ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান ● ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার সময় দেশটির উত্তর-পূর্বাংশে কেবল তিনটি রাজ্য ছিল। মণিপুর ও ত্রিপুরা ছিল প্রিন্সলি স্টেট এবং সবচেয়ে বৃহৎ রাজ্য আসাম ছিল সরাসরি ব্রিটিশ শাসনাধীন একটি প্রদেশ। আসামের মূল ভূমির বাইরে নতুন চারটি রাজ্য সৃষ্টি করা হয়। নাগাল্যান্ড আলাদা রাজ্য হয় ১৯৬৩ সালে, মেঘালয় হয় ১৯৭২ সালে। মিজোরাম একটি ইউনিয়ন টেরিটরি হয় ১৯৮৭ সালে এবং একই বছর অরুণাচলের সঙ্গে আলাদা রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। এ সাতটি রাজ্য সাত বোন (সেভেন সিস্টারস) নামে পরিচিত, যাকে অনাবিষ্কৃত ভূস্বর্গ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হয়। অবশ্য ১৯৭৫ সালে গণভোটের মাধ্যমে সার্বভৌম রাষ্ট্র সিকিম ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ভারত ১৯৯০ সালে সিকিমকে তার রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাই চূড়ান্তভাবে আমরা বলতে পারি, সেখানে সাতটি নয়, আটটি রাজ্য এখন। তবে অন্য রাজ্যগুলোর সংলগ্নতার অভাবে লোকে সিকিমকে একই ক্লাস্টার হিসেবে গ্রহণ করে না। সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলো তাদের ভূতাত্ত্বিক সংলগ্নতা ও ভাষিক সমরূপতার জন্য অধিক জনপ্রিয়। সাতটি রাজ্যের আয়তন ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫১১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো ভারতের প্রায় সাত ভাগ। ২০১১ সালে সেসব রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ৪৪ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন, যা পুরো ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
এ সাত রাজ্যের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সীমান্ত আছে। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ আন্তর্জাতিক সীমান্ত ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার (২ হাজার ৫৪৫ মাইল) দীর্ঘ, যা বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের ২৬২ কিলোমিটার, ত্রিপুরার ৮৫৬ কিলোমিটার, মিজোরামের ১৮০ কিলোমিটার, মেঘালয়ের ৪৪৩ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
বাংলাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দেশটির মূল ভূমির রাজ্যগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভাবে সংযুক্ত। কাজেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে মূল ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দিক থেকে নির্ভরযোগ্য সেতু। বাংলাদেশ ও সেভেন সিস্টারসের সীমান্ত চৌকিগুলো হলো: ১. তামাবিলÑ মেঘালয়ের ডাউকি ২. আখাউড়াÑ ত্রিপুরার আগরতলা ৩. বিবিরবাজারÑ ত্রিপুরার শ্রীমন্তপুর। এর মধ্যে শেষোক্ত সীমান্তচৌকিটি শুধু কার্গো যান চলাচলের জন্য।
বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের ভৌগোলিক নৈকট্য দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে সেভেন সিস্টারসের সব মুখ্যমন্ত্রী স্থলবন্দর বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। সেভেন সিস্টারস ও বাংলাদেশের পর্যটন সম্পদের দিক থেকে এটা অনুমান করা যায় যে, যথাযথভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণ পর্যায়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধের মাধ্যমে উভয় দেশই ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
আলোচ্য অঞ্চলের প্রধান শিল্প হলো, চা, ক্রুড পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, সিল্ক, বাঁশ ও হস্তশিল্প। এসব রাজ্য ব্যাপকভাবে জঙ্গলাকীর্ণ এবং সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়। সেখানে বণ্যপ্রাণীর অনিন্দ্যসুন্দর অভয়ারণ্য, চা বাগান ও ব্রহ্মপুত্রের মতো প্রমত্ত নদ আছে। অঞ্চলটি এক শিংওয়ালা গরুর, হাতি ও অন্য বিপন্ন বণ্যপ্রাণীর আবাসস্থল। আন্ত ঃআদিবাসী উত্তেজনাসহ নিরাপত্তার অভাব, ব্যাপক বিদ্রোহ, প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত প্রভৃতি কারণে আলোচ্য এলাকায় বিদেশীদের যাওয়া নিষেধ। এটি সেখানে লাভজনক ভ্রমণ পর্যটন ও হসপিটালিটি শিল্প বিকাশের পক্ষে ক্ষতিকর। নর্থইস্টার্ন কাউন্সিল ‘প্যারাডাইস আনএক্সপ্লোরড’ একটি মার্কেটিং ট্যাগলাইনের উন্নয়ন করেছে।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে আলোচ্য অঞ্চল খুব সমৃদ্ধ। তবে আন্তর্জাতিক বিদ্রোহ সমস্যা, আন্তর্জাতিক সংঘাত ও বিদেশী পর্যটকদের ওই এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা থাকায় বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও সেখানে পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করেনি।
ভারতে পর্যটনের অবস্থা পর্যালোচনা
ভারতে পর্যটন দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। অনেক দেশের জন্য অনেক সময় পর্যটন ও সম্পর্কিত ইস্যুগুলোর ওপর প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সেদিক থেকে ভারতও ব্যতিক্রম নয়। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে দেশটিতে মোট ৭ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন বিদেশী পর্যটক ভ্রমণ করে। অন্যদিকে দেশটির সর্ববৃহৎ স্বতন্ত্র নিউজ এজেন্সি ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিসের (আইএএনএস) মতে, ২০১৪ সালে সেখানে ২২ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন পর্যটক আসে, যা ২০১৩ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন। আবার ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের মতে, পর্যটন খাত থেকে ভারত ৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন রুপি আয় করে বা ২০১২ সালে তা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল।
হসপিটালিটি খাত ভারতে ৩৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, যা দেশটির পুরো কর্মসংস্থানের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয় ছিল ২০ হাজার ২৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
হসপিটালিটি খাত ভারতে ৩৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, যা দেশটির পুরো কর্মসংস্থানের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয় ছিল ২০ হাজার ২৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাজেই পরিসংখ্যানের সরকারি ও বেসরকারি উেসর তথ্যের মধ্যে বিপুল ফারাক আছে। তবে সরকারি তথ্য গ্রহণ করলে এটা সহজেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, ভারতে পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, যদিও সেই অগ্রগতি সিঙ্গাপুর, থ্যাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো কিছু ছোট দেশের তুলনায় কম। মনে করা হচ্ছে, দেশটিতে ২০১৩ সাল নাগাদ পর্যটন খাত বার্ষিক ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বিকশিত হবে এবং পরবর্তী দশকের মধ্যে দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হবে। ভারত শিক্ষাগত, চিকিৎ্সা, আয়ুর্বেদিক প্রভৃতি অভিনব শাখায় পর্যটনকে বৈচিত্র্যময় করতে সফল হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, বার্ষিক ৩০ শতাংশ বৃদ্ধিসহ ২০১৫ সালে খোদ চিকিৎসা পর্যটন থেকে ভারত কমপক্ষে ৯৫ বিলিয়ন রুপি আয় করেছে।
দেশটির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভ্রমণকারী অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যাও খুব বিস্ময়কর। ২০১০ সালে ৭৪০ মিলিয়ন অভ্যন্তরীণ পর্যটক পুরো ভারত ভ্রমণ করেছে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, আইএএনএসের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে পুরো ভারতে ভ্রমণকারী অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬ মিলিয়নে উন্নীত হয়, মাত্র দুই বছরের মধ্যে যা কিনা প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি। ২০১৪ সালে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশ পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজ্য ছিল। আর ২০১১ সালে বিদেশী পর্যটকরা চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বাই ও আগ্রা- এ চার শহরে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করে। বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যার দিক থেকে চেন্নাই ৩৮, মুম্বাই ৫০, দিল্লি ৫২, আগ্রা ৬৬ ও কলকাতা ৯৯তম স্থান দখল করে।
২০১৩ সালের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস রিপোর্টে ১৪৪টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৬৫তম। আলোচ্য প্রতিবেদনে ১৪৪টি দেশের মধ্যে দাম প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দিক থেকে ভারতের অবস্থান ২০তম। উল্লেখ করা দরকার যে, উন্নয়নের বিদ্যমান ধাপে ভারতের মানবসম্পদ বিমান পরিবহন ও সড়ক পরিবহন অবকাঠামো আছে। সেদিক থেকে বিশ্বের মধ্যে দেশটির অবস্থান ৪২তম। অবশ্য দেশটির পর্যটন অবকাঠামোর কিছু দিক এখনো অনুন্নত রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় দেশটিতে খুব কমই হোটেল রুম আছে। তদুপরি সেখানে এটিএম পেনিট্রেশনও কম। ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের মতে, ২০১২ সালে পর্যটন খাত থেকে আয়ে ভারতের অবস্থান বিশ্বের মধ্যে ১৬তম এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম।
সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোর বর্তমান পর্যটন অবস্থা
ভারতের উত্তর-পূর্বাংশ বরাবরই বড় পর্যটক গন্তব্য ছিল। ইকোটুরিজম, শিলার মধ্য দিয়ে অভিযান, প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্য, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন-যাপন, মুগ্ধকর সংস্কৃতি ও স্থানের কারণে পর্যটনপ্রেমীরা সবসময় আলোচ্য অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সমৃদ্ধ পর্যটন সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভারতের স্বাধীনতার পরে দীর্ঘ সময় ধরে সেভেন সিস্টারস উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যটক আকর্ষণ করতে পারেনি। সেখানে পর্যটনের এ অবস্থার জন্য কিছু কারণ দায়ী। তবে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এসব সংঘাতমুখর অঞ্চলে বিদেশী পর্যটক প্রবেশে ভারতীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা। অবশ্য ২০১১ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদেশী পর্যটকদের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
ট্রাভেলওয়ার্ল্ড ডট ইনের প্রতিবেদনমতে, ২০১২ সালে সেখানে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বিদেশী পর্যটক নিবন্ধিত হয়। ২০১৩ সালে তা বেড়ে ২৮ শতাংশে উন্নীত হয়। দেখা গেছে, সিকিম বাদে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। তবে বিশ্বে সেভেন সিস্টারসের যে ভাবমূর্তি আছে, তার তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা মোটেই সন্তোষজনক নয়। পর্যটকদের অবাধ চলাচলের জন্য আলোচ্য অঞ্চলের সীমান্ত চৌকিগুলো উন্মুক্ত করা না হলে সেভেন সিস্টারসের পর্যটনের অবস্থা এখনকার মতো একই থাকবে। অবশ্য সেভেন সিস্টারসের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পর্যটনচিত্র ভিন্নতর। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে উন্নত সংযোগ থাকায় অন্য রাজ্যগুলোর চেয়ে আসামে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে। সেদিক থেকে আসামের অবস্থা সবচেয়ে ভালো।
সাত রাজ্যের মধ্যে আসাম অধিকতর জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য। ২০১১ সালে মোট ১৬ হাজার ৪০০ পর্যটক আসে। ২০১২ সালে তা বেড়ে ১৭ হাজার ৫৪৩ এবং ২০১৩ সালে আরো বেড়ে ১৭ হাজার ৬৩৮ জনে উন্নীত হয়। এ তিন বছরে সিকিমে সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটক দেখা যাচ্ছে। ২০১১ সালে সেখানে ২৩ হাজার ৬০২, ২০১২ সালে ২৬ হাজার ৪৮৯ এবং ২০১৩ সালে ৩১ হাজার ৬৯৮ পর্যটক দেখা গেছে। যদিও সেভেন সিস্টারসের মধ্যে আসামে সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটক আসে, তবুও পর্যটনে রাজ্যটির বিপুল সম্ভাবনার নিরিখে তা খুবই সামান্য। বছরে রাজ্যটিতে গড়ে মাত্র ১৭ হাজার বিদেশী পর্যটক আসে।
ত্রিপুরায়ও অসন্তোষজনকভাবে বিদেশী পর্যটক আসা (এফটিএ) বাড়ছে। এ রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে অনেক পর্যটক যায়। তামাবিল সীমান্তে ইমিগ্রেশন সাব অফিস থাকায় পর্যটন মৌমুমে উভয় দিক থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ পর্যটক যাতায়াত করে। তবে সীমান্ত চৌকি পর্যটকদের মধ্যে বাংলাদেশীই বেশি, ভারতীয় কম। ঐতিহ্যগতভাবে উন্নত সংযোগ ও বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য থাকায় ত্রিপুরা পর্যটনের দিক থেকে তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে ২০১২ সালে কিছুটা ব্যতিক্রম বাদে অররুণাচলেও পর্যটক সংখ্যার দিক থেকে স্থিতিশীল। আলোচ্য বছরে বিদেশী পর্যটক আসা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ উল্লম্ফনের কারণ নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে মেঘালয়েরও ভালো সংযোগ আছে বটে, কিন্তু অজানা কারণে উভয় দিক থেকে পর্যটকদের যাতায়াত খুবই নগণ্য। মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের পর্যটনচিত্রও বেশ অসন্তোষজনক। এটা খারাপ সংযোগ ও বিদ্রোহ-সংঘাতের কারণে হতে পারে।
বাংলাদেশের সঙ্গে মেঘালয়েরও ভালো সংযোগ আছে বটে, কিন্তু অজানা কারণে উভয় দিক থেকে পর্যটকদের যাতায়াত খুবই নগণ্য। মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের পর্যটনচিত্রও বেশ অসন্তোষজনক। এটা খারাপ সংযোগ ও বিদ্রোহ-সংঘাতের কারণে হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, বিদেশী পর্যটক আগমনের দিক থেকে সেভেন সিস্টারসের সার্বিক পর্যটনচিত্র হতাশাজনক। তবে আলোচ্য অঞ্চলে পর্যটন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটা টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে সেভেন সিস্টারস অনুন্নত ক্যাটাগরিভুক্ত। কিছু ক্ষেত্রে আসাম ছাড়া ওসব রাজ্যের উৎপাদন সক্ষমতা আক্ষরিক অর্থেই অনুপস্থিত। সর্বভারতের ২৭ শতাংশের বিপরীতে আলোচ্য অঞ্চলের শিল্প উৎপাদন কেবল জিডিপির ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। তাই বিভিন্ন বিদ্রোহীগোষ্ঠীতে যোগ না দিয়ে শিক্ষিত তরণসমাজের পর্যটন ও হসপিটালিটি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত বোধ করা উচিত।
অবশ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে পর্যটনের গুরত্ব অনুধাবন করে আসামের রাজ্য সরকার এরই মধ্যে হসপিটালিটি ও পর্যটন খাতে কিছু অর্থবহ উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য ১৯৮৮ সালে রাজ্যটির সরকার আসাম ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এটিডিসি) গঠন করে। গঠনের পর থেকে সংস্থাটি ব্যক্তিখাতের সহযোগিতায় বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে দেশটিতে পর্যটক আসার সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে গত আট বছরে রাজ্যটিতে অভ্যন্তরীণ পর্যটক আগমন বিস্ময়করভাবে বেড়েছে।
অস্বীকার করা যাবে না, তথাকথিত নিরাপত্তার জায়গা থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সেভেন সিস্টারসে বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহে একটি দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক কারণটি একমাত্র হলে অভ্যন্তরীণ এত পর্যটক সেখানে কখনো যেত না। তথাকথিত নিরাপত্তার নামে সেভেন সিস্টারসের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এ দৃষ্টিভঙ্গিকে বৈষম্যমূলক নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেন দেশটির স্বতন্ত্র ফ্রিল্যান্স কলাম লেখকরা।
বাংলাদেশে পর্যটনের বর্তমান অবস্থা
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) প্রতিবেদনমতে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ছিল জিডিপির ৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এ অবদানের মধ্যে হোটেল, এয়ারলাইনস, ট্রাভেল এজেন্সি ও অন্য যাত্রী পরিবহনসেবা প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট কর্মসংস্থান অন্তর্ভুক্ত। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে পর্যটনের অবদান জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
ভ্রমণ ও পর্যটন খাত সরাসরি দেশে ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ২০১৪ সালে এতে আরও ৪ দশমিক শূন্য শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।
ভ্রমণ ও পর্যটন খাত সরাসরি দেশে ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ২০১৪ সালে এতে আরও ৪ দশমিক শূন্য শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। এর মধ্যে হোটেল, এয়ারলাইনস, ট্রাভেল এজেন্সি ও অন্য যাত্রী পরিবহনসেবা প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট কর্মসংস্থান অন্তর্ভুক্ত। আগামী ১০ বছরে আলোচ্য খাতে বার্ষিক গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি চলমান থাকবে। মোট কর্মসংস্থানের বিপরীতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ২০১৩ সালে ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ মোট কর্মসংস্থানের বিপরীতে আলোচ্য খাতের অবদান উন্নীত হবে ৪ দশমিক ২ শতাংশে।
ভিজিটর এক্সপোর্ট হলো ভ্রমণ ও পর্যটনের প্রত্যক্ষ অবদানের একটি প্রধান উপাদান। দেশে অবস্থানকালে পর্যটকরা ভালো পরিমাণ অর্থ খরচ করে। ভিজিটর এক্সপোর্ট ক্যাটাগরিতে খাদ্য, ভ্রমণ, হোটেল প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন টাকা ভিজিটর এক্সপোর্ট হিসেবে তৈরি হয়। ২০১৪ সালে তা ৭ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ৬ লাখ ১১ হাজার আন্তর্জাতিক পর্যটক আসবে এবং তারা ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন টাকা ব্যয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে মোট জাতীয় বিনিয়োগে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪ সাল নাগাদ তা ১ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
সেভেন সিস্টারস থেকে বাংলাদেশে পর্যটক-প্রবাহ বাড়াতে আমাদের করণীয়
পর্যটনের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে পর্যটনবান্ধব দেশ হিসেবে কাজ করা উচিৎ। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নীতি অনেক সময় আদৌ পর্যটন উন্নয়নের উপযোগী নয়। একবার নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘যুক্ত কর হে সবার সঙ্গে মুক্ত কর বন্ধন’। বাংলাদেশ ও সেভেন সিস্টারসের মধ্যে পর্যটন সম্প্রসারণের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে পর্যটকদের জন্য সব বন্ধ সীমান্তচৌকি খুলে দেয়া। এক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতার উদাহরণ উল্লেখ করতে পারি। প্রাথমিকভাবে থাইল্যান্ড যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পর্যটক আকর্ষণ টার্গেট করেছিল।
বাংলাদেশ ও সেভেন সিস্টারসের মধ্যে পর্যটন সম্প্রসারণের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে পর্যটকদের জন্য সব বন্ধ সীমান্তচৌকি খুলে দেয়া।
চাহিদা পূরণে থাই সরকার বিপুলসংখ্যক মানসম্পন্ন হোটেল ও অন্য সম্পত্তি/অবকাঠামো সৃষ্টি শুরুকরে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে থাই হোটেল সেক্টরে কক্ষের প্রাপ্যতা ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। তবে এটা ১৯৯০ সালের দিকে আবাসনের অতি জোগানের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পরিণত হয়। ফলে ১৯৯১ সালের দিকে থাই পর্যটন খাত থমকে পড়ে। আলোচ্য বছরে দেশটিতে আন্তর্জাতিক পর্যটন আগমন (এফটিএ) ৪ শতাংশ এবং পর্যটন রাজস্ব ১০ শতাংশ হ্রাস পায়। মূলত বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশের পর্যটক লক্ষণীয় মাত্রায় কমে যায়। এ অবস্থায় থাই সরকার পর্যটক কমার প্রবণতা সমাধানের চেষ্টা করে এবং মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও লাওসের সঙ্গে দেশটির বিদ্যমান সীমান্ত চৌকিগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব প্রতিবেশী দেশ থেকে পর্যটক আসা উৎসাহিত করতে দেশটি নতুন মহাসড়ক, রেলসড়ক ও অন্য অবকাঠামো তৈরি করে। ১৯৯৩ সালে থাই অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া এবং পার্শ্ববর্তী পর্যটকদের নতুন উৎস সৃষ্টির ফলে থাইল্যান্ডের পর্যটন খাত আবার ঘুরে দাঁড়ায়। একই বছর থেকে চীনা পর্যটক আগমনে লক্ষণীয় উন্নতি দেখা যায়। তার ফলে দেশটিতে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমন ও পর্যটন খাত থেকে রাজস্ব আয় উভয় দিক থেকে ১৯৯১-পূর্ববর্তী সময়ের প্রবৃদ্ধি ধরন ফিরে আসে। পর্যটক আগমনের উৎস হিসেবে পূর্ব-এশীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে খুব গুরুত্ব দেয়। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটকরা ১৯৯১ সালের অপ্রীতিকর পরিণামের টনিক দেয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সীমান্ত রয়েছে। থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরও নতুন সীমান্ত চৌকি খোলার সুযোগ সৃষ্টি করা, বিদ্যমান চৌকিগুলো খুলে দেয়া এবং সড়ক ও রেলসংযোগসহ অবকাঠামো সুবিধা উন্নয়ন করতে হবে। বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের যারা চিকিৎসার জন্য ভারতের মূল ভূমির শহরগুলোয় সহজেই যেতে পারে না, তাদের লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ আলোচ্য চার রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় চিকিৎসা পর্যটনের উন্নয়ন করতে পারে। তদুপরি পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সেভেন সিস্টারসের জনগণের বিশাল সমুদ্র ও সমতল ভূমির প্রতি একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ আছে। এটা মাথায় রেখে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জন্য কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে কিছু সুবিধা সৃষ্টি করা যেতে পারে। বিদেশী পর্যটকদের জন্য রাত্রিকালীন কিছু বিনোদন সুবিধা চিহ্নিত করে সেগুলো দিতে পারি। বাংলাদেশ, অরুণাচল ও সিকিমকে কেন্দ্র করে একটি বুড্ডিস্ট ট্যুরিজম সার্কিটের বিকাশ করা যায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সাযুজ্য আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ত্রিপুরা ও মেঘালয়, মণিপুর ও আসামের মধ্যে সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ার বড়ই অভাব। কাজেই সেখানে সাংস্কৃতিক পর্যটনে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ বিদ্যমান। চার দেশের মধ্যকার মানুষ ও পণ্য পরিবহনে কিছুদিন আগে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) একটি যান্ত্রিক যান চুক্তি (মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্ট) সই করেছে। এটা পর্যটনের জন্য বিপুল সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা এর যথাশিগগির বাস্তবায়ন কামনা করি। দুই দেশের পর্যটন বিকাশে ভিসা আনুষ্ঠানিকতার সহজীকরণও প্রয়োজন। বর্তমানে ভিসা অনুমোদন ও ভোগান্তি উভয় দেশের পর্যটন সম্প্রসারণের উপযোগী নয়। সেক্ষেত্রে সীমান্ত চৌকিগুলোয় ভিসা অন অ্যারাইভাল চালু করা উচিত।
বাংলাদেশ, অরুণাচল ও সিকিমকে কেন্দ্র করে একটি বুড্ডিস্ট ট্যুরিজম সার্কিটের বিকাশ করা যায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সাযুজ্য আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ত্রিপুরা ও মেঘালয়, মণিপুর ও আসামের মধ্যে সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ার বড়ই অভাব।
ভৌগোলিক নৈকট্য সত্ত্বেও অধিকাংশ বাংলাদেশীর কাছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো খুব কমই পরিচিত। সেভেন সিস্টারসের মধ্যে ঐতিহাসিক ট্র্যাক রেকর্ড ও সহজ অভিগ্যমতার কারণে আসাম ও ত্রিপুরা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত একই সাধারণ ইতিহাস-সংস্কৃতি ও দীর্ঘ সীমান্ত বিনিময় করে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মূল ভারতের সঙ্গে ভালো ভূমি সংযোগ না থাকায় অন্য রাজ্যের তুলনায় উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় উন্নয়নের ধারা অনেক পিছিয়ে। এটা সর্বজনস্বীকৃত বিষয় যে, আলোচ্য রাজ্যগুলোর সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা ভিন্ন অন্য কোনো পথ নেই। ওসব রাজ্যের বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক অভিজাতরা উত্তর-পূর্বাংশের প্রয়োজন ও আকাক্সক্ষার প্রতি বরাবরই উদাসীন থেকেছেন। কেন্দ্রের পর্যায়ক্রমিক সরকারগুলো এ পশ্চাৎভূমির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি আনার জন্য আলোচ্য অঞ্চলের সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে কমই রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়েছে।
উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সহজীকরণে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিকে কখনই উপযোগী বলা চলে না। কৌশলগত অবস্থানের কারণে নিরাপত্তা ইস্যুর সঙ্গে কিছু বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহ কর্মকা- মিলিত হওয়ায় আলোচ্য অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন রাখতে ভারতীয় সরকার বাধ্য হয়। তবে সেসব দিন এখন অতীত। এখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৯২ সালে প্রণীত লুক ইস্ট পলিসিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভৌগোলিক নৈকট্য ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব প্রতিবেশী দেশগুলো যথাযথভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তখন থেকেই দক্ষিণপূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আলোচ্য অঞ্চলকে ভারতের গেটওয়ে বিবেচনা করা হয়।
সেই লক্ষ্য থেকে উত্তরপূর্ব ভারত ও মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কিছু অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সুতরাং এটাই বাংলাদেশ ও সেভেন সিস্টারসের মধ্যে পর্যটক যাতায়াত নিশ্চিতে সীমান্ত চৌকিগুলো উন্মুক্ত করা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উপযুক্ত সময়। এজন্য আমাদের প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার রাজনৈতিক অঙ্গীকার, যেমনটা আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরণ গগৈই বলেছেন, ‘আমরা কেবল সড়ক ও অবকাঠামোর সংযোগ চাই না… আমরা মনেরও সংযোগ চাই।’ পর্যটনের মাধ্যমে আমরা সেটা অর্জন করতে চাই।
লেখক : অধ্যাপক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়