বই রিভিউ । আশরাফ উদ্দীন রায়হান
শেষের অশ্রুতে জীবনের স্খলন
নাম : শেষের অশ্রু
জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাযযালি রহ. বলেছিলেন, ‘দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত পাপ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।’ ‘শেষের অশ্রু’ বইটি পড়ে এ কথাটিই বারবার মনে ঘুরপাক খেয়েছে। ইয়াসার নামক পরহেজগার যু্বকের স্খলন আর সারশির নাম্নী অনিন্দ্যসুন্দরী যুবতীর পাতানো-ফাঁদের ধারাবিবরণী রয়েছে বইটিতে।
শায়খের তত্ত্বাবধানে যে যুবক জীবন পরিচালনা করে, পরকাল-ভাবনায় যে ইয়াসার আকণ্ঠ নিমজ্জিত—পাপাচারের ত্রিসীমানায়ও যাকে দেখা যায় না—সেই ইয়াসারও রমণীয় আকর্ষণে স্বীয় পবিত্র জীবনের স্খলন ঘটায়!
‘আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি : শয়তান তোমার কাছে বিভিন্ন দরজা দিয়ে ঢুকবে। তবে প্রধানত নারীর মাধ্যমে ঢুকবে। তুমি তার থেকে দায়েমি যিকর—দৃষ্টি সংযত করা ও কুরআন তিলাওয়াত করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও।
নিজেকে মনে করিয়ে দাও, এই সুন্দরী মেয়ের চেহারা কিছুদিন পর একটা মৃতদেহে পরিণত হবে; যে দেহ কীটপতঙ্গ খেয়ে ফেলবে। আর জান্নাতে এমন হূর আছে, যাদেরকে উদীয়মান সূর্য দেখলেও লজ্জা পায়।’
কিছু মানুষ নিজে আলোকিত হন না, অপরকেও আলোকিত করেন। যার ঈমান ও আমল দেখে সবাই অনুপ্রাণিত হন, তার মতো হবার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু এমন তাকওয়াবান লোকেরও পদস্খলন ঘটতে পারে। শয়তান তাকে টেনে এমন নীচে নামাতে পারে যেটা সবাই তো বটেই, সে নিজেও কখনও কল্পনা করতে পারেনি। তারপর? তারপর কী হয়?
এক নজরে, সাতটি তালা, বিস্ময়কর চাবি, অন্তরের আহ্বান, চিঠি, পথে, পথিকের পথ, মেয়ের গৃহে, আমি সিয়ামরত, মেয়ের রহস্য, পরাজিত হৃদয়, যুহদ ও হাসসান, নব আগন্তুক, শাইখের উপদেশ—এই মোট চৌদ্দটি অধ্যায়ে বিধৃত হয়েছে শেষের অশ্রুর আখ্যান। প্রতিটি অধ্যায়ের ভাষ্যই মর্মস্পর্শী ও ভাবনাজাগানিয়া!
এরপরের কথা জানার উপায় হলো বইটি পড়া। বইটির লেখক : আবদুর রহমান দাঊদ ইবনু সুলাইমান বাগদাদের বাসিন্দা ছিলেন। আবদুল্লাহ মজুমদার অনূদিত ‘শেষের অশ্রু’ বইটির ভাষাভঙিমা বয়ে গেছে ঋজুগতিতে। সাহিত্যের রসবোধ আর ঔপন্যাসিক ধাঁচে লেখা ৯৮ পৃষ্ঠার ‘শেষের অশ্রু’ বইটি হয়ে ওঠেছে অনবদ্য। অভিজাত প্রচ্ছদ আর চমৎকার বাঁধাইয়ে বইটি বাজারে এনেছে সমর্পণ প্রকাশন। বইয়ের গায়ে লেখা মূল্য : এক শ চৌত্রিশ টাকা।
হাল আমলে নিজের ঈমান-আমল আর তাকওয়া-বুযুর্গী নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকা যুবকদের জন্য ‘শেষের অশ্রু’ জরুরিপাঠ্য বলে মনে করি।
২২ নভেম্বর ২০১৯
তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ