বাজারে নতুন পেঁয়াজ, ক্রেতাদের স্বস্তি

বাজারে নতুন পেঁয়াজ, ক্রেতাদের স্বস্তি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ভারত সরকার সম্প্রতি পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে। এই খবর পাওয়া মাত্রই পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তোলে দেশের অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক দিন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে চার-পাঁচ দিনের অস্থিরতার পর নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। এতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজারে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা, কাওরান বাজার, শুক্রাবাদসহ আরও কয়েকটি কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভ্যানগাড়িতে বিভিন্ন মহল্লার অলি-গলিতে ফেরি করে এ পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে ধরণ ভেদে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১০০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাতাসহ মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নেমেছে ৬০ টাকা কেজিতে।

এদিকে দেশি পুরাতন পেঁয়াজ পাইকারি ১৩০ টাকা দরে আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা করে। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রকারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে।

উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মেসার্স জান্নাত ট্রেডার্সের মালিক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পুরাতন পেঁয়াজ বাজারে নেই বলেই চলে। বাজারে এখন নতুন পেঁয়াজের অভাব নেই। দামও তুলনামূলক কম। অধিকাংশ মানুষ নতুন পেঁয়াজ কিনছেন। দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন পেঁয়াজে বাজার ছেয়ে গেছে। আমদানি বাড়লে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে।’

দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বাড্ডায় একটি মেসে থাকেন সেলসম্যান রাকিব হাসান। তাদের প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিনই করতে হয়। রাকিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে আমাদের মেসের কেউ না কেউ বাজার করতে আসে। আমরা অল্প আয়ের মানুষ, যেখানে কম দামে পাই সেখান থেকে বাজার করি। বাজারে এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কম। হাফ কেজি নিয়েছি ৪৫ টাকায়।’

রাজধানীর শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারে নিয়মিত বাজারে করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আল-আমিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়া নতুন কিছু না। তবে হঠাৎ একটা পণ্যের দাম বেড়ে দিগুণ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক। আজ বাজারে নতুন পেয়াঁজটাই কম মনে হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ নিয়েছি ১৩০ টাকা করে। দেশি একদম নতুন পেঁয়াজ আরও কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের রবি মৌসুমে মোট দুই লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টরে এ বছর আবাদ করা হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় আট লাখ টন। দুই-তিন মাস দেশের বাজারে এ পেঁয়াজ থাকে। মার্চে হালি পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৮ লাখ টন। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সর্বশেষ অর্থবছরে ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।

এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয় সরকার। এছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা সরকারকে সহযোগিতা করেননি। বরং এ সময় তারা পণ্য হাতবদলের মাধ্যমে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে এ পণ্যে বাজার অস্থিতিশীল করেছেন। সরকার পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করছে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টানা না গেলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কষ্টসাধ্য হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *