অনুগল্প । সুলতানা রিজিয়া
স্বপ্নের মতো
রাত্রির তিনপ্রহরের স্বপ্ন নাকি সত্যিই হয়!
আজ পরপর কদিন একই স্বপ্ন ঘুরে ফিরে আসছে, কেনো? এমন স্বপ্ন তো সত্য হবার নয়!
সেই গ্রাম্য ছায়াময় পরিবেশ, পায়ের নীচে সবুজ ঘাস, মটর, কালাইয়ের লকলকে সবুজে শিশিরের মুক্তোদানা, ঝিমধরা কুয়াশায় অস্পষ্ট আলোছায়া!
বেলা বাড়তে না বাড়তে ঢেকির ধুপধাপ শব্দে জেগে ওঠা চরাচর। গোয়ালের পেছনে বাঁশঝাড়ে প্রথম আলো, কূয়োতলার বকুলগাছে কোত্থেকে উড়ে এসে কুটুম পাখি চোখ গেলো, চোখ গেলো, সুরে ডেকে ওঠে।
নানীজান বলেন- কুটুম এলো, কুটুম এলো!!
তা কুটুম আসবে কোত্থেকে?
এই শহুরে এপার্টমেন্টের খোপে এখন তো কোন কুটুম আসে না। সেই গ্রাম আর নেই, বিজলিবাতিই গ্রামের সবরূপ খেয়ে ফেলেছে। ঢেকির অর্থ আজকের প্রজন্মের কাছে অজানা।
জাহেরা বেগম প্রতিদিনের মতো জায়নামাজে বসে তসবিতে আল্লাহপাকের নাম জপেন আর প্রবাসী দুই সন্তান, নাতী নাতনীদের মুখ মনে করেন। তাদের ঘরে দুই প্রজন্মের বাড়বাড়ন্তে তিনি মনে মনে শুকরিয়া আদায় করেন।
আত্মীয় স্বজনদের সাথে তার কোনই যোগাযোগ নেই। দেশগ্রামের এক বোনের ছোটছেলে প্রায় দুইযুগ তার সাথেই পরিবার নিয়ে থাকে।
ভোর হতেই না হতেই আজ আবার সেই একই স্বপ্ন!! তবে আজ তিনি আর নিজেকে খুঁজে পান না। শুধু দু’চোখ মেলে দেখেন বাড়িঘরে লোকজনের আসা যাওয়া, ছেলেমেয়ে, নাতীনদের কোলাহল। তিনি আপন মনেই প্রশ্ন করেন,
-এরা সবাই কখন এলো?
গতকালও তো সে একাই ছিলো!
তবে!
স্বপ্ন কি সত্যি হলো?
জাহেরা বেগমের বুকের মাঝে মাতৃত্বের তৃষ্ণা খলবল করে ওঠে। আপন সন্তানদের চেনামুখ দেখার আশায় উঠে বসতে চান, পারেন না। আবার চেষ্টা করতেই তার সামনে থেকে উড়ে যাওয়ার পর্দার মতো তরিৎ হারিয়ে যায় আপন পরিবার পরিজন, চেনা জগত! মুহূর্তে জাহেরা বেগম যেনো নিজেকেই হারিয়ে ফেলেন অদেখা জগতে!