শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায় করা উচিত

শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায় করা উচিত

অনশনে পাটকল শ্রমিক

শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায় করা উচিত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :: শ্রমিক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ঘানি চলতে থাকলেই দেশ এগিয়ে যাবে। এই তথ্যের সঙ্গে সবাই ঐকমত্য নিশ্চয়ই। কিন্তু দেশের সবখানে বার বার এই শ্রমিকরাই সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে। শ্রমিকদের সুবিধা নিশ্চিত ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। দেশের উন্নয়ন ব্যহত হবে শ্রমিক মরলে। এ জন্য সবার আগে শ্রমিকদের সুবিধা দেখা উচিত বলেই মনে করেন শ্রম বিশ্লেষকগণ। আমরা মনে করি, পাটকল বন্ধ হলেও ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে হওয়া উচিত।

মিল কারখানা বন্ধ করা দেশের উন্নয়নের অন্তরায়। এখন আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে, দেশের উন্নয়নে এই শ্রমিকগণ আরও বেশি অবদান রাখবে- সেখানে তারা অনশনে মাঠে নেমেছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শ্রমিকগণ। নেমে এসেছে তাদের স্কুল পড়–ৃয়া সন্তানরা। বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে সুরাহা হওয়া উচিত।

গত বছরের মতো এ বছরের প্রথম দুই দিন রাজপথে কাটিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। দ্বিতীয় দফায় আমরণ অনশনে নেমেছেন তারা। পাটকল শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার দৃশ্যত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

প্রচণ্ড শীতে রাজপথে অনশনরত পাটকল শ্রমিকের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আগের অনশনে দুই শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটায় এ ধরনের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাটকল শ্রমিকরা মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে অনশন করছেন। গতকাল বুধবার তাঁদের অনশন চার দিনে পৌঁছেছে। পাটকল শ্রমিকদের অনশনে সরকারের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। একসময় পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত হতো পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাকে। সে পাট এখন জাতির জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশের পাটকলগুলোয় এ মুহূর্তে মজুদ রয়েছে অন্তত ৮০ হাজার টন পাটপণ্য। দেশে পাটপণ্যের ক্রেতা একেবারে সীমিত। বিদেশেও পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে কমছে। সরকারি পাটকলগুলো লাগাতার লোকসান করে চলছে স্বাধীনতার পর থেকে। বর্তমানে অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, পাটকলে উৎপাদন না করে শ্রমিক-কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন দিলেও লোকসানের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এ প্রেক্ষাপটে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়া হলে তাতে লোকসানের পরিমাণ স্ফীত হবে।

বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবলুপ্তি ঘটিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য পাপ্য অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার কথা ভাবার সুযোগ থাকলেও সরকার সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে অস্বস্তিতে ভুগছে। পাটকল শ্রমিকরা মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের যে দাবি জানাচ্ছেন তা অবশ্যই যৌক্তিক। পাটকলের লাভ-লোকসানের তারা কোনো পক্ষ নন। দুনিয়াজুড়েই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মানেই এলোমেলো অবস্থায় বিরাজমান।

পাটকলগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কারণেই যে লোকসান গুনতে হচ্ছে তা অস্বীকারের উপায় নেই। শ্রমিকদের ঠকানোর কোনো চিন্তা করাই পাপ। সবসময় তাদের ন্যায্য পাওনা আদায় করা উচিত। মিল চালু থাকুক আর না থাকুক। মিল চললেই শ্রমিক বাঁচবে, কাজ পাবে। তবে কর্তাদের কী হবে? তদন্ত করে একটা সুরাহা বের করা উচিত বলে আমরা মনে করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *