শিশুশ্রম । আহমাদ কাশফী

শিশুশ্রম । আহমাদ কাশফী

শিশুশ্রম । আহমাদ কাশফী

বিকেলের সূর্যটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। আরজ আলী গরু দুটোকে ক্ষেতের শেষ মাথায় নিয়ে এসে বটগাছের সাথে বেধে পুকুরের নিচে নেমে ওজু করলেন। মাথায় বাধা গামছাটি খুলে সবুজ ঘাসের উপর বিছিয়ে দিলেন। ওযুর পানি মুছতে মুছতে পাশে এসে একই কায়দায় গামছা বিছিয়ে দাঁড়ালো আরো দুই কৃষক ‘হাবিব মিয়া ও জমির আলী’। আরজ আলী ইমামতির জন্য আগে বাড়লেন। হাবিব ইকামাত দিলেন। তিন কৃষক মিলে আসরের চার রাকাআত ফরজ নামাজ আদায় করলেন।

নামাজ শেষে আরজ আলী ঘুরে বসে তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করে সংক্ষিত মোনাজাত শেষে উঠে যেতে লাগলেন। জমির আলী মুখ খুলে বলে উঠলেন, কিগো আরজ ভাই! হুনলাম গেরাম ছাইড়া পোলাপান লইয়া ঢাহা যাইবেনগা নাকি?

সারাদিন ক্ষেতে পইড়া থাইক্যা এত্ত খাটনি খাইট্যাও যুদি পোলাপাইনটির পড়ালেহার খরচ না দিতাম হারি। তাইলে গেরামও থাইক্যা কি লাভ?
তাই চিন্তা হরলাম ঢাহা শহর যামুগা। একখান ছুটোখাটো ব্যবসা বাণিজ্য কইরা পোলাপাইনটিরে পড়ালেহা শেষ করায়া আবার গেরামও আমু।

২.
চান্দার টেহাটা বাইর কইরা ফালান, আরজ মিয়া।

চান্দা তো ভাইসাব ডেলিই দেই। কিন্তু পুলিশে যে রান্ধা হরে..!

এত্তো প্যাঁচাল হুনার টাইম নাই। টেহা লয়া বাড়াবাড়ি করলে দোহান উঠায়া দিমু।

উষ্কখুষ্ক চুলওয়ালা বদমেজাজি লাইনম্যান কালু মাস্তান। বসের নির্দেশে প্রতিদিন ফুটপাতের প্রায় দু’শত দোকান থেকে চাঁদা তুলে। ছোট-বড় সব দোকানীরা কালো মাস্তানকে বাঘের মত ভয় পায়। কালু লোকটা দেখতে অনেক কালো ও খর্বাকৃতির। কথা বলার সময় চোখ দুটো থেকে যেন ফুলকির ন্যায় আগুনের লেলিহান শিখার বিস্ফোরণ ঘটে। ফুটপাতের দোকানীরা কালুর আগমন টের পাওয়ার সাথে সাথে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে ভদ্রভাবে চাঁদার টাকাটা হাতে তুলে দেয়। কালুর চাঁদার পরিমাণ কম। তাই সাধারণত কেউ আপত্তি তুলে না।

খানিকটা ক্ষোভ থাকলেও তা ভেতরেই চাপা পড়ে থাকে। তাছাড়া যে উপায় নেই। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলেই দোকান উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি।

৩.
ইদানীং পুলিশ ফুটপাতের দোকানীদের খুব জ্বালাতন করছে। অসময়ে এসে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করে। দোকান উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। দোকানীরা আগে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পুলিশকে খুব ম্যানেজ করতে পারতো। যে যত কম টাকায় ম্যানেজ করতো, সে ঐ দিনের নায়ক। এখন আর পুলিশকে ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। এসেই কড়া কড়া কথা বলে, হুমকি-দমকি, থানায় নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। পেমেন্ট বাড়িয়ে দিলেও নিতে চায় না। কী যে এক ঝামেলা! এইতো গতকালও পুলিশ এসে আরজ আলীকে হুমকি দিয়ে গেছে। যদি আগামীকাল ফুটপাতে দোকান বসায় তবে জেল জরিমানা পর্যন্ত হবে।

৪.
বেচারা আরজ আলী নিরুপায় হয়ে সারাদিন ঘরে বসে মাথা চুলকায়। কিন্তু আর কোন পথ খুঁজে পায় না। শেষমেশ বাধ্য হয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ করে গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরিতে দিয়ে নিজে গ্রামের পথ ধরে।

৫. আরজ আলীর ছেলেরা বয়সে ছোট। চাকরির বয়স হয়নি। তবু পরিচিত একজনের মাধ্যমে চাকুরীটা হয়েছিলো পোশাকের কারখানায়। কিন্তু আইনের চাপে শিশুশ্রমের দায়ে সেই আরজ আলীকেই ম্যাজিস্ট্রেট দাঁড় করালেন কাঠগড়ায়। জরিমানা করলেন পোশাক কারখানাকে। আরজ আলী এবার আর মাথা চুলকায় না। কেবলই থাবড়ায়…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *