নভেল করোনাকে মহামারী বলছে ডব্লিউএইচও
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিচালক মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেছেন, আমাদের এখনকার মূল্যায়ন হচ্ছে, কভিড-১৯ রোগকে মহামারী বলা যেতে পারে। তা (করোনাভাইরাস) যেভাবে, যেহারে ছড়াচ্ছে, তাতে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নভেল করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। প্রায় সব মহাদেশের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে ১ লাখের বেশি মানুষকে আক্রান্ত এবং ৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হওয়ায় কভিড-১৯ রোগকে এখন মহামারী বলছে ।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার জেনিভায় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলেন একথা বলেন ।
গত ডিসেম্বরের একবারে শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, তার ফলে সৃষ্ট রোগকে পরে কভিড-১৯ নাম দেয় ডব্লিউএইচও। তার আগে ওই ভাইরাস নভেল করোনাভাইরাস নামে পরিচিতি পায়।
উৎসস্থল উহান থেকে দ্রুতই চীনের অন্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ছড়াতে থাকে অন্য দেশগুলোতেও।
ফেব্রুয়ারি নাগাদ নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এন্টার্কটিকা বাদে বিশ্বের সব মহাদেশে।
বুধবার নাগাদ বিশ্বের ১২১টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে নভেল করোনাভাইরাস, আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৯ জন।
কভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৫৮ জনই চীনের নাগরিক।
শুরুতে চীনের ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও এখন ইউরোপের দেশগুলোতে দ্রুত ছড়াচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। ইতালিতে ৮২৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ফ্রান্স, স্পেনসহ অন্য দেশগুলোতে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ইতালির জনবহুল সড়কও এখন এমন নিরব। ছবি: রয়টার্সকরোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ইতালির জনবহুল সড়কও এখন এমন নিরব। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের দ্রুত ছড়ানোয় গত ৩০ জানুয়ারিই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছিল ডব্লিউএইচও।
এখন মহামারীর মতো বলার কারণ হিসেবে সংস্থাটির কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেন, করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগকে মহামারী ঘোষণার মতো ক্যাটাগরি ডব্লিউএইচওর নেই। ডব্লিউএইচও ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপকে মহামারী ঘোষণা করতে পারে, কিন্তু কভিড-১৯ ফ্লু জাতীয় রোগের মধ্যে পড়ে না।
ডব্লিউএইচ কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারী শব্দটি আসলে পরিস্থিতি বোঝানোর একটি কথা মাত্র।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায়, যখন কোনো রোগ একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমিত হয়, তখন তাকে ‘প্যানডেমিক’ বা মহামারী বলা হয়। একে বলা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
তার আগের ধাপকে বলা হয় ‘এপিডেমিক’; যখন কোনো রোগ বড় কোনো ভৌগলিক এলাকা নিয়ে ছড়ায়. তখন অবস্থা বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
তবে কোনো রোগের বিস্তারকে কখন প্যানডেমিক, কখন এপিডেমিক বলা যাবে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই।
আবার অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর এই শব্দবন্ধগুলো নিয়েও রয়েছে আপত্তি। তাদের ভাষ্য, এই শব্দগুলো যতটা না স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।
তেদ্রোস বলেন, একে মহামারী বলার মানে এই নয় যে ডব্লিউএইচও আগে যে পরামর্শ দিয়ে আসছিল, তা বদলে ফেলতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না দেখে আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডব্লিউএইচওর নির্বাহী প্রধান।
“আমরা প্রতিদিনই দেশগুলোকে বলে আসছি, ব্যবস্থা নিন জরুরি ভিত্তিতে, দ্রুত,” বলেন তিনি। তবে সে অনুযায়ী সব দেশের সাড়া মিলছে না বলে হতাশার সুর ফুটে ওঠে তেদ্রোসের কণ্ঠে।