মারাত্মক ডেঙ্গু ঝুঁকিতে পথশিশুরা

মারাত্মক ডেঙ্গু ঝুঁকিতে পথশিশুরা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রচণ্ড গরমের পর বর্ষা আশীর্বাদ হয়ে এলেও কারো কারো জন্য নিয়ে আসে অভিশাপ। কারণ, বর্ষার সময় মশার উপদ্রব বাড়ে কয়েকগুণ। সঙ্গে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ২,১৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ১,৪৭৯ জন।

দেশের সবচেয়ে জনবহুল নগরীর বদ্ধ জলাশয় এবং জমে থাকা পানি মশার জন্মস্থল। জনবহুল ঢাকার পথশিশুরা মশাবাহিত রোগের মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে। প্রাণঘাতী এই রোগ নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন সচেতনতা দেখা যায়নি।

এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় মোনাশ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি এবং প্রভাব উভয়ই প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বেশি।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বেশিরভাগই খোলা জায়গায় বসবাস ও বিচরণের কারণে ডেঙ্গুর ঝুঁকি তাদের মারাত্মক। কয়েকজন পথশিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন নয়। আবার, মশা কামড়ালে অসুখ হতে পারে জানলেও তারা নিরুপায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, মোহাম্মদপুর ও ধানমণ্ডি এলাকায় নিয়মিত বিচরণ বেশকিছু শিশুর। বেলুন, ফুল ইত্যাদি বিক্রি করে পেট চালানো এসব শিশুর সঙ্গে কথা হয় ডেঙ্গু নিয়ে। দিনরাত পথেঘাটে ঘুরে বেড়ানো এসব শিশু মারাত্মক রোগটির সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকে। তবে এ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই তাদের। সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এর মূল কারণ।

১০ বছর বয়সী মারিয়ার বাসা ঘনবসতিপূর্ণ শনির আখড়ায়। মারিয়া বলে, “আমরা বস্তিতে থাক। আমাদের মশারি নাই, তাই টাঙানোও হয় না। রাতে মশা বেশি ধরে। মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় শুনেছি। কিন্তু আমার কখনো হয়নি। শুনেছি এ অসুখে মানুষ মারা যায়।”

১২ বছর বয়সী নুরজাহান বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে মিরপুরে। ফুলবিক্রেতা এই কিশোরীর ভাষ্য, “ডেঙ্গু তো অনেকেরই হয়, কিন্তু আমার হয় নাই। ডেঙ্গুতে মনে হয় আমার কিছু হবে না। কারণ এর আগে আমার জ্বর হয়ে সেরেও গেছে। ডেঙ্গুতেও তো জ্বর হয়।”

ছয় বছর বয়সী ফারিয়ার ভাষ্য, “মশা কামড় দিলে অসুখ হয় সেটা জানি। কিন্তু আমার কখনো হয় নাই। আমাদের বাসায় মশারি আছে তবে টানাই না। রাতে অনেক মশা ধরে।”

এমনই একজন ৯ বছর বয়সী ইয়ামিন। ধানমন্ডি লেক এলাকায় তাকে দেখা যায় ভিক্ষা করতে। ইয়ামিনের ভাষ্য, “আমি ধানমন্ডি লেক এলাকায় মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা চাই। লেকেই গোসল করি। তবে সন্ধ্যার দিকে বেশি মশা থাকায় লেকের পানিতে নামি না।”

জিগাতলা বাস স্ট্যান্ডে ফুলবিক্রেতা বিথি (৯) জানায়, “মাঝে মাঝে জ্বর আসে। তবে পাত্তা দেই না। ডেঙ্গু হলে কী হয় আমি জানি না।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অত্যাধিক বৃষ্টিপাত, জলাবদ্ধতা, বন্যা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডক্টরি ডিজিটাল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা খাতুন বলেন, “মশাবাহিত রোগ বিশেষ করে ডেঙ্গু শিশুদের জন্য খুবই মারাত্মক। কারণ তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। ডেঙ্গু হলে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়, যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ আরও ভয়ানক।”

এই চিকিৎসক বলেন, “বর্ষা মৌসুমে বাসায় থাকা শিশুরাই তো মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিতে থাকে। পথশিশুদের জন্য এই ঝুঁকির মাত্রা অতিরিক্ত।”

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে ডা. আনোয়ারার পরামর্শ, “মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হলে শিশুদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। এ সময় স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খাওয়ালে তারা দ্রুত সেরে উঠবে।”

মশাবাহিত রোগ থেকে পথশিশুদের রক্ষায় সমাজের মানবিক ও সামর্থ্যবান মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *