রমজান; এ তো প্রেমের মূর্ছনা | ইশতিয়াক আহমাদ

রমজান; এ তো প্রেমের মূর্ছনা | ইশতিয়াক আহমাদ

রমজান; এ তো প্রেমের মূর্ছনা | ইশতিয়াক আহমাদ

বড়ই আশ্চর্য জীবনের এ খেলা ঘর। সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকে আজবধি কত মানুষ যে ক্ষণস্হায়ী এই জগতের মায়াজালে ও ভোগ বিলাসের মোহে আবদ্ধ হয়ে নিজের সর্বস্ব বিলীন করেছে! কতজন ছুটেছেন আলেয়ার পেছনে তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রকৃত প্রমাস্পদকে ভুলে রূপক প্রেমাস্পদের রূপ-লাবণ্যের মাঝে নিমজ্জিত হয়ে জীবন নদীর অতল তলে হারিয়ে গিয়েছে। আর সেখানেই ঘটে গিয়েছে তার যবনিকাপাত।

পক্ষান্তরে জীবনের সব মোহ মায়া পরিত্যাগ করে এ ধামের ভোগ বিলাস কে উপেক্ষা করে একদল পূণ্যময়ী মানুষ সর্বযুগে নিজেদের সর্বস্ব বিলীন করেছেন কেবল প্রকৃত প্রেমাস্পদের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। মালিকের ভালোবাসা যদের হৃদয়ে প্রগাঢ় হয়েছে। প্রেমাস্পদের থেকে প্রেমের স্বীকৃতি পেতে শত সহস্র পরিক্ষা যারা দিয়েছেন অকাতরে। প্রেমাস্পদের একটু সন্তুষ্টি যাদের জীবনে আরাধ্য বিষয়ে রুপ নিয়েছে।

প্রেমময় রমজান যে তাদের কাছে প্রেমের মূর্ছনা। যেখানে অবগাহন, একান্তে আলাপনের রয়েছে নিযুত পরিমান সুযোগ। যেখানে প্রতিটি আদান-প্রদানে রয়েছে সীমাহীন প্রপ্তি। প্রাপ্তির তৃপ্তিতেই যেখানে শুধু মন উদ্বেলিত। যার মধ্যে নেই অপ্রাপ্তির বেদনা, নেই কিছু হারাবার যাতনা। আদ্যপান্ত যেখানে শুধু মালিকের রহমত; যে রহমতের শবনম অনবরত আকর্ষণ করে চলেছে তার প্রিয় আশিকানদের।

তাইতো সুদীর্ঘ এগারো মাসের বিরহে কাতর প্রেমিককুলের জীবন যখন কন্ঠাগত, প্রেমাস্পদকে পাওয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমে দেহ মন জুড়ে যখন কেবল ক্লান্তির ছাপ, নিরবাচ্ছিন্ন আকুতি ও ফরিয়াদ যখন স্তিমিত; তখনই সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, বিষাদ মাখা মনে পুলকের শিহরণ জাগাতে নীল আকাশের গায়ে সিয়ামের আগমনী বার্তা নিয়ে এক ফালি চাঁদের আত্নপ্রকাশ।

‘আশিকান বান্দাগণ দিবসে সিয়াম সাধনা রাতে কিয়ামের মাধ্যমে নিজেকে সর্বদা নিমজ্জিত রাখেন প্রেমাস্পদের প্রেম সাধনায়। এ ভাবেই প্রেমের মূর্ছনায় নিজের মনের জমে থাকা সব ভাবাবেগ প্রেমাস্পদের সামনে খুলে বলতে বলতে অশ্রু ঝরান আশেকে ইলাহীগণ।’

দীর্ঘ অপেক্ষমান প্রেমিককুল কতইনা তৃপ্তিভরে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে চন্দ্রের দিকে, এমন চন্দ্র তো প্রতি মাসে উদয় হয়, কই তখন তো কেউ এমন করে দেখেনি! আবেগ তো এতো প্রগাঢ় হয়নি সে চাঁদের দিকে চেয়ে! হবেই বা কেন?

এ যে সিয়ামের চাঁদ! এ যে প্রেমাস্পদের নৈকট্য লাভের উপযুক্ত সময়ের জানান দিচ্ছে। তাইতো বিরহে ব্যকুল অতৃপ্ত ও ভগ্ন হৃদয়ের আশিকানরা আর নিজেদের ধরে রাখতে পারছেনা না, সামলাতে পারছেন না এত দিনের তীব্র আকাঙ্খাকে। তাই সকল কাজ কর্ম ছেড়ে, সকল আহার্য পরিহার করে, প্রাণ প্রিয় স্ত্রীকেও ত্যাগ করে, নিজের সর্বস্ব কেবল মালিকের জন্য বিলীন করার মানসে প্রত্যয় গ্রহণ করেছে আর মালিকও তার প্রিয় বান্দার এ ব্যাকুলতা কে লক্ষ্য করে বান্দার এতদিনের অপ্রাপ্তির বেদনাকে প্রাপ্তির তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেবার ইচ্ছায় সকল আবেদন নিবেদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার নিমিত্তে ব্যঘাত ঘটানো বিতাড়িত শয়তানকে আবদ্ধ করেন শৃংখলে। এবং প্রেমিক বান্দাকে নিজ প্রেম সাধনায় নিমজ্জিত করতঃ সকল কিছুর প্রতিদানকেও বাড়িয়ে দেন সত্তর গুণে।

ফলে আশিকান বান্দাগণ দিবসে সিয়াম সাধনা রাতে কিয়ামের মাধ্যমে নিজেকে সর্বদা নিমজ্জিত রাখেন প্রেমাস্পদের প্রেম সাধনায়। এ ভাবেই প্রেমের মূর্ছনায় নিজের মনের জমে থাকা সব ভাবাবেগ প্রেমাস্পদের সামনে খুলে বলতে বলতে অশ্রু ঝরান আশেকে ইলাহীগণ।

রমজানের আগমনে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বেশি বেশি তার প্রেমসাগরে অবগাহণ ও সাধনায় লিপ্ত থেকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া এ মহামারি থেকে নিস্তার লাভের প্রার্থনা করার তাওফিক দিন, মালিক সব্বাইকে রক্ষা করেন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *