২৬শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ৩রা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : যত্রতত্র ‘বিসমিল্লাহ’ বলা কোনো ইসলামী পদ্ধতি নয় বলে জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) ইকরা ঝিল মসজিদ কমপ্লেক্সে জুমার বয়ানে তিনি এ কথা বলেন।
সুনির্দিষ্ট মাকসাদের উপর মৃত্যু হলে মুমিনের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় উল্লেখ করে ফিদায়ে মিল্লাতের এই খলীফা বলেন, একজন মুমিনের জিন্দেগী একটা সুনির্দিষ্ট মাকসাদ ও উদ্দেশ্যের উপর, একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির উপর চলে। তার জীবন পদ্ধতি খামখেয়ালির নয়। তার মৃত্যু কোন পশুপাখির মৃত্যু নয়। মুমিনের মৃত্যুও হয় একটা মাকসাদের উপর। যখন সুনির্দিষ্ট মাকসাদের উপর তার মৃত্যু হয় তখন আল্লাহ তাআলা তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। তার জন্য জাহান্নামকে হারাম করেন, জান্নাতকে ওয়াজিব করেন।
ফুটবল খেলা দেখে মানুষ ফজরের নামাজ কাযা করছে জানিয়ে শাইখুল ইসলাম বলেন, বর্তমান যুগে আশ্চর্য হচ্ছি, কোথায় ফুটবল খেলা হচ্ছে আর আমরা সেটা নিয়ে কথা কাটাকাটি করে মারা যাচ্ছি! এ মৃত্যুর কোনো মাকসাদ নেই।
“ফুটবল জিনিষটা এমন নয়; যদি দুনিয়াতে এটা না থাকে তাহলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। এটা জীবনের জরুরী কোনো বিষয় নয়। হাওয়া জরুরী, খাবার জরুরী, বাসস্থান জরুরী জিনিস। কিন্তু ফুটবল কোনো জরুরী জিনিস নয়। আফসোস! সারা রাত ফুটবল খেলা দেখে আজ মানুষ ফজরের নামাজ কাযা করছে।”
আরও পড়ুন : ‘শান্তির ফতওয়া’ প্রকাশের পর দেশে জঙ্গিবাদের দৃশ্যপট চেঞ্জ হওয়া শুরু হয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, ক্রিকেট এমন কোনো খেলা না, যেটা না থাকলে পৃথিবী বাঁচবে না। ক্রিকেট খেলা মানে ঢিল ছোড়াছুড়ি। এই ঢিল ছোড়াছুড়িকে কেন্দ্র করে মানুষ তার সময়, স্বাস্থ্য, টাকা, পরিশ্রম, ঘুম ব্যয় করছে। কেউ মানুষকে তার মাকসাদ স্বরণ করিয়ে দিচ্ছে না। ‘এটা তোমার মাকসাদ নয়’ —এই কথাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মতো মানুষের আজকে অভাব রয়েছে। বরং সবাই এটাকে নিয়ে মারামারি কাটাকাটি করছে।
যেখানে-সেখানে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা নিয়ে শাইখুল ইসলাম বলেন, যত্রতত্র বিসমিল্লাহ বলা ঠিক নয়। যেখানে বিসমিল্লাহ বলা ঠিক সেখানে বলতে হবে। নাজায়েয জায়গায় বিসমিল্লাহ বলা ঠিক নয়। কিন্তু আশ্চর্য, অনেকেই কাতারের আমিরের ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বিশ্বকাপের উদ্বোধনের সংবাদকে প্রশংসা করছে। মনে করছে, এর দ্বারা ইসলাম কায়েম হয়ে গিয়েছে। ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘বিসমিল্লাহ’ —এসব বলা প্রশংসনীয়। কিন্তু ভালো কাজে এগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে হালাল এমন কাজে ব্যবহার করতে হবে।
নিজের অব্স্থান স্পষ্ট করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, অনেকে বলবে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ‘বিসমিল্লাহ’-এর সমালোচনা করেছেন। আমি ‘বিসমিল্লাহ’-এর সমালোচনা করিনি। আমি মনোভাবটাকে সমালোচনা করেছি। বিসমিল্লাহ তো পবিত্র। বিসমিল্লাহ তো আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া জিনিস। বিসমিল্লাহ-এর তো সমালোচনা হতে পারে না। কী মনোভাব নিয়ে আমি বিসমিল্লাহ বলবো, কোন জায়গায় আমি বিসমিল্লাহ বলবো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি সেই পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেননি? এরপরও যত্রতত্র বিসমিল্লাহ বলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার মনোভাব কেন?
মুমিনের সবকিছু সুনির্দিষ্ট একটি নিয়মের উপরে চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন মুমিন কখন খাবে, কী খাবে, কীভাবে খাবে সবকিছু আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট করে রেখেছেন। মুমিনের খাওয়া কোনো কাফের-মুশরিকের খাওয়ার মতো নয়। মুমিনের খাবারের পদ্ধতি কাফেরদের খাবারের পদ্ধতির মতো নয়। মুমিনের ঘুম কোনো সাধারণ মানুষের ঘুমের মতো নয়। একজন মুমিনের ঘুমও নেককাজ বলে গণ্য হয়।
“সুতরাং ভাইয়ো, সময় থাকতো হুঁশ হও। আর বেহুঁশ থেকো না। মরণ তো এসে যাচ্ছে তোমার। আর কতো বেহুঁশ থাকবে? আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সময় থাকতে হুঁশ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।”
গ্রন্থনাঃ আব্দুর রহমান রাশেদ