বনের শেষে ছোট্ট কুটির | ফারুক নওয়াজ
এই শহরে হেসেখেলে আমরা সবাই আনন্দে বেশ আছি
বুকের মাঝে স্বপ্ন পুষি তাড়িয়ে দিয়ে দুঃখ-শোকের মাছি।
আকাশ ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষাতে এগিয়ে চলি স্বাধীনতার সুখে…
কিন্তু বলো খোঁজ রাখি তার… দুঃখী মা যে থাকেন মলিনমুখে?
আমার মতো, তোমার মতো তারও ছিলো একটা সোনার ছেলে;
দেশের ডাকে ছুটলো রাজু মায়ের আদর, দুধমাখা ভাত ফেলে।
‘মাগো আমি যাচ্ছি, ফিরে আসবো তোমার স্বাধীনতা নিয়ে’…
এই বলে সে আর এলো না দেশটাকে তার স্বাধীন করে দিয়ে।
লাল-সবুজের জয়পতাকা উড়ছে আহা হাওয়ায় দুলে-দুলে…
স্বাধীন পাখি গান জুড়েছে, ফুটছে গোলাপ পাপড়ি খুলে-খুলে।
ফুললো নদী দুললো ঢেউয়ে পরানমাঝির পালতোলা নাও আহা…
স্বাধীন ভিটেয় আসলো ফিরে দেশছাড়া ওই দুর্গা, রথীশ, রাহা।
আসলো ফিরে বীরছেলেরা, যুদ্ধজয়ের সুর ভেসে যায় হাওয়ায়…
উঠলো মেতে অধীন জাতি সোনার হরিণ স্বাধীনতা পাওয়ায়।
সুখের স্রোতে ভাসলো সবাই; সেই ভাসাতে মত্ত আজো জাতি_
কিন্তু তাদের খোঁজ রাখি না জ্বাললো যারা আঁধার ঘরে বাতি।
তোমরা তো সব সুখেই আছো; যাও না দেখে আসো না সেই মাকে_
শহর ছেড়ে অনেক দূরে…, বটমূলে এক ফকির শুয়ে থাকে…
বাঁ দিকে এক রাস্তা গেছে, হাঁটতে থাকো পথটা বেয়ে-বেয়ে…
পথের দু’পাশ ঝোপছাপানো, হাঁটতে হবে এপাশ-ওপাশ চেয়ে।
পথ যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে এক তিরতিরানো নদী…
দেখবে ঘাটে নৌকা বাঁধা, মাঝির দেখা না পাও তুমি যদি…
ঘাটের খেয়া নিজেই বেয়ে ওপারে যাও, হাঁটতে থাকো নেমে…
মাঠ পেরিয়ে, বন পেরিয়ে, বনের শেষে একটু যেও থেমে…!
এবার সোজা ডান দিকে যাও; শর্ষেক্ষেতের আলটি বেয়ে, শেষে…
দেখতে পাবে ছোট্ট কুটির…, কুমড়োলতা উঠেছে ঘর ঘেঁষে…
ছনের চালা, চাঁচের বেড়া… ছোট্ট উঠোন, ডাকছে ঝিঁঝিঁপোকা…
আস্তে যেও..! শব্দ পেলে ভাববে মা ঠিক আসছে বুঝি খোকা।
চাঁচের বেড়ার ফোঁকর দিয়ে দেখতে পাবে সাদা চুলের মাকে;
খোকার ছবি হাতে নিয়ে বলছে কীসব ছবির খোকনটাকে।
কানটি পাতো শুনতে পাবে; ‘খোকনরে তুই বড্ড পাজি ছেলে…
বল না বাবা ক্যামনে আছিস দুঃখিনী এই মাকে একা ফেলে…
কতদিন যে খাইনি আমি, তুই না এলে খাবো কেমন করে…
কেউ রাখে না খবর আমার, একমুঠো চাল নেই যে আমার ঘরে!’
পারলে তুমি খোকার মতো একটুখানিক জড়িয়ে নিয়ে মাকে_
বলো, হাজার খোকন আছে, কষ্ট পেতে হবে না আর তাকে।
পারো, পারো… তোমরা পারো এমন হাজার মায়ের খোকন হতে;
সে দিন আহা আসবে কবে…, দেশ তাকিয়ে ভবিষ্যতের পথে।