মালয়েশিয়ার ত্রাণ পেল আরও ৩৫০০ রোহিঙ্গা

মালয়েশিয়ার ত্রাণ পেল আরও ৩৫০০ রোহিঙ্গা

কক্সবাজার প্রতিনিধি  ● মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরও ৬০০ পরিবারকে মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, মাছ, দুধ, চাসহ ১৩ ধরনের সামগ্রী। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন উখিয়া ও টেকনাফের পৃথক দুটি শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ করেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি ‘নটিক্যাল আলিয়া’ নামে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে ত্রাণসামগ্রী খালাস করে। এরপর ১ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী সড়কপথে উখিয়ায় আনা হয়। প্রথম দফায় ১৫ ফেব্রুয়ারি উখিয়া ও টেকনাফের পৃথক তিনটি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের ৫০টি পরিবার করে ১৫০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণবিতরণ করে মালয়েশিয়া থেকে আসা ২৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে রাখাইন রাজ্য থেকে সদ্য আসা ৩০০ পরিবার এবং দুপুরে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের ৩০০ পরিবারের মধ্যে ১৬ প্রকারের ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এসব পরিবারের সদস্যসংখ্যা অন্তত সাড়ে তিন হাজার। অন্য সামগ্রীগুলোও পর্যায়ক্রমে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ১৫ হাজার পরিবারে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।

জেলা প্রশাসক বলেন, ত্রাণ বিতরণে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি না হয়, সেজন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল ইসলাম মজুমদারকে প্রধান করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কমিটি করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির পর কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী পেয়ে মহাখুশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আমতলী গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সাজেদা বেগম (৩৫)। গত ডিসেম্বর মাসে সেখানকার সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে তিনি পরিবারের সাতজন সদস্য নিয়ে পালিয়ে আসেন টেকনাফ। এরপর আশ্রয় নেন টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে। গত দুই মাসে তিনি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পায়নি।

সাজেদা বেগম বলেন, তিনি চাল, ডাল, চিনি, আটা, ময়দা, দুধ, চা, মাছ, সাবান, তরকারিসহ ১৬ প্রকারের ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন; যা দিয়ে তাঁর দুই মাস চলে যাবে।

আয়েশা বেগম (৫৫) নামের আরেক রোহিঙ্গা নারী বলেন, অনেক দিন পর ত্রাণসামগ্রী হাতে পেলাম। আশা করি, কিছুদিন ভালোমতো চলতে পারব। একই কথা বলেন রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা দিলদার বেগম।

দিলদার বেগম ( ৩৪) বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের গজরবিল গ্রামে সেখানকার সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে তার স্বামীকে। এরপর তিনি চার ছেলেমেয়ে নিয়ে টেকনাফ পালিয়ে আসেন। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দিলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

সকাল ১০টায় উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের ৩০০ পরিবারে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক।

গত ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যের তিনটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় তিন পুলিশসহ ১৮ ব্যক্তি নিহত হয়। এরপর সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী। সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও দমন-পীড়নের মুখে গত চার মাসে রাখাইন রাজ্য থেকে অন্তত ৯০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসেন টেকনাফ ও উখিয়ায়। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাস্বরূপ মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী এই জাহাজের আগমন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *