পাপ বাপকেও ছাড়ে না

পাপ বাপকেও ছাড়ে না

পাপ বাপকেও ছাড়ে না

আবদুল্লাহ আশরাফ : পীর সাহেব হুযুর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে একটু-আধটু হাঁটেন। সুস্থ থাকার একমাত্র ঔষধ হাঁটা। রোজ রোজ হাঁটতে বের হন। একাকি হাঁটতে চাইলে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাঁটেন।

আজ হাঁটতে যাওয়ার সময় আমাদের নিয়ে যান। বিকালের পরিবেশটা খুব চমৎকার। হাঁটতে ভালোলাগে। একাকি হাঁটতে ইচ্ছে হয় না। হাঁটি না। অথচ জীবনের একটা অধ্যায় তো হাঁটাহাঁটির।

বিসিক শিল্পনগর হয়ে আমরা ছুটে যাচ্ছি জামিআ আবুবকরে। নতুন জায়গায় নতুন করে মাদরাসা করা হচ্ছে। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ। হুযুর এটা সেটা বলছেন, আমরা শুনছি।

‘পাপ যারা করে, তারা শাস্তি পায়। যেমন একটা ঘটনা বলি।’

একটা ঘটনা বলে ফেললেন, অারেকটা ঘটনা বলতে শুরু করছেন। আমি আরো কাছে চলে আসি। শুনছি শিক্ষণীয় ঘটনা।

“এক বাদশাহর এক মেয়েছিল। সেই মেয়ের সঙ্গে এক উজিরের ছেলের অবৈধ প্রেমে ছিল। একদিন রাতে বাগানে তারা মিলিত হলো। ক্লান্ত শরীরে বিবস্ত্র অবস্থায় বাগানে ঘুমিয়ে পড়ল দু’জনে।

ইমাম সাহেব তাহাজ্জুদের নামায পড়ে সে বাগানে ঘুরাঘুরি করতো প্রায়। সেদিনেও হাঁটাচলা করছিল। একপর্যায়ে বাদশাহর মেয়েকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে, নিজের গায়ের চাদর দিয়ে মেয়েটিকে ঢেকে চলে গেলেন ইমাম সাহেব।

মেয়েটি তাৎক্ষণিক ঘুম থেকে ওঠে বিষয়টি বুঝতে পারলো। টেনশনে পড়ে গেলো। ইমাম সাহেব আমার সম্পর্কে জেনে গেছে। যে করে হোক এ সাক্ষী রাখা যাবে না।

প্রাসাদে গিয়ে পিতাকে বলল, আব্বু! আমাদের ইমাম সাহেব আমার সর্বনাশ করতে চেয়েছিল। আমি তার চাদর রেখে দিয়েছি। আপনি অতিসত্বর তার বিচার করুন। বাদশাহ মেয়ের কথা শুনে রেগে গেলেন। ইমামকে ডেকে পাঠালেন। তার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললেন, যাও ওমুক জাল্লাদের কাছে এ চিঠিটা দিয়ে অসো।

ইমাম সাহেব আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারেননি। বাদশাহর আদেশ, মানতে হবে। তিনি চলতে লাগলেন। রাস্তায় সাক্ষাৎ হলো উজিরের সাথে। উজির সাহেব ইমাম সাহবেকে দেখে বললেন, হুযুর! কোথায় যান?

ইমাম সাহেব বললেন, বাদশাহ জল্লাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওটা নিয়ে যাচ্ছি।

উজির বললেন, আমার বাড়িতে একটু বসেন। এ কাজ অন্যের দ্বারাও করানো যাবে। এ কথা বলে উজির বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন ইমামকে। আর ছেলেকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন, ওই চিঠিটা। ছেলে চিঠি নিয়ে চলে গেলো জল্লাদের কাছে।

জল্লাদ চিঠি খোলে পড়তে লাগলো। সেখানে তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে-“চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে বাহককে হত্যা করে ফেলবে।”

জল্লাদ উজিরের ছেলেকে বলল, একটু বাইরে দাঁড়াও। আমি উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। জল্লাদ বাইরে এসে তলোয়ার দিয়ে ছেলেটিকে হত্যা করে দিল।
বাদশার কাছে যখন উজিরের ছেলের হত্যা সম্পর্কে খবর গেলো, বাদশাহ আবার ইমাম সাহেবকে ডাকালেন। বললেন, চিঠি তো তোমাকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম।

ইমাম সাহেব বললেন, চিঠিতে কি লেখা ছিল আমি জানি না। তবে সে হত্যা যদি আমাকে করার ইচ্ছে করে থাকেন তাহলে শুনে রাখুন আমি কোনো অন্যায় করিনি।

তারপর সম্পূর্ণ ঘটনা খোলে বললেন বাদশাহকে।

২৫/৮/২০২৯

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *