পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ইসলামে দেশপ্রেম আছে। আছে বিজয় উৎসবও। বিজয় ঘিরে আছে রাসূল সা.-এর মানবতা ও উদারতার শিক্ষা। মুসলিম উম্মাহ বিজয়ের চেতনা গ্রহণ করেছে রাসূল সা.-এর মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে।
আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। একটি আনন্দঘন দিন। এ দিন মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়। জন্ম হয় নতুন একটি দেশের। ১৯৭১ সালে এদিনে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বিশ্বের মানচিত্রে সগর্বে জায়গা করে নেয় মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে যারা জানমাল বাজি রেখে স্বদেশের জন্য, মানুষের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত ছিল- তাদের এ নৈতিক অধিকারকে ইসলাম সমর্থন করে সর্বতোভাবে।
হযরত রাসূল সা.ও ছিলেন স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব। তিনি মদিনাকে স্বাধীন করেছিলেন মুনাফিক চক্র এবং সুদখোর, চক্রান্তবাজ, ইহুদিদের কবল থেকে। মানবতার ধর্ম ইসলামে দেশকে ভালোবাসার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলামের নবী সা. মক্কার অমুসলিমদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে যখন মদিনায় যাচ্ছিলেন তখন মক্কার জন্য তাঁর মন কাঁদছিল দেশের জন্য, আনচান করছিল তাঁর মন ও মনন মাতৃভূমির বিয়োগে। যে মক্কার আলো-আঁধারিতে তাঁর বেড়ে ওঠা, যে পবিত্র ভূমির ধুলাবালুতে তাঁর শৈশব আর ছেলেবেলা, সেই পবিত্র মক্কা ছেড়ে যেতে ইচ্ছা হয়নি নবীজীর। তাঁর চোখ বেয়ে নেমে আসছিল তখন অশ্রুবন্যা। অশ্রুভরা চোখে নবীজী বলছিলেন, ওগো মক্কা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার বুকেই আমার বেড়ে ওঠা, তোমার কোলেই আমার পূর্বসূরিরা শুয়ে আছে। তোমার বুকেই আল্লাহর ঘর। মক্কার মুশরিকরা নির্যাতন করে আমাকে বের করে না দিলে আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। [ইবনে কাসির ৩,৪০৪]
মক্কার প্রতি নবীজীর আবেগ ও ভালোবাসার আরো জ্বলন্ত উদহারণ রয়েছে হাদিসে। নবীজী সা. মদিনা শরিফকে খুব ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে ফেরার পথে মদিনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজির চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠত এবং তিনি বলতেন, এই উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি।
সত্যিকারে দেশপ্রেম স্বদেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে, স্বদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মকৌশল উদ্ভাবনে আত্মনিয়োগ করার শিক্ষা দেয়। অতএব, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি স্বাধীনতা ও এই বিজয়কে অর্থবহ করতে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা, দেশকে কিছু দেওয়ার মনমানসিকতা তৈরি করা। সেই সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, সেসব শহীদের স্মরণ ও দোয়া করা।
তাদের স্মরণ ও দোয়া করতে হবে ইসলাম নির্দেশিত পন্থায়। যেমন কোরআনে কারিমের একটি সূরা হচ্ছে ‘আল ফাতহ’ অর্থ বিজয়। আরেকটি সূরার নাম ‘আন নাসর’ অর্থ মুক্তি ও সাহায্য। সূরা নাসরের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের বিজয় উৎসব করার নিয়ম বাতলে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কুনআন শরীফে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যখন আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন মানুষদের তুমি দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা কর এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর; অবশ্যই তিনি তওবা কবুলকারী।’ [সূরা নাসর: ১-৩]
বিজয়ের দিনে যারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, সেসব শহীদের জন্য দোয়া করা। সেই সঙ্গে তাদের শাহাদাত থেকে নতুন করে শপথ নেওয়া, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকার, বাতিলের কাছে মাথা নত না করার এবং অন্যের কাছে নিজের স্বাধীনতা বিকিয়ে না দেওয়ার। আমরা মুসলমান। তাই বিজয় উৎসব করতে গিয়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করেছেন, এটা আল্লাহর অপার অনুগ্রহ।
অষ্টম হিজরিতে রাসূল সা. মক্কা বিজয় করেন এবং মক্কার কুরাইশদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। নবী করিম সা. বিজয়ের দিন শোকরিয়াস্বরূপ আট রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন।
১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে আমরা নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করতে পারি। সেই সঙ্গে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত ও দান-খয়রাত ইত্যাদির মতো ভালো কিছু কাজ করতে পারি। যা যুদ্ধকালীন শহীদসহ অন্যদের উপকারে আসে, তাদের নাজাতের উসিলা হয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।