মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদানের কথা আলোচনায় আসুক
মাওলানা আমিনুল ইসলাম :: গত শুক্রবারে ফরিদপুর শহরে জুময়ার নামাজ আদায় করলাম। ঠিক বয়ানের সময় মসজিদে উপস্থিত থেকেছি। অনেকদিন পর কোন মসজিদে ইমাম সাহেবের মুখে বয়ান শুনলাম। কেননা, প্রতি জুময়া ইমামতি করতে হয়, এ কারণে অন্য কোন ইমাম সাহেবের বয়ান শোনা হয় না। সেদিন ফরিদপুর শহরে একটা প্রোগ্রাম ছিল। তাই নামাজের অনেক আগে মসজিদে প্রবেশ করলাম। একদম ইমামের কাছাকাছি। ইমাম সাহেবের মুখ থেকে সরাসরি বয়ান শুনলাম।
ইমাম সাহেব একজন বিজ্ঞ আলেম। একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। নিয়মিত পড়াশোনা করেন বলে মনে হল।
তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বিজয় দিবস নিয়ে চমৎকার আলোচনা করলেন। বড় ভাল লাগল আলোচনাগুলো। অনেকের কাছে পছন্দ হল তাঁর মুল্যবান আলোচনা। মুসল্লিদের হৃদয় ভরে গেল তাঁর কথা গুলো। এরকম কিন্তু সব জায়গায় আলোচনা হয় না। আমাদের কোন আলেম মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস নিয়ে আলোচনা করেন না। এই যে ওয়াজ মাহফিলের সিজন। কোন ওয়াজ মাহফিলে শোনা যায় না, মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় দিবস নিয়ে আলোচনা হতে।
দেখুন! যারা কোনদিন মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তারাই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মানুষের সমর্থন আদায় করে নিচ্ছে। মানুষ মনে করছে, ওরাই মনে হয় সবচেয়ে বড় দেশ প্রেমিক। অথচ আলেম সমাজের কত মানুষ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে শরীক হয়েছিল। কত আলেম শহীদ হয়েছিলেন। কত আলেম এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জীবিত রয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোন আলোচনা নেই তাদের নিয়ে। কোন মসজিদে, কোন মাহফিলে, কোন সেমিনারেও সে সব আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের কথা উঠে আসে না।
আমরা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কথা আলোচনা না করতে করতে সাধারণ মানুষ আলেমদেরকে ঐ ওদের অন্তর্ভুক্ত মনে করছে। যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরোধীতায় লিপ্ত ছিল, তাদের বন্ধু মনে করা হচ্ছে আলেমদের।
অন্তত বিজয়ের এই মাসে, এমনি ভাবে স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযুদ্ধের কথা, মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদানের কথা মানুষকে জানানো উচিত।
দেশ প্রেম, দেশের ভালবাসা তো ঈমানের অঙ্গ। ” হুব্বুল ওয়াতান” দেশের প্রতি ভালবাসা। বিজয় দিবস নিয়ে ইসলামে কি বলে? দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের মর্যাদা, ইত্যাদী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ওলামায়ে কেরামের মুখ থেকে অনেক মুল্যবান নসিহত শুনে মানুষ ধন্য হবে বলে আশাকরি।
আরেকটা বিষয়, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৮ বছর। একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ আমাদের। দেশের ইঞ্চি ইঞ্চি মাটির সাথে আমাদের প্রেম- ভালবাসা মিশে আছে।
কিন্তু কিছু ভায়ের এখনও পুরানো অভ্যাস বাকি রয়েছে। এখনো যেন প্রেম জন্মায়নি। তাদের কাজে- কর্মে, লিখনীতে, বক্তৃতায়, এখন সেই ভিন দেশের টান। এখনো পুরানো গীত গাইতে ভালবাসেন। তাদের বলছি, দেশ এখন স্বাধীন। পুরানো গীত গাওয়া ছাড়তে হবে। একদম দেশ প্রেমে মগ্ন হতে হবে। এমন কোন কাজ করা যাবেনা, যা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের খেলাফ।
দেশের ভাব মুর্তি ক্ষুণ্ন হয়, দেশের মান- মর্যাদার হানি হয়, এরকম কথা, কাজ কে না বলতে হবে সব সময়। দেশের কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে হবে আমাদের। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক