও রয়েছেন। তাদেরকে আমরা সম্মান করি। তারা প্রতিদিন আমাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা কর্মস্থলে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা এমন সব চালক ও হেলপারদের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যারা মানুষকে মানুষ মনে করে না। যাদের নিকট মানুষের জীবন নিরাপত্তা নেই। কেউ কি এগিয়ে আসবেন, এই সমাজের এমন পট পরিবর্তনে?

  • abdurrahmanalhasan@yahoo.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *