মওদুদীবাদ; গোমরাহীর আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত যে মতবাদ      

 মওদুদীবাদ; গোমরাহীর আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত যে মতবাদ     

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

বাতিল ফেরকা বা গোমরাহিতে নিমজ্জিত সম্প্রদায় মওদুদীবাদ ওরা চিরদিন বাতিল হিসাবেই থাকবে। তারা তাওবা করে গোমরাহি থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আলেম সমাজ কোনদিন তাদেরকে মেনে নিবে না। তাদের ভ্রান্ত চিন্তা- চেতনার কারণে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত রবে চিরকাল। যতই হকের ছদ্মাবরণে তাদের আগমন হোক না কেন, আকিদা- বিশ্বাস শুদ্ধ না হলে তারা বাতিল বলেই সাব্যস্ত হবে।

কওমী মাদ্রাসাতে বাতিল সস্প্রদায়ের মুখোশ উম্মোচন করা হয় সবসময়। ইবতেদায়ী থেকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত সকল জামাতের ক্লাসে উস্তাদগণ ছাত্রদেরকে বাতিল ফেরকার ব্যাপারে সতর্ক করে থাকেন। কেননা কওমী মাদরাসা শুধু লেখাপড়া শিখে  চাকরী করে খাওয়ার নাম নয়। মাদরাসা নামের আরেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, লেখাপড়া  শিখে চাকুরী করে খাওয়া যাদের উদ্দেশ্য। নিজেদের সিলেবাসে হিন্দুত্ববাদ এর শিক্ষা থাকলেও তারা নিরব। বোম মারলেও এ ব্যাপারে কোন কথা তাদের মুখ থেকে বের হয়না।

নিজেদের সিলেবাসে হিন্দুত্ববাদ এর শিক্ষা থাকলেও তারা নিরব। বোম মারলেও এ ব্যাপারে কোন কথা তাদের মুখ থেকে বের হয়না।

পক্ষান্তরে কওমী মাদ্রাসা এর ব্যতিক্রম। তারা বাতিল ফেরকার মুখোশ উম্মোচনকারী এবং হক- হক্কানিয়্যাতের কেতনধারী এক দুর্বার কাফেলা। যারা বাতিল ফেরকার বিরুদ্ধে একটা তাহরিক বা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। যেমন কওমীর গোড়া দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এমনই এক তাহরিক গড়ে তোলার জন্য।  মুলত, তালিমের পাশাপাশি ছাত্রদের বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা। সমাজে যতপ্রকার বাতিল ফেরকার আভির্ভাব হয়েছে সকল ফেতনার মুলোৎপাটনের চিন্তা- চেতনা তালিবুল ইলমের মাঝে জাগিয়ে তোলা। এমনই এক ইজমকে সামনে রেখে দারুল উলুম দেওবন্দের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

আরও পড়ুনমওদুদীবাদীরা দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোর প্রতি বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে 

দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি সামনে রেখে এদেশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসা। যেসকল প্রতিষ্ঠান দেওবন্দকেই অনুসরণ- অনুকরণ করে  থাকে।

তালিমের ক্ষেত্রে যেমন দেওবন্দকে অনুসরণ করে তেমনি চিন্তাধারার ক্ষেত্রেও  দারুল উলুমের অনুগামী। যে কারণে দেখা যায়, দারুল উলুমের ফাজেলগণ দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুক না কেন তারা বাতিল ফেরকার ব্যাপারে কঠোর। আজ পর্যন্ত  দেওবন্দের এমন কোন সন্তান পাওয়া যাবেনা যারা ফেরাকে বাতেলার সাথে আপোস করেছে, এমন কোন দেওবন্দী আলেমের দেখা মিলবেনা যিনি ফেরাকে বাতেলার ব্যাপারে নমনীয়। বরং দেওবন্দী আলেমগণ বাতিলের ব্যাপারে সতর্ক। বাতিল যে সুরতেই আভির্ভাব হোক না কেন তারা সেটার স্বরূপ চিনতে সক্ষম।

দেওবন্দী আলেমগণ বাতিলের ব্যাপারে সতর্ক। বাতিল যে সুরতেই আভির্ভাব হোক না কেন তারা সেটার স্বরূপ চিনতে সক্ষম।

দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোতে ফেরাকে বাতেলার সাথে মোকাবেলা করার জন্য বিস্তর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিটি বাতিল ফেরকার আদ্যপান্ত জেনে তাদের বিভ্রান্তিকর আকিদা বিশ্বাস সম্পর্কে ছাত্রদের জ্ঞান দেওয়া হয়। কোন কিছু অনুমানের ভিত্তিতে  নয়। বরং সবকিছু দালিলিক। দলিল প্রমাণসহ শিক্ষার্থীদের রপ্ত করানো হয়। এ বিষয়ে কওমীর সিলেবাসে পাঠ্যপুস্তকও রয়েছে। আকায়েদ এর কিতাব, ফেরাকে বাতেলা সস্পর্কে কিতাব, যেটা ক্লাশে একজন যোগ্য উস্তাদের মাধ্যমে পড়ানো হয়। শুধু এখানেই শেষ নয়। বরং পরীক্ষার সময় ওই ফেরাকে বাতেলা সম্পর্কিত বইয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে।

এজন্য হইচই করার কিছু নেই। কওমীর প্রশ্নপত্রে যদি মওদুদীমতবাদের ব্যাপারে  কোন প্রশ্ন এসে থাকে, তাহলে সেটাই স্বাভাবিক। বরং এটা তো কওমীর পাঠ্যসূচী তথা সিলেবাসের অংশ। কওমীর মাদ্রাসার গোড়াপত্তন তো ওইসকল বাতিল ফেরকার মুলোৎপাটন করার জন্য। হক – হক্কানিয়্যাত প্রতিষ্ঠার মানসে ফেরাকে বাতেলার  অবসান ঘটানো এই দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোর বৈশিষ্ট।

হক – হক্কানিয়্যাত প্রতিষ্ঠার মানসে ফেরাকে বাতেলার  অবসান ঘটানো এই দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোর বৈশিষ্ট।

তবে অনেকে দেওবন্দী হালকাতে লালন- পালন হওয়ার পরেও বাতিল ফেরকার ব্যাপারে নমনীয়। কেউ কেউ সংগোপনে তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেন, কেউ তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্হাপন করে থাকেন। তাহলে মনে রাখতে হবে, ওরা দেওবন্দী মাসলাক- মাশরাব থেকে ছিটকে পড়েছেন, নামে এখন দেওবন্দী কার্যত তারা দেওবন্দ তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সাথে নেই। বরং তারা বাতিল ফেরকার পদলেহী।

আরও পড়ুনমওদুদীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ঈমানি দায়িত্ব : আল্লামা মাসঊদ

এজন্য ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’ কে ধন্যবাদ জানাতে হয়। বর্তমান দেশ ও জাতির চাহিদা এবং শিক্ষার্থীদের সজাগ করার জন্য বাতিল ফেরকা সম্পর্কে পুস্তক পাঠ্যসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে। সেই সাথে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও মওদুদীবাদ ও কাদিয়ানী ফেরাকে বাতেলা সম্পর্কে প্রশ্ন রেখে তালেবুল ইলমদের সজাগ করছেন, এটা সময়ের দাবী। কেননা বিভিন্ন জায়গাতে দেখা যায় বাতিল ফেরকা সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার কারণে অনেক আলেম বাতিলের সাথে সখ্য রাখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। কোথাও কোথাও তো হক আর বাতিল মিলে একাকার। এজন্য শিক্ষাবোর্ড এ এমন প্রশ্ন আসলে শিক্ষার্থীগণ বাতিল ফেরকা নিয়ে ব্যাপক পড়াশুনা করবে এবং বাতিলের ব্যাপারে সজাগ থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা সকলকে বাতিল ফেরকা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। আমিন।

 লেখক,  শিক্ষক ও বিশ্লেষ

বেরিয়ে আসছে মওদুদীবাদীদের আসল চেহারা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *