মদ্যপানে বছরে মারা যায় ২৮ লাখ মানুষ (দ্বিতীয় পর্ব)

মদ্যপানে বছরে মারা যায় ২৮ লাখ মানুষ (দ্বিতীয় পর্ব)

মদ্যপানে বছরে মারা যায় ২৮ লাখ মানুষ

শাহ আলম বাদশা : মদ সরাসরি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, উচ্চরক্তচাপ বাড়ায়, যা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। গবেষকরা বলছেন, মদের কোনো গ্রহণযোগ্য মাত্রা নেই। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি মানুষের ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটি ঘটে মদের কারণে। এই সংখ্যা বিশ্বের মোট মৃত্যুর ২০ শতাংশ। নিয়মিত মদ্যপান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মদে অভ্যস্ত মানুষ সহিংস হয় এবং অনেকসময় মদ্যপানের কারণে নিজেই নিজের ক্ষতি করে। যে কোনো পরিমাণ মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

যুক্তরাজ্যের প্রতি ১৩ জনে ১ জনের স্তনক্যান্সার হয় মদ্যপানজনিত কারণে। বিশ্বের পঞ্চাশোর্ধ নারীদের মধ্যে ২৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশের ক্যান্সারে মৃত্যু হয় মদ্যপানের অভ্যাসের কারণে। আর মদ্যপানের কারণে বিশ্বে যক্ষায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ, সড়ক দুর্ঘটনায়

১ দশমিক ২ শতাংশ এবং নিজ দেহের ক্ষতির মাধ্যমে মৃত্যু হয় ১ শতাংশ তরুণের। ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মদ্যপানে আসক্ত, যার প্রায় ২৫ শতাংশই নারী।

২০১৭ সালে গর্ভবতী নারীদের মদ্যপান এবং গর্ভের শিশুর মধ্যে এর প্রভাব নিয়ে বৈশ্বিক গবেষণা পরিচালনা করেছিল। কানাডার সেন্টার ফর অ্যাডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ। সেখানে উঠে এসেছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। যেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে গর্ভধারণকালে ২ শতাংশেরও বেশি নারী মদ বা মদজাতীয় পানীয় পান করেন। একারণে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ৩টি শিশুর জন্ম হচ্ছে মদের প্রভাবজনিত নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে। গর্ভাবস্থায় মদ খান, এমন ৬৭ জনের মধ্যে একজন মা এরকম প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম দেন। মদের প্রভাবজনিত এই শারীরিক ও মানসিক সমস্যাকে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ফিটাল অ্যালকোহল সিনড্রোম’ বা ‘ফাস’। সারাবিশ্বে ৯ দশমিক
৮ শতাংশ মা গর্ভাবস্থায় মদ খান। জন্ম নেয়াা প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ১৪ দশমিক ৬টি শিশু ‘ফাস’ নিয়ে জন্মায়।

গর্ভাবস্থায় মদ খাওয়ার ফলে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে প্রতিবন্ধিতা নিয়ে প্রায় ১৬টি শিশুর জন্ম হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শিশুর শারীরিক বিকাশ। এর ফলে মস্তিষ্কেও সমস্যা দেখা দিতে পারে, মুখ অবয়বে বিকৃতি দেখা দিতে পারে, বোধবুদ্ধি-আবেগে ঘাটতি দেখা দেয়াও অস্বাভাবিক নয়। এ পরিস্থিতিতে জন্ম নেয়া শিশুদের পরিণত বয়সে একইসাথে একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

একজন মা মাদকাসক্ত হলে তাঁর অনাগত সন্তানের জীবন বিপর্যয় হবে। কাজেই নারী মদ্যপান পরিহার করা উচিৎ। শুধু নারীরই নয় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মদ্যপান পরিহার করা জরুরি। মদ্যপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বময় সচেতনতা প্রয়োজন। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। মিডিয়াসহ শিক্ষিত সকলের দায়িত্ব মদ্যপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। আমাদের হাতে এখনো সময় আছে। মহামারি আকারে মদ্যপানের অভ্যাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট ও সমাজ বিশ্লেষক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *