অর্থনৈতিক প্রতিবেদক ● আসন্ন বাজেটে এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) আয়োজনে প্রাক-বাজেট আলোচনাসভায় তারা এ কথা বলেন। সভায় আসন্ন বাজেটে এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটনমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন তারা।
ব্যবসায়ীরা মত দেন, আসন্ন বাজেটে খাত দুটিকে গুরুত্ব দিলে দেশ আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন পর্যটনমন্ত্রী। পাশাপাশি পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড দেয়ার উদ্যোগের কথা জানান তিনি।
রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা এখনো এমন কিছু করতে পারিনি যে, সরকার পর্যটন খাতকে বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে গত কয়েক বছরে এ খাত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন এ খাতে প্রণোদনা প্রয়োজন। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। এভিয়েশন খাতে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করা প্রয়োজন। এ নিয়ে আমরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এছাড়া সারচার্জ ও ল্যান্ডিং চার্জ নিয়েও কাজ চলেছে। পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। আমরা বরাদ্দ ঠিক করি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়ের জন্য আটকে থাকে এমন ধারণাও ভুল। পর্যটন খাতে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব। তিনি এভিয়েশন খাতের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, ট্যাক্সের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পর্যটন খাতে প্রণোদনা দেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এ খাতে শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা দেয়া উচিত। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের পুরস্কৃত করাসহ সিআইপি ঘোষণার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা উৎসাহী হবেন।
আলোচনাসভায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা এখনো পর্যটন ও এভিয়েশন খাতে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে যেতে পারিনি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ খাতে ট্যাক্স হলিডেসহ আর্থিক প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী পর্যটন খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ সময়মতো ছাড় দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। প্রাক-বাজেট আলোচনায় নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে এয়ারলাইন্সগুলোর সমস্যার শেষ নেই। বিশেষ করে উড়োজাহাজের জ্বালানিমূল্য অনেক বেশি। অথচ পাশের দেশে আমাদের চেয়ে কম দামে জ্বালানি পাওয়া যায়। এ অতিরিক্ত দামের জন্য বিদেশী এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশী এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য সরকারের আরও বেশি সহায়তা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনাসভায় আসন্ন বাজেট উপলক্ষে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) দেয়া প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনটির পরিচালক ও প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল লিমিটেড (পিএটিএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— বৈদেশিক মুদ্র অর্জনকরী পর্যটন সংস্থাগুলোর জন্য করমুক্ত যানবাহন আমদানিতে অনুমোদন, টোয়াবের সদস্যদের বিশেষ বিবেচনায় ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর নিশ্চয়তা, ট্যুর অপারেটরদের সম্মানজনক হারে প্রণোদনা দেয়া এবং কারনেটের মাধ্যমে ক্রস বর্ডার ট্যুরিজম সেবার সুযোগ দেয়া।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু বাধা দূর করতে হবে। বাংলাদেশে ট্রানজিট যাত্রীদের ২১ ডলার ট্রানজিট ফি দিতে হয়। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে ট্রানজিট ফি দিতে হয় না।
এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের সভাপতি নাদিরা কিরণের সভাপতিত্বে গতকালের সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টোয়াবের সভাপতি তৌফিক উদ্দিন, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি এসএন মঞ্জুর মোর্শেদ, মহাসচিব আব্দুস সালাম, ভ্রমণ-বিষয়ক পাক্ষিক মনিটরের সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম ও এটিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক তানজিম আনোয়ার।