রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগিরা

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগিরা

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগিরা

আদিল মাহমুদ : রাসেল। বয়স সাত। ক্লাস টু’তে পড়ে। ইকরা বাংলাদেশ স্কুলে।এই প্রথম রোজা রেখেছে। আনন্দে। রমজানকে উৎসব মনে করে। যদিও মা-বাবা মানা করেছে। খুব কষ্টে। চেহারাও মলিন হয়েছিল। সন্ধ্যায়। আবার পাক্কা ইরাদা করেছে। রাখবে। রহমতের শেষ রোজাটা। ঘুমানোর আগেই আম্মাকে বলেছে। সাহরিতে জাগাবে। রোজা রাখবো। কালকে। কিন্তু মা! ইচ্ছা করেই জাগায়নি। যদি ছেলে আবার চায়। রোজা রাখাতে। এই ভয়ে। রাসেলের সাহরি। খাওয়া হলো না রহমতের শেষ দিনে।

২.

বৃহস্পতিবার। সকাল দশটা। ঘুম ভাঙলো। রাসেলের। চোখ মেলেই- আম্মু! আম্মু!

– কি বাবা?

– আম্মু, সাহরিতে কই? ডাকলে না আমাকে?

– আমরা কেউ খাইনি। সাহরি। কেউ রোজা না। তাই তোমাকে ডাকিনি। আজ লাগবে না। রোজা রাখা। অন্য দিন রেখো।

(রাসেলের আম্মু। এসব মিথ্যা বলেছে। একটাই উদ্দেশ্য। ছেলে যেন রোজা না রাখে। রোজায় সন্ধ্যার মলিন চেহারা ভালোলাগে না তাদের।)

– আমার ইরাদা পাক্কা । রোজা রাখবো। তোমরাও রাখো। আমি জানি, সাহরি না খেলে কিচ্ছু হয় না। রোজা হয়।

– তুমি জানো না বাবা! সাহরি না খেলে হয় না রোজা।

– জ্বী না! স্যার বলেছেন হয়। নিয়ত করলেই হয়। দিনে কিচ্ছু না খেলেও রোজা হয়। সাহরি খাওয়া লাগে না।

– তোমার স্যার। জানেন না।

– আমি রোজা রাখবো।

৩.

আজান হচ্ছে জোহরের। নামাজ পড়লো সবাই। খাবার নিয়ে মা হাজির। কিন্তু রাসেল খাবে না। জেদি ছেলে। যা বলে। তাই করে। এই বয়সেই। মা বকাঝকা করলেন। আস্তে করে থাপ্পরও দিলেন। গালে। তবুও খেলো না। কান্নায় ভেঙে পড়লো রাসেল। মা চলে গেলেন। কান্না করতে করতেই ঘুম চলে এলো।

৪.

বিকাল চারটা। অফিস থেকে এলেন বাবা। সব শুনলেন তিনি। ছেলে রোজা। অবাক হলেন। বললেন, রোজা রাখতে দিলা কেন?

মা বললেন। তোমার ছেলে তো। তাই। একদম তোমার মতো। ঘাড়তেড়া। যা বলে তাই করে। কেউ পারেনি। রোজা ভাঙাতে। দেখো তুমি। চেষ্টা করো রোজা ভাঙাতে পারো কিনা।

ছেলে ঘুমাচ্ছে। মুখটা বিবর্ণ। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন বাবা। ঘুম থেকে জাগালেন না তিনি। ছেলের পাশে বাবাও ঘুমিয়ে পড়লেন।

আসরের আজান হলো। মা ডাকলেন বাবাকে। ছেলেরও ভাঙলো ঘুম। বাবা-ছেলে এক সাথে। মসজিদে গেলো জামাতে। পড়লো নামাজ। বাসায় ফিরলো। টিভিতে শুনলো। কুরআন তেলাওয়াত। মা তৈরি করলেন ইফতার। স্পেশাল ইফতার। ছেলের রোজা বলে কথা।

৫.

ইফতারের সময় হলো। সবাই বসলো। টেবিলে। সামনে পসরা। ইফতারের। আজানের অপেক্ষায় রাসেল। বাবা বললো। রাসেল। বাবা আমার। এ সময়। দুআ কবুল হয়। দুআ করো। আল্লাহর কাছে। রাসেল হাত তুললো। উপরে দিকে তাকিয়ে। বলতে শুরু করলো। মক্তবে শিখা। মুখস্থ দুআ। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানী সাগিরা।

আদিল মাহমুদ ।। ১১ রমজান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *