পাথেয় রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে আজ সকাল থেকেই। সারাদেশের মোট ২৯৯ টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। দিনব্যাপী এই ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে কি না এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পেরেছেন কি না তা জানতে সারাদেশের বিভিন্ন আসনের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছে পাথেয় টোয়েন্টিাফোর ডটকম।
ঢাকা মিরপুর-১৬ আসনের ভোটার রাশিদুল অালমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বরাবরের মতোই আমাদের এ আসনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটাররা সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। তাছাড়া আমাদের ভোটের এলাকা ‘সাংবাদিক পাড়া’ হিসেবে পরিচিত বলে এখানে কখনোই কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটে না।
মুন্সিগঞ্জ- ১ আসনের ভোটার আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, আমাদের এখানে কোন সহিংসতার ঘটনা আমরা শুনিনি। সকাল থেকেই সুষ্ঠভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সবাই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। তবে এখানে অবস্থা দেখে মনে হয়েছে এখানকার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহী বি চৌধুরীর পক্ষেই ভোটাররা বেশী ছিল।
এই নির্বাচনে তরুণদের আইকন খ্যাত শেখ আবু নাসের তস্ময় নিয়ে নতুন ভোটারদের মাঝে ছিলো সবচেয়ে বেশী আগ্রহ। বক্তৃতায় একমুখ সারল্য নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করেছিলেন আওয়ামীলীগের তরুণ এই প্রার্থী। তার আসন বাগেরহাট-২ থেকে আমাদেরকে জানিয়েছেন, নাঈম ইসলাম। ”বাগেরহাটে একচেটিয়া তন্ময়ের পক্ষে কাজ করেছে তরুণরা। ভোটকেন্দ্রেও আলাদা ভাবে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। সকাল থেকে বিকাল ৪টা অবধি বাগেরহাটের বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বিঘ্নেই ভোটাভুটি হয়েছে। ভোটের আগে শেখ তন্ময় বলেছিলেন, আমার আসনে বিরোধী প্রার্থীরাও যেন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পায়। সবাই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকেই যেন ভোট দিতে পারে। আজ বেশ ক’টি কেন্দ্র ঘুরে দেখে আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। সর্বত্রই ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ছিলো এবং সবাই নির্বিঘ্নেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।
সিলেট-১ আসন থেকে মুমতাজ চৌধুরী জানিয়েছেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলেছে। বেলার শুরুতেই তিনি নিজে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
এছাড়া ঢাকার বাড্ডা-১৭ আসন থেকে ইকরামুল হক,রামপুরা বনশ্রী-১১ আসন থেকে ওয়ালীউল্লাহ মাসুদ এবং চিটাগাং থেকে যাওয়াদ আলম জানিয়েছেন তারা নির্বিঘ্নেই ভোট দিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের কেন্দ্রই ভোটাররা কোন রকম সমস্যা ছাড়াই তাদের ভোট দিতে পেরেছেন। সর্বত্র উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিলো বলে তারা জানিয়েছেন।
তবে ভোলা-৩ আসন থেকে আবুল ফাতাহ জানিয়েছেন, এখানে একচেটিয়া আওয়ামীলীগের আধিপত্য ছিলো। দুপুরে এলাকার ত্রাস, সংখ্যালঘুদের আতংক বলে খ্যাত মেজর হাফিজ গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রের অবস্থা, সুষ্ঠ সুন্দর ছিলো। তারপর বিভিন্ন কেন্দ্রে কিছুটা গণ্ডগোল হবার পর শেষ অবধি ভালভাবেই ভোটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে আজ বগুড়া, কুমিল্লা, রাঙামাটি, নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলায় একজন করে নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম জেলায় দুই জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। কুমিল্লায় জামায়াত-বিএনপি কর্মীরা কেন্দ্র দখল করতে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে, এতে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর একজন বিএনপি কর্মী নিহত হয়। অন্যান্য স্থানে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এছাড়া দেশের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণ ভোট দিয়েছেন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমানদের দীর্ঘ সারি দেখা গিয়েছে।
তবে এরপরও গুজব নির্বাচনের পিছু ছাড়েনি। বাস্তব অভিজ্ঞতা শান্তিপূর্ণ হলেও অনেকেই লোকমুখে শুনছে গোলযোগের কথা। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন হওয়ায় এসবকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশের মানুষকে এসব গুজবে কান দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে দেশের জনপ্রিয় একজন ম্যাজিস্ট্রেট তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘আজ সবাইর কান খুব সচল, চোখ একদম অচল। সবাই কেবল শোনে, কেউ দেখে না’।
এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলগুলো ভোটগ্রহণের বিষয়ে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের পর এখন দেশের মানুষ কাংখিত ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।