প্রাণের বেলংকা, প্রেমের ইজতেমা

প্রাণের বেলংকা, প্রেমের ইজতেমা

  • আশরাফ উদ্দীন রায়হান

বেলংকা গ্রামের সন্তান আমাদের ‘সবেধন নীলমণি’ শায়খুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দামাত বারাকাতুহুম। এই উম্মতের উপরে তাঁর বড়ই এহসান। নিজের পিতৃভূমি বেলংকার কথাও তিনি ভুলে যাননি। কীভাবে ভুলবেন! বেলংকার সাথে তো তাঁর নাড়িপোঁতা সম্পর্ক। আজন্ম বেলংকার স্নিগ্ধ বাতাসে বুকভরে শ্বাস নিয়েছেন তিনি। এখানেই তো তাঁর সমস্ত অস্তিত্বের শেকড় প্রোথিত। আমি দেশের কত জায়গাই তো ঘুরে দেখেছি। কিন্তু আমার বেলংকার মতো আপন-শান্ত-নিবিড় কোনো স্থান আমি আজ অব্দি পাইনি। বেলংকা তাই আমার কাছে মর্ত্যলোকের নন্দনকানন।

শুধু বেলংকাই তো না; বরং এই হাওরাঞ্চলের বৃহৎ পরিসরের আপামর লোকজনের কল্যাণকামনা ও দ্বীনী ফিকিরে তিনি সবসময়ই ব্যাকুল ও ব্যতিব্যস্ত—এ আমার নিজ চোখে দেখা। এ জন্যেই তো তিনি প্রতি বছর ‘আত্মসংশোধনের ঝর্নাধারা’ প্রবাহিত করেন ‘ইসলাহী ইজতেমা’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে। আগামি ৩, ৪, ৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার, শনিবার, রবিবার) এই তিন দিন প্রশিক্ষণ দিয়ে বাকি জিন্দেগিকে আমলের রঙে রঙিন করার সবক প্রদান করেন তিনি।

মাঘের শিশিরভেজা প্রভাতের পরপরই রোদ ঝলমলে মিষ্টি সকাল, সমাগত বসন্তের মৃদুমন্দ স্নিগ্ধ হাওয়া, আমগাছের ডালে ডালে প্রস্ফুটিত মঞ্জরী-মুকুলের অন্তরালবর্তী দোয়েলের আনাগোনো, কনকনে ঠাণ্ডার বিদায়ী রেশে যাপিত দীর্ঘ রজনী—ঈষদুষ্ণ, হালকা শীত কিংবা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতে ইসলাহী ইজতেমার সময়টা এমন দৃশ্যপটেই অতিবাহিত হয়।

যিকির-আযকার, কুরআনের তিলাওয়াত, দুরুদ ও সালামের মকবূল ওয়াজীফা খতম, কিতাব থেকে তালীম, দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের আহাম বয়ান—এমন তরতিবেই চলে ইজতেমার পুরোটা সময়টা। তবে ইজতেমায় আগত হাজার হাজার মানুষ এবং আশপাশের কয়েক কিলোমিটার দূরবর্তী জায়গা যে পর্যন্ত মাইকের আওয়াজ পৌঁছে অগণন মানুষের কাছে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দামাত বারাকাতুহুমের মুনাজাত নিতান্ত আবেদনময়।

সবাই এই মুনাজাতে শরীক হওয়ার জন্য মরিয়া। বিশেষত, রবিবার দিনের সকালে আখেরী মুনাজাত ইসলাহী ইজতেমার অন্যতম অংশ। কী আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনার তুমুল ভাববিনিময়ের সেই মুনাজাত! কী আকুলিবিকুলি করা যুলজালালী ওয়াল ইকরামের কুদরতী পদযুগলে সমর্পণের সেই হৃদয়গ্রাহী দুআ! ইথারে ভেসে আসে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দামাত বারাকাতুহুমের ‘মালিক, মালিক, ও মালিক, তুমি মাফ কইরাই দেও’ ডুকরে ডুকরে রোনাজারির ঘোরলাগা মুনাজাত।

ঘরে ঘরে আগত মেহমানদের উৎসবমুখরিত উষ্ণ কলরব। অন্দরমহলে সর্বংসহা মা-বোনদের সযত্ন রান্নাবাড়া। অতিথির আরামের ফিকিরে বাড়ির কর্তাব্যক্তির তৎপরতা। একেক জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে-থাকা আমাদের পাঁচ ভাই-বোন তথা পরিবার-পরিজনের একত্র হওয়ার উপলক্ষও এই ইসলাহী ইজতেমা। ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রেজেন্ট্যাশনের চাপ থাকা সত্ত্বেও আমার বহুল প্রতীক্ষিত ইসলাহী ইজতেমায় শরীক হওয়ার তীব্র এরাদা। আল্লাহ চান তো ৩, ৪, ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইসলাহী ইজতেমায় শরীক হওয়ার জন্য আগেই উত্তরবঙ্গ থেকে রওনা হবো বেলংকার উদ্দেশে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন, আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *