শবে বরাতের করণীয়-বর্জনীয়

শবে বরাতের করণীয়-বর্জনীয়

মাহতাব উদ্দীন নোমান : আরবি মাস শাবানের ১৫ তারিখের রাতকে শবে বরাত বলা হয়। আরবিতে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। বাংলায় বলা হয় মুক্তির রাত। এটি অনেক পবিত্র ও বরকত পূর্ণ রাত। এই রাতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বান্দার প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করেন এবং সকল মাখলুককে ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন।

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তার সমস্ত সৃষ্টি জীবের প্রতি মনোনিবেশ করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সকল সৃষ্টি জীব কে মাফ করে দেন। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদিস নং ১৫৪৬)

শায়খ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানী তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন, অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টি জীবের প্রতি মনোনিবেশ করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সকল সৃষ্টির জীবকে ক্ষমা করে দেন। (সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ লিল আলবানী, হাদিস নং ১১৪৪)

তিনি বলেন, এটা সহিহ হাদিস। সাহাবীগণের বড় একটি দল থেকে বিভিন্ন সূত্রে এই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। ওই সাহাবীগণ হলেন মুয়াজ ইবনে জাবাল, আবু সালাবা খুশানী, আবদুল্লাহ ইবনে আমর, আবু মুসা আশআরী, আবু হুরায়রা, আবু বকর সিদ্দিক, আউফ ইবনে মালেক ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আজমাইন।

অতঃপর এই আট সাহাবীগণের হাদীসগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, মোটকথা এই সকল সূত্রের সমষ্টিতে বর্ণিত হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহিহ। আর মারাত্মক দুর্বলতা থাকলে তো এর চেয়ে কম সংখ্যা দ্বারাও সহিহ সাব্যস্ত হয়ে যায়। যেমন এই হাদীসটি ক্ষেত্রে হয়েছে। (সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ লিল আলবানী, ৩/১৩৫)

অসংখ্য অগণিত গুনাহগার বান্দা কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই রাতে ক্ষমা করে দেন। বান্দা এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করে নিজেকে গুনাহ থেকে মুক্ত করতে পারে। পেতে পারে মাগফেরাতের মতো এক মহান দৌলত। সুতরাং একজন মুমিনের জন্য এই রাতটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক রাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজের পাশে পাচ্ছিলাম না। আমি তাকে খুঁজতে বের হলাম। হঠাৎ আমি তাকে জান্নাতুল বাকীতে মাথা আকাশের দিকে উঠানো অবস্থায় দেখলাম।

তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছিলেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার ওপর জুলুম করবেন। আমি বললাম, বিষয়টি এমন নয় (আমি এমন মনে করিনি)। কিন্তু আমি ধারণা করেছি যে আপনি অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা অর্থ শাবানের রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের বকরিগুলো উপশমের থেকেও অধিক পরিমাণ মানুষকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ )

আল্লাহ তায়ালার এত ব্যাপক ক্ষমা ঘোষণার পরেও কিছু হতভাগা এই ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকবে। আল্লাহ তাআলার বিশেষ মনোনিবেশ থেকে তারা বিরত থাকবে। হাদীসে বর্ণিত তাদের নাম গুলো একত্রে নিচে দেওয়া হলো-

১. মুশরিক
২. হিংসুক
৩. যিনাকারী
৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।
৫. অহংকারবশত টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান কারী
৬. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান
৭. মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি।
(আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদিস নং ১৫৪৭)

এত বরকত পূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ রাতের পরিপূর্ণ বরকত ও মাগফেরাত পেতে হলে আমাদের জন্য কিছু করণীয় এবং কিছু বর্জনীয় বিষয় রয়েছে।

করণীয় হলো ৫ টি-

১. রাত জেগে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এবাদত অর্থাৎ নামাজ, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কাজে লিপ্ত থাকা।
১. বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দোয়া করা। নিজের জন্য, নিজের পরিবার, নিজের সমাজ, নিজের রাষ্ট্রের জন্য মন খুলে আল্লাহ তাআলার কাছে কান্নাকাটি করা। আল্লাহ তাআলা বান্দার কান্নাকাটি কে খুব পছন্দ করে।
৩. মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা। সম্ভব হলে একা একা কবর জিয়ারত যাওয়া।
৪. ঘরে যদি এবাদত ও দোয়া ইস্তেগফারের সুযোগ থাকে তাহলে এই রাতে ঘরে এবাদত করাই উত্তম।
৫. পরের দিন রোজা রাখা।

বর্জনীয় বিষয় ৫ টি-

১. রাত জেগে এবাদত করতে ও পরের দিন রোজা রাখতে অন্যকে বাধ্য না করা।
২. রাত জেগে এবাদত করে অন্যকে কষ্ট না দেওয়া।
৩. ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে এবাদত না করা।
৪. রাতে ঘোরাফেরা করে বা গল্পগুজব করে সময় নষ্ট না করা।
৫. শবেবরাত উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে রুটি-হালুয়া বিতরণ না করা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে এই রাতে এবাদত করে তাঁর সন্তুষ্টি এবং মাগফিরাত অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

লেখক: শিক্ষক ও খতীব

আরও পড়ুন: দাম্পত্যসঙ্গীর অধিকার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *