নাস্তিক্যবাদই কি দেশের প্রধান সমস্যা?

নাস্তিক্যবাদই কি দেশের প্রধান সমস্যা?

নাস্তিক্যবাদই কি দেশের প্রধান সমস্যা?

ফয়জুল্লাহ আমান ❑ কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি। খুব ঘটা করে একজন মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নাস্তিক হয়ে গেল। ঘোষণা দিয়ে নাস্তিক্যবাদ গ্রহণ করল সে। পবিত্র কোরআনের ভুল ধরা শুরু করল। তার কথা ছড়িয়ে পড়ল ফেইসবুক ও ইউটিউবে। একজন আলেমের নাস্তিক হয়ে যাবার বিষয় সমাজে সাড়া ফেলার মত ঘটনাই বটে।

মুফতী আব্দুল্লাহ মাসউদ নামের সেই ছেলেটির বিষয়ে প্রথমে কিন্তু কোনো সন্দেহ হয়নি। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে তাতে তার বিষয়টি বেশ সন্দেহের সৃষ্টি করছে। এর আগেও কয়েকজন ঘোষণা দিয়ে নাস্তিক হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তারা এমন ভাব দেখাচ্ছে যে তারা নাস্তিক হবার কারণে ইউরোপ আমেরিকার আনুকূল্য পাচ্ছে। খুব ভি আইপি জীবন যাপন করছে। তারপর ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বেড়াতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মূলত ঘটনাটা কী? আসলেই কি নাস্তিক দিয়ে ভরে গেছে বাংলাদেশ? পথে ঘাটে অলিতে গলিতে গেলেই কি নাস্তিক দেখা যায়? নাস্তিক্যবাদের বিরোধিতার নামে একটা গোষ্ঠি দেশের ভেতর সব সময় অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করে যাচ্ছে। এদের খুব কৌশলি মনে হয়। সুকৌশলে এরা বাঙালি মুসলমানের মাথায় কাঠাল ভেঙে খেতে চায়। কারণ এরা জানে বাঙালি স্বভাবগতভাবে ধর্মপ্রাণ। তাই ধর্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে বলে গুজব রটানো গেলে অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে তাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে ইচ্ছে মত নানান এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা যাবে। গুজবকে সমাজে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অর্থ ব্যয় করে কিছু লোককে নাস্তিক সাজানোর মত জঘন্য এক কাজ করছে এরা।

ধর্ম অবমাননা থেকে কী করে বাঁচা যায় কেবল এই এক দুশ্চিন্তায় সময় কাটে ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানের।

তারপর এসব নাস্তিকদের বিরোধিতা করে নিজেদের বিদ্যা বুদ্ধি জাহির করে নিজেদের ধর্মপ্রাণ হবার প্রমাণ দেয় চক্রান্তকারী গোষ্ঠি। এযেন সাপ হইয়া দংশন করো ওঝা হইয়া ঝাড়-এর মত অবস্থা। সাথে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা জামাত শিবির বা দেশ বিরোধি অন্য শক্তি নয় বরং কৃত্রিম এ ধর্ম বিরোধি নাস্তিক্যবাদি শক্তি। এ কথা জনে জনে ছড়িয়ে দেওয়াই হচ্ছে এদের কূট কৌশল। ফলে দেশ বিরোধী কার্যক্রম থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ফিরে থাকে। তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে নাস্তিকতার বিরোধিতায়। ধর্ম অবমাননা থেকে কী করে বাঁচা যায় কেবল এই এক দুশ্চিন্তায় সময় কাটে ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানের। দুঃখজনক হচ্ছে এদের কূট কৌশল ধরার মত সূক্ষ্ম বুদ্ধির লোক নেই বললেই চলে। প্রশাসনেও এমন কোনো বুদ্ধিমান মানুষ হয়ত নেই।

বিখ্যাত নাস্তিকদের ভেতর আসিফ মহিউদ্দিন, মোফাসসেল ইসলাম এবং মুফতী আব্দুল্লাহ মাসউদ। এদের প্রত্যেককেই সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এদের সবার সাথে জামাত শিবিরের সংযোগ রয়েছে। পাঠককেও খোঁজ নিয়ে দেখতে বলব।

প্রশ্ন হতে পারে এরা যদি নাস্তিক না হয় তাহলে ইসলাম সম্পর্কে এমন বাজে মন্তব্য করার সাহস হয় কী করে? হ্যাঁ, এটা সত্যি ভাবার মত বিষয়। একজন মুসলমান কি করে নাস্তিকের অভিনয় করতে পারে। বুক কাঁপে না? সাধারণ মুসলমান হলে অবশ্যই এমন অভিনয় করতে বুক কাঁপত। এরা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এদেরকে বোঝানো হয়েছে, বৃহত্তর স্বার্থে তোমাদেরকে নাস্তিক সাজতে হবে। কারণ তুমি নাস্তিক হয়ে নাস্তিকদের কথাগুলো উচ্চারণ করবে। তাতে মানুষকে নাস্তিক্যবাদের মন্দত্ব বোঝানো সহজ হবে। তোমার এই অভিনয়ের কারণে সমাজের মানুষকে ধর্মের দিকে আহ্বান করা সহজ হবে।

ইসলামের খেদমতের উদ্দেশ্যেই এরা নাস্তিক হয়। তারপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একেকজন ত্রাণকর্তার উদয় হতে থাকে। মহা মহা জ্ঞানী আর ইসলামের কাণ্ডারি হাজির হয়। কোনো আলেম বা দাঈকে দেখবেন না এসব নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

কারণ সমাজের বাস্তব সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত থাকে সত্যিকার দাঈ প্রচারক ও আলেম উলামারা। জামাত শিবির বাস্তবধর্মী কোনো কাজ না থাকায় কৃত্রিমভাবে কিছু কাজ তারা বানিয়ে নিয়েছে। এভাবে তাদের কৃতিত্ব জাহির করার সুযোগ হয়েছে। আমার জানা মতে মুহাম্মাদ ইবরাহিম, ফেরদাউস ও আরও কিছু লেকচারার শিবিরের পক্ষ থেকে এ কাজ করছে। এসব ফাজলামো করে ওরা দেখাচ্ছে দেশের সব চেয়ে বড় সমস্যা জামাত নয়, বড় সমস্যা নাস্তিক্যবাদ।

অভিজিৎ রায় খুব প্রতিভাবান ছিল তাকে পেইড এজেন্ট বানানো সম্ভব ছিল না তাই তাকে হত্যা করেছে। আসিফ মহিউদ্দিন ও এরকম আরও কিছু লোককে এরা প্রটাকশন দিয়ে নাস্তিক্যবাদ প্রচারের কাজে নিয়োজিত করে রেখেছে।

আমার কথা গ্রহণ করতে কষ্ট হলে আপনারাই বলুন, জামাতিদের মাহফিলে লোক বেশি হয় না কোনো নাস্তিকের লেকচার শোনার জন্য লোক সমাগম বেশি হয়? নাস্তিক্যবাদের অগ্রসরতা কতটা? জামাত শিবিরের চেয়ে তারা বেশি শক্তিশালি?

প্রত্যেকটা নাস্তিকের প্রোফাইল ঘেটে দেখুন। তাদের বাবা মায়ের পরিচয় দেওয়া নেই। ঠিকানা নেই। তাদের সম্পর্কে যেন সহজে জানতে না পারেন। তাদের পরিচয়ে বলা হয় সেকুলার। যেন নাস্তিক্যবাদ আর সেকুলার সমার্থক। দেশের মানুষ যেন সেকুলারিজমকে ঘৃণা করতে শেখে। এভাবে কূটকৌশলে এরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাজ করছে।

একজন মুসলমানকে নাস্তিক বানাতে পারলে যেন তাদের বিরাট বিজয়।

মুফতী আব্দুল্লাহ মাসউদ নাস্তিক হলো আর সাথে সাথে সে ভারত চলে গেল। ভারত সরকার যেন এসব নাস্তিক পোষে। ছড়ানো হলো যে তাকে ইউরোপ থেকে নিয়ে যাবে বিশেষ বিমানে। পুরান পাগল তাসলিমা নাসরিনের ভাত নাই আর এসব নাস্তিকদের সাহায্য করার জন্য যেন ইউরোপ আমেরিকার মানুষ মুখিয়ে আছে। উন্নত বিশ্বের মানুষের আর কাজ কি? কবে কোন মুসলিম নাস্তিক হবে তাকে নিয়ে নাচবে। একজন মুসলমানকে নাস্তিক বানাতে পারলে যেন তাদের বিরাট বিজয়।

এই যে আমাদেরকে গাধা বানানো হচ্ছে এর শেষ কোথায় জানি না। আর কতদিন এসব দিয়ে বাণিজ্য হবে আল্লাহ জানে। আরিফ আজাদদের মত লোকরা এই নাস্তিক্যবাদ নিয়ে আর কত বোকা বানাবে সাধারণ ধার্মিকদের? সত্যিকার ইসলামিক স্কলারদের থেকে সাধারণ মানুষদের দূরে সরানোর এ অপকৌশলে তারা অনেকটাই সফল। কিন্তু চোরের দশ দিন হলেও চিরদিন চোরের হয় না। চোর এক সময় ধরা পড়েই। গৃহস্থ সজাগ হলে এসব চোরের হাটে হাড়ি ভাঙে।

সবাইকে বলব একটু সচেতন হোন। দেশের কল্যাণে যারা কাজ করে তাদের সঙ্গ দিন। দেশ বিরোধী অপশক্তির ব্যাপারে সজাগ হোন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক: শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও সমাজ বিশ্লেষক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *