নোমান সালেহ-এর তিনটি কবিতা

নোমান সালেহ-এর তিনটি কবিতা

নোমান সালেহ-এর তিনটি কবিতা

বৈশাখী ডাহুক

বাড়ির চৌকাঠে ডাহুকের বেশ ধরে চলে এলো আবার বৈশাখ। দুয়ারের খিল খুলতেই দেখি নতুন বউয়ের মত দেড় হাত ঘোমটা টেনে সেজে আছে রঙিন আকাশ। খানেক বাদে পালকি করে আমার উঠোনে নায়র আসে বৃষ্টি।

আবার ঘোমটা খুলে কদম ফুলের মত সবুজ পাতার ফাঁকে লটকে থাকে লকলকে সূর্য।

এমনও দিনে আমের মুকুলের সোঁদা গন্ধে চারপাশটা কেমন মঁ মঁ করে!
ফলের ভারে নুয়ে পড়ে পোয়াতি কাঁঠাল গাছ।
কাঁখে শাড়ির আঁচল গুছে চুলোতে কাজির চালের হাড়ি বসায় চাষির গিন্নি।
কাঁধে লাঙ্গল, হাতে জোড়া রুপালি ইলিশ নিয়ে ভাটিয়ালি গাইতে গাইতে বাড়ি ফেরে সুবোধ কৃষক।

আমি পাটাতনে হেলান দিয়ে বৈশাখী আমেজে মজে থাকি। ঝুপড়ির ভেতর পাখির ছানার মত বৈশাখ
আমার বুকের মাঝে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
আন্দোলিত করে যায় আমার সারাটা গা। আমি বুঁদ হয়ে তার পালা বদল দেখি।

এমনও দিনে আমার আবার বাঙালি হয়ে জন্মাতে ইচ্ছে করে। বারবার আমি বাঙালি হয়ে জন্মাতে চাই।

 

স্বপ্নঘোর

দেখো লেগে আছে ঠোঁটের উপর হাসি
কেউ কি জানে রাত্রিটা ঠিক গভীর হলে
বুকে কষ্ট বারুদ গলে কিসের জলে ভাসি?

ছোট্ট ঘরের কোণে
একুটখানি সুখের খোঁজে, মুখে কাপড় বালিশ গুজে,
কাঁদি আমি কিসের টানে কেউ কি সেসব শোনে?

আমি এখন নিচের তলার সিঁড়ি
আমার কাঁধেই উঠে, যারা স্বপ্ন পূরণে ছুটে
সকল আশা তুচ্ছ করে, তাদের স্বপ্ন দিচ্ছি গড়ে
আপন স্বপ্ন কামড় দিয়ে আপন দাঁতেই ছিড়ি।
তখন আমি বুকের মধ্যে নিজের কবর খুঁড়ি
আমার গলায় পড়িয়ে ফাঁসি দিচ্ছো তোমরা অট্টহাসি
যখন তোমরা নাটাই হাতে আমি একলা ঘুড়ি।

দেখো লেগে আছে ঠোঁটের উপর হাসি
এই হাসিতেই লুকিয়ে আছে তোমাদেরই রাশি
তাইতো এত অবহেলায়ও তোমাদের তরে আসি।

শৈশব আমায় নরম হাতে ডেকে যায়

মৌমিতা
তুমি কি জানো শ্রাবণ আমার কেন এত পছন্দের?
কেন শ্রাবণ এলে এত উতলা হই আমি?
কী একটা খুঁজে ফিরি তালাশ করি?

কি জানো তো!
শ্রাবণের সকাল হয় কদম রঙের।
দুপুরটা হয় ভেজা কাকের মত জড়োসড়ো।
বিকেলটা একদম আমাদের বাড়ির ধারে বিলের মত শান্তশিষ্ট।

শৈশবে এই বিলে আমি ভেলায় করে আসতাম।
ছুটে চলতাম বহুদূর মনে হত ভেলায় পাড়ি দেই সাগর।
যেতে-যেতে দেখতাম আনকোরা হাতে খেয়াজাল ঝাঁকিজালে মাছ ধরে সদ্য যুবক।
শাড়ির আঁচলে জল ছেঁকে মাছ ধরে সেকেলে বধূ।

সরপুঁটির লাল হৃদপিণ্ডটা দেখি ওঁৎ পাতা মাছরাঙ্গার ঠোঁটে। বিলের উপর এলোমেলো হেঁটে চলে বিষহীন ডোরা সাপ।
আরও দেখি
খাড়া তালগাছের ভ্রুতে লেগে আছে শ্রাবণের জল।

সেই বিল সেই জল এখনো আছে।
শ্রাবণ এলে ছুটে চলে আসি আমিও।
এখনো ভেলা ভাসে, ভাসে নাও ও।

বিলের ধারে বসে দেখি শ্রাবণের জল
শ্রাবণের জল হয় অক্ষর
যে অক্ষর পাঠ করলে বুঝি
শৈশব আমায় নরম হাতে ডেকে যায়।
আমি উতলা হই শৈশবের খোঁজে শৈশবের টানে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *