৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দফায় দফায় মেয়াদ বাড়লেও দীর্ঘ পাঁচ বছরে শেষ হয়নি ওয়েস্ট জোন এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পরিবর্তন শীর্ষক প্রকল্প। অথচ সঞ্চালন লাইনগুলোর সংস্কারের অভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ঘটছে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের মতো ঘটনা।
এমন পরিস্থিতিতে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় কমিয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিদ্যুৎ বিভাগ।
খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক। তবে সঞ্চালন লাইনগুলো এখনো পুরনো আমলের। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়ন জরুরি। তা ছাড়া সম্প্রতি দেশের বড় ধরনের গ্রিড বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে তারা সঞ্চালন লাইনের ব্যর্থতাকে দেখছেন।
২০১৭ সালের ১ জুলাই ‘ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়। সেই মেয়াদে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩০ জুন ২০২১ সালে। পরবর্তী সময়ে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় এক বছর, অর্থাৎ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন। সেই মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় এখন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রকল্পটি আগামী ৮ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অবগতির জন্য উত্থাপিত হওয়ার কথা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম মনে করেন, এখন সরকারের উচিত সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়ন করা। তিনি বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা দিতে সবচেয়ে জরুরি সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়ন। এ ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তায়ন করা উচিত। সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়ন করা গেলে সিস্টেম লস কমে যাবে। পাশাপাশি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গ্রিড বিপর্যয়ের মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ২৪৯ কোটি পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ১৫৫ কোটি ৭০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা কমিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ঢাকা, খুলনা ও বরিশালের মোট ২১ জেলার আওতায় দুই সিটি করপোরেশনসহ ৪১টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পটি বারবার কেন সংশোধন করা হচ্ছে এবং কেন সময়মতো কাজ শেষ করা যাচ্ছে না, এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০১৭ সালে পাস হলেও নানা কারণে কাজ শুরু করতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্রকল্পটির অগ্রগতি অনেক ভালো। আশা করি, এই বর্ধিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হলে ওই অঞ্চলের মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের ব্যয় কমছে। কারণ ঠিকাদারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তবে এতে প্রকল্পের কাজের কোনো ক্ষতি হবে না।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ সংশোধিত প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা (আরডিপি) বলছে, বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিতরণ লাইন ও ২০০-২৫০ কেভিএ ট্রান্সফরমার ঠিকাদার সময়মতো সরবরাহ করেনি। একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দেরি হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পর প্রকল্পের নির্মাণাধীন ভবনের নকশা, প্রাক্কলন ব্যয় ও দরপত্র দলিল যথাসময়ে দাখিল করেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইনস্যুলেট কেনায় দেরি হওয়ার কারণে প্রকল্পটি যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, চলতি বছরের ৩০ মে প্রকল্পটির (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) পিইসি সভা হয়। সভার দেওয়া সুপারিশ ও নির্দেশনার আলোকে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের পর প্রকল্প ব্যয় মোট ১৮ লাখ টাকা কমিয়ে পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। এরপর গত ১৬ জুন আরডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ৬ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পটির ব্যয় ১৫৫ কোটি টাকা কমিয়ে এক হাজার ৯৩ কোটি টাকায় অনুমোদন করেন।
কমিশন বলছে, প্রকল্পটির প্রথম প্রস্তাবে বিভিন্ন খাতের ব্যয়ের সঙ্গে থোক বরাদ্দ খুব বেশি উল্লেখ ছিল। প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এতে আপত্তি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি ‘থোক বরাদ্দ’ পরিহার করতে হবে।
পিইসির এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ব্যয় প্রাক্কলনের হিসাব মন্ত্রণালয়ের রেট শিডিউল-২০১৪ হিসেবে ধরা হয়েছে। ইজিপি প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত দর কম হওয়ায় কার্য ক্রয় খাতে পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকা কমানো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পণ্য কেনার কাজে ইজিপি প্রক্রিয়ায় ব্যয় কমেছে ৮২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
পিইসি সভায় বলা হয়, মেরামত, সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন এবং অফিস ভবন, অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামোগত পূর্ত কাজে প্রাক্কলিত ব্যয় পর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে।
জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, মেরামত, সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে। তবে অফিস ভবন খুব জরুরি হওয়ায় এ খাতের ব্যয় সংস্থান ব্যয়ের ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা থেকে ৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জ্বালানি, অফিস স্টেশনারি, মেরামত, সংরক্ষণ ও অফিস ভবন এবং অন্যান্য ভবন নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে। তবে টেলিফোন, ডাক, ব্যাংক চার্জ, পরিবহন, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে। এই ব্যয়গুলো সমন্বয় করেই আরডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে।