মুচকি হাসি | ওয়ালিউল্লাহ মাকনুন

মুচকি হাসি | ওয়ালিউল্লাহ মাকনুন

মুচকি হাসি | ওয়ালিউল্লাহ মাকনুন

আবুল হোটেলের পাশের বাসস্টপে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে আশরাফ। বাংলামোটরে তার বোনের বাসায় যাবে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যাত্রী ভরতি একটি বাস আবুল হোটেলে হাজির হলো। দু’একজন যাত্রী নামল। তারপর এই যাত্রী ভরতি বাসেই উঠে পড়লো আশরাফ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই যেতে হলো চৌধুরীপাড়া থেকে মৌচাক পর্যন্ত।

মৌচাক স্টপে যাত্রীদের নামার সুবিধার্থে নেমে দাঁড়াল সে। অতপর বাসে উঠে দেখতে পেল পিছনের কয়েকটি সিট ফাঁকা। আশরাফ সুযোগ পেয়ে বসার জন্য যখন পা বাড়ালো তখনই এক ভদ্রলোক তার পথ আগলে দাঁড়িয়ে বললো, হুজুর, মহিলা আছে! সিটে বসতে সুযোগ দিন। আশরাফ ভদ্রতার খাতিরে মেয়েটিকে যাওয়ার সুযোগ করে দিল। সাথে সাথে লোকটিও গেলো।মেয়েটি জানালার পাশে বসলো। লোকটি মেয়েটির একেবারে গা ঘেঁষে বসলো। দেখে যে কেউ মনে করবে তারা যেন ‘বাবা-মেয়ে’।

আশরাফ সিট পেল না। নিরুপায় হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো, ছয়জনের সিটে পাঁচজন বসে আছে। সে বসার অনুরোধ জানালে যাত্রীরা চেপে চেপে বসে তাকে বসতে দিল। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বসতে পেরে আশরাফ কিছুটা স্বস্তিবোধ করছে। এদিকে চাপাচাপি করে বসার কারণে লোকটির শরীর যুবতী মেয়েটির শরীরের সাথে একদম লেগে আছে।

কিছুক্ষণ পর কন্ট্রাকটর এলো ভাড়া নেওয়ার জন্য। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভাড়া পরিশোধ করলো। জানালার পাশের যুবতী মেয়েটিও ভাড়া পরিশোধের জন্য টাকা বের করলো। এই সময় পাশে বসা ভদ্রলোকটি মেয়েটিকে বাঁধা দিয়ে বললো, আমি তোমার ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি! মেয়েটি অনেক চেষ্টা করলো নিজের ভাড়া দেওয়ার জন্য। কিন্তু নাছোড়বান্দা বাপের বয়সী ভদ্রলোকটি অনেক পীড়াপীড়ি করে মেয়েটির ভাড়া দিয়ে দিলো।

– মেয়েটি কিছুটা হতবম্ব হয়ে বিরক্তির স্বরে বললো, আরে, আপনি আমার ভাড়া দিয়ে দিচ্ছেন কেন?

– ভদ্র লোকটি কোন উত্তর দিলো না।

আশরাফ এতক্ষণ ভেবেছিলো তারা দুজন হয়তো বাবা মেয়ে। তাই, কোন কথা বলছিল না। আশপাশের যাত্রীরাও এমনটিই ভেবে চুপ ছিল। সে লক্ষ করলো, ছয় সিটে ছয়জন বসার দরুণ বয়স্ক লোকটি মেয়েটির শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে বসে আছে। এবং কিছুক্ষণ পরপর তার হাত উপরে তুলে সামনের সিটে রাখছে। একবার নিচে নামাচ্ছে, আবার উপরে তুলছে। এ করণে মেয়েটি খুব বিরক্তিবোধ করছে। বুড়ো লোকটির এ কাণ্ড তার খুব অসহ্য লাগছে।

ব্যাপারটি আশরাফের নজরে পরার সঙ্গে সঙ্গেই সে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার পাশের লোকটিকে নিজের সিটে বসায়। তারপর বুড়োকে সরে বসতে বলে। বুড়ো লোকটি বলল, কোন সমস্যা নেই। অতঃপর আশরাফ শান্তভাবে বুড়োকে বলল, আপনার কারণে মেয়েটির খুব অসুবিধে হচ্ছে। আপনি তার থেকে সরে বসুন। একথার পর কিছুটা সরে বসলেন তিনি। মেয়েটি বুড়োর যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেয়ে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আশরাফের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *