১৯শে মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৩ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : লিবিয়ার বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আরো ৭৪ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে বুরাক এয়ারের ভাড়া করা একটি ফ্লাইটে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ার একটি বন্দিশিবিরে ছিলেন।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বুরাক এয়ারের ফ্লাইটটি। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিকেলের দিকে লিবিয়াফেরত বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টিনের উদ্দেশ্যে আশকোনার হজ ক্যাম্পে নেওয়া হয়।
বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এই বাংলাদেশিরা দালাল ও মানবপাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিভিন্ন সময় লিবিয়ার পুলিশের হাতে আটকের পর তাঁদের হেফাজতে নেয় দেশটির প্রশাসন। আইওএমের সহযোগিতায় তাঁরা দেশে ফিরেছেন।
আইওএমের একজন কর্মকর্তা বলেন, সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রত্যেক যাত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে খাবার ও গ্রামের বাড়ি পৌঁছার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের ঘুরে দাঁড়াতে যাবতীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আটক বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা সংস্থাটির একটি নিয়মিত কাজ। বাংলাদেশ ও লিবিয়া সরকারের সঙ্গে তাদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে এই বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, এই বাংলাদেশিরা লিবিয়ার ৫৫ নম্বর বন্দিশিবিরে আটক ছিলেন। এই সেন্টারে বর্তমানে আরো বহু বাংলাদেশি আটক আছেন। এই ধাপে ৭৪ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দূতাবাসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এবং আইওএমের সহায়তায় তাঁদের দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আইওএমের ভাড়া করা বিশেষ ফ্লাইটটি লিবিয়ার মেতিগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান মেতিগা বিমানবন্দরে বাংলাদেশিদের বিদায় জানান।
এর আগে গত ৩ মার্চ একই প্রক্রিয়ায় লিবিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় ১১৪ জন বাংলাদেশিকে। সেদিন কোয়ারেন্টিনের উদ্দেশ্যে হজ ক্যাম্পে নেওয়া হয় তাঁদের। গত বুধবার রাত ১০টার পর তাঁদের কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ ১১৪ জনকে হজ ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় কথা হচ্ছিল লিবিয়াফেরত সাগর মণ্ডলের ভাই শিপন মণ্ডলের সঙ্গে। ঠিক তখন রাজধানীর মিরপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে যান সাগর। শিপন জানান, ৩ মার্চ ১১৪ জনের সঙ্গে ফিরেছিলেন সাগর। বুধবার রাতে কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলায়। সাগরের শারীরিক জটিলতা খুব বেশি না হলেও এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে। তাই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তাঁকে।
শিপন জানান, দালালচক্রের প্রলোভনে পড়ে ইতালি পাঠানোর স্বপ্নে ভাইকে এ পথে নামিয়ে দিয়েছিলেন। বুঝতে পারেননি সেটি যে কত বড় ঝুঁকি এবং ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। চক্রের খপ্পরে পড়ে এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। লিবিয়ার বন্দিশিবিরে সাড়ে পাঁচ মাস বন্দি থাকার পর মুক্তি পান সাগর।
এদিকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রগ্রামের একজন কর্মকর্তা বলেন, লিবিয়া থেকে যাঁদের দেশে ফেরত আনা হচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত ৩ মার্চ এবং গতকাল ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিরাও নানাভাবে অসুস্থ। লিবিয়ায় দালালচক্র তাঁদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে অনেকে প্রায় মৃত্যুমুখ থেকে ফিরেছেন।