প্রশ্নফাঁসের যন্ত্রণা : আমরা এখন কাকে নিয়ে গর্ব করব
মাওলানা আমিনুল ইসলাম : খুবই পরিতাপের বিষয়। দুঃখ বেদনায় কলিজাটা খান খান হয়ে যাচ্ছে। আমরা ভাবতেও পারিনি এরকম ঘটনা ঘটে যাবে। এই সামান্য পরীক্ষাটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে গেলাম? তাহলে আমাদের হাতে যদি দেশের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে দেশের উপায় কি হবে?
আমরা এতদিন কওমী মাদ্রাসার পরীক্ষা নিয়ে গর্ব করতাম। কওমীকে নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলতাম। কেননা কওমী মাদ্রাসার ইতিহাসে কোন দিন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। এই যে বেফাকে ৪১ বছর ধরে পরীক্ষা হয়েছে, বেফাকেও কখনও পরীক্ষা ফাঁসের ঘটনা নজরে আসেনি।
কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয়, এই বেফাকের ৪২ তম পরীক্ষায় এসে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে গেল। এমনি ভাবে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ বোর্ড আল হাইয়াতুল উলিয়াতেও এই দুর্ঘটনা হল। যার কারণে কর্তৃপক্ষ সকল পরীক্ষা বাতিল করলেন। এবং আবার ২৩ এপ্রিল থেকে নতুন পরীক্ষার তারিখ ঘোষনা করা হল।
তবে এখানেই শেষ নয়। এই দ্বিতীয় ডেটের পরীক্ষাতে আবার প্রশ্ন ফাঁস। আবু দাউদ শরীফের কিতাবের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে। সে কারণে আবু দাউদ শরীফের পরীক্ষা বাতিল।
আহ, খুবই কষ্ট হচ্ছে এই নিউজে। আমরা কত জঘন্য হয়ে গিয়েছি। সামান্য এই পরীক্ষার প্রশ্ন আমানত রাখতে অক্ষম হয়ে গেলাম? আমাদের মধ্য থেকে কি নববী আদর্শ চলে গেল? আকাবির আছলাফের আদর্শ আমাদের থেকে উঠে গেল?
খুবই লজ্জা হচ্ছে আমার। সাধারণ মানুষের সামনে আমরা কিভাবে মুখ দেখাব?
এটা কি কোন আলেমের সিফাত? কদিন আগে যে ঘটনা ঘটে ছিল, সে তো একজন আলেমই করেছিল। এবার কে করেছে? নিশ্চয়ই সেই মাহবুবের মত আর কেউ হবে?
তবে আলেম হয়ে এখনও এই খাছলাত? এখনো এই দুস্চরিত্র? এ দুঃখ কোথায় রাখব?
আমার মনে হয়, হাইয়াতুল উলয়া কতৃপক্ষ কে অনেক শক্ত হতে হবে। খুবই মজবুতির সাথে এগোতে হবে। আর যারা এসব কাজে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া জরুরী।
সেদিন যে মাহবুব ধরা পড়ল, তাকে কি আইনের আওতায় আনা হয়েছে? তাকে কি কোন উল্লেখ যোগ্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে?
অপরাধীকে কঠিন শাস্তি দিলে তাহলে আর এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতনা।
এজন্য হাইআ এর মুরুব্বীদের কাছে বিনীত অনুরোধ, প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিজ্ঞ আমানতদার আলেমদের সাথে পরামর্শ করুন। এবং প্রশ্ন ফাঁসের সাথে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্হা করুন।
আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও সমাজ বিশ্লেষক