মানবতা | ওয়ালীউল্লাহ মাকনুন
রোজার আগ থেকেই প্রচণ্ড গরম। রোজাতেও গরম কমার কোনো লক্ষণ নেই। সকালে সূর্যটাই দুপুরের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে দেখা দেয়, দুপুরের তাপের কথা তো বলাই বাহুল্য।
দ্বিতীয় রোজার দিন প্রচণ্ড তাপকে উপেক্ষা করে রিমা তার বড় বোন রিনার বাসা থেকে সকাল ৭.৪৫ এরদিকে বের হয় ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। বড় বোন রিনার বাসা ইস্কাটনের সার্কিট হাউজে। রিমা বাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটেই শাহবাগ মোড় পর্যন্ত চলে আসে। সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্সের শিক্ষার্থী।
শাহবাগ মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও বাস পেল না রিমা। ৯টায় তার ক্লাস, ৯টার আগেই তাকে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে পৌছতে হবে। সে আর বাসের জন্য অপেক্ষা না করে রিক্সায় করে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে। এমন সময় রিমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধা মহিলা তাকে জিজ্ঞাসা করলো, সদরঘাটের বাস কোন হান দিয়া আহে?
রিমা এক দিকে হাতে ইশারা করে দেখিয়ে বললো, ঐ দিক দিয়ে আসে।
রিমা বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কি সদরঘাট যাবেন?
বৃদ্ধা বললো, হ মা সদরঘাট যামু।
রিমা রিক্সা ভাড়া করলো শাহবাগ থেকে জগন্নাথ পর্যন্ত ১০০ টাকায়। তারপর সে রিক্সায় উঠে বৃদ্ধা মহিলাকে বললো, খালা রিক্সায় উঠে বসুন। আমিও ঐ দিকেই যাবো।
বৃদ্ধা বললেন, মারে আমার লগে তো অতো ট্যাহা নেই, আমি রিক্সা ভাড়া দিমু কইত্তে।
রিমা বললো, খালা আপনাকে ভাড়া দিতে হবে না, আপনি রিক্সায় উঠুন।
স্বার্থপরতার এই শহরে রিমার নিঃস্বার্থ মানবতা আর তার আচরণ দেখে মহিলাটি খুব খুশি হোন এবং রিমার পাশে রিক্সায় উঠে বসেন।
রিমা আর বৃদ্ধাকে নিয়ে রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালাতে থাকে শাহবাগ থেকে জগন্নাথ দিকে, ভার্সিটির সামনে আসার পর রিমা রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিল।
তারপর রিমা রিক্সাওয়ালাকে বললো, চাচা! ইকটু কষ্ট করে মুরুব্বীকে সদরঘাট নামিয়ে দিয়েন।
রিক্সাওয়ালা বললো, আপু! তাহলে তো আরো বিশ টাকা দিতে হবে।
সে আরো বিশ টাকা দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে বললো, চাচা! সদরঘাট গিয়ে উনি যেখানে নামতে চান, সেখানে নামিয়ে দিয়েন।
বৃদ্ধা রিমার আচার ব্যবহারে মুগ্ধ হন এবং তার জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে কল্যাণ কামনা করেন।
তারপর রিক্সা চলতে লাগলো বৃদ্ধাকে তার আপন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে …