রব্বে কারীমের বারেগাহে অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা
রিয়াযুল ইসলাম :: মাঝেমধ্যে নিরবে একাকী নিজেকে নিয়ে ভাবি। জীবনে কী কী পেলাম, কী কী হারালাম? রবের দরবারে তখন অনন্তকাল সিজদায় পড়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। পরওয়ারদেগারের কৃতজ্ঞতা আদায়ের ভাষা হারিয়ে ফেলি।
আমি জঘন্যতম খারাপ মানুষ। তারপরও আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে কত বড় বড় নিয়ামত দান করেছেন। আজকে শুধু একটি ঘটনা বলি।
মধ্য মার্চে দেশের মানুষ যখন করোনা আক্রান্ত হতে শুরু করলো। তখন দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করতে শুরু করলো। সবাই অচ্ছুত স্টাইলের আচরণ শুরু করলো। ডাক্তারের কাছে গেলে প্রেশার পর্যন্ত চেক করে না। পালস তো আরো অনেক দূরের বিষয়। ছেলে বাবাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। স্ত্রী স্বামীকে রেখে পালাচ্ছে। আরো কতশত হৃদয়বিদারক ঘটনা।
ঠিক তখন ১৮ মার্চ রাত ১২টার সময় আমার মাঝে কিছু করোনার সিমটম প্রকাশ পায়। যেমন, জ্বর, শ্বাসকষ্ট। হাসপাতালে গেলে ডাক্তার কিছু চেক না করেই শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের ঔষুধ দিয়ে দিলেন। একটা এন্টিবায়োটিক দিলেন।
আমি থাকি মাদরাসায়। আবাসিক উস্তাদ আমি। ঢাকায় আমার কোনো বাসা নেই। সকালে সবাইকে জানালাম। অনেক আত্মীয়স্বজনের বাসা ঢাকায় আছে। কিন্তু কেউ বাসায় যেতে বললো না।
সবার পরে আমার বাচ্চার আম্মুকে জানালাম। সে তখন তার বাবার বাড়ি ছিল। সে শোনার সাথে সাথে বলল, আপনি এখনই আমাদের বাড়িতে চলে আসুন। কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে ওদের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেহেতু কিছু সিমটম প্রকাশ পেয়েছে, (যদিও সব ডাক্তার সরাসরি করোনা নয় বলেই বলেছেন।) তাই শ্বশুরবাড়ি গিয়েই গোসল করে একটা রুমে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেললাম। সবাইকে আমার রুমে আসতে নিষেধ করলাম। কিন্তু আমার মেয়ের মা এই নিষেধাজ্ঞা মানতে নারাজ। সে সময় অসময়ে এসে আমার সেবা করবেই। হাজারো নিষেধ সে শুনবে না। এমনও হয়েছে রাত ২ টার সময় রুমে এসে আমার মাথা চেপে দিয়েছে। যদিও ঘুম থেকে জেগে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি কিন্তু ভালোলাগা, ভালোবাসায় তখন হৃদয় পূর্ণ ছিল। এসব কথা কখনোই তাকে বলা হয়নি।আমি একটু গুরুগম্ভীর স্বভাবের। কিন্তু বাস্তবে খুব সফট দিলের মানুষ। প্রকাশ কম করি।
রব্বে কারীমের বারেগাহে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা এমন একটি ফ্যামিলি দান করার জন্যে। ❤