পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ভোটে জয়ী হয়ে ফের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে দেড় কোটি নতুন কর্মসস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এছাড়া অনলাইন শ্রমবাজারের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “২০৪১ সালে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স হবে ৩০ বছরের কম; ১৫-২৯ বছর বয়সের তরুণের সংখ্যা কম বেশি ২ কোটি। বাংলাদেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগ এই তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০.৬% থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩% এ নামিয়ে আনা হবে। নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিত তরুণ ও যুবসমাজের জন্য যথোপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে।”
“এছাড়া আগামী ৫ বছরে ২ লাখ তরুণদের মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা “যুব ঋণ” বিতরণ এবং ২ লাখ ৫০ হাজার তরুণকে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “দেশে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি মানুষ শ্রম শক্তিতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। শিল্প খাতের বিকাশ এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এদের প্রত্যেকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য। কর্ম সংস্থানের জন্য সবচেয়ে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা। এ খাতের বাধা সমূহ দূর, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও বিদেশি মানবসম্পদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এই খাতকে আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও গতিশীল করে তোলা হবে।”
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক। “স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান স্লোগানে” দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছে ক্ষমতাসীন দলটি।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে “দিনবদলের সনদ” দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ছিল দলটির। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের শিরোনাম ছিল “এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ”। আর সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ইশতেহারের শিরোনাম ছিল “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ”।
আগামী ৭ জানুয়ারি হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট। ভোটের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে ১৫ নভেম্বরের পর। ওইদিন দ্বাদশ সংসদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন তারা।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের ভোটে মাঠে রয়েছে ২৭টি দল। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনি হাওয়া বইয়ে দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানতে ক্ষমতাসীন দল নিজ দলের নেতাদের “স্বতন্ত্র” হওয়ার অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। ফলে অনেক স্থানে নৌকার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এই স্বতন্ত্রদের।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর এখন পর্যন্ত ২৭টি দলের ১৫১৩ জন ও স্বতন্ত্র ৩৮২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। এই ১,৮৯৫ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। আদালতের আদেশে আরও কিছু প্রার্থী যুক্ত হতে পারেন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ২৬৩ জন; এর বাইরে আওয়ামী লীগের প্রতীক ব্যবহার করছেন শরিকদলের ৬ প্রার্থী।
টানা তিনবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি দলের অংশগ্রহণে হয়েছিল ভোট। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর হওয়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪% ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোট পায় ৩২.৫০% আর জাতীয় পার্টি পায় ৭.০৪% ভোট।
দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ১২টি দল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে এই নির্বাচনে ৭২.১৪% ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষে ৭% ভোটার রায় দেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৯টি দল। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট পড়ে ৭৬.৮০%, ধানের শীষে ১৩.৫১% আর লাঙ্গলে ৫.৩৭% ভোট পড়ে। পরে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আর সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি।