স্বীকৃতিসাফল্যে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবো ইনশাআল্লাহ: একান্ত সাক্ষাৎকারে ইয়াহইয়া মাহমুদ

স্বীকৃতিসাফল্যে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবো ইনশাআল্লাহ: একান্ত সাক্ষাৎকারে ইয়াহইয়া মাহমুদ

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ। একজন সুবক্তা হিসেবে দেশবিদেশে পরিচিত। মূলে তিনি একজন হাদিসের শিক্ষক। শাইখুল হাদিস। খতিব। শিক্ষাবিদ। কওমী মাদরাসার একজন দরদি অভিভাবক। বেফাকুল মাদারিসিদ্দীনিয়া বাংলাদেশের একজন সহসভাপতি। আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর একজন সদস্যও তিনি। রাজধানীর জামিআ আহলিয়া দারুল উলূম রামপুরার মুহতামিম। রমপুরার বাইতুল মারুফ জামে মসজিদের খতীব। কওমী শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের তিনি সদস্য সচিব। ১৯ সেপ্টেম্বর বুধবার ২০১৮ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদ্রাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান প্রদান বিল-২০১৮’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হওয়ায় আমরা পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোগী সম্পাদক মাসউদুল কাদির। সঙ্গে ছিলেন, কাউসার মাহমুদ।

পাথেয় : আসসালামু আলাইকুম

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ  : ওয়ালাইকুমুস সালাম

পাথেয় : হযরত আপনি কেমন আছেন?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।

পাথেয় : হযরত, আপনি নিশ্চয়ই জেনেছেন, ১৯ সেপ্টেম্বর বুধবার ২০১৮ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদ্রাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান প্রদান বিল-২০১৮’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ স্বীকৃতি নিয়ে আপনার এবং আপনার উস্তাদ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের বিরাট অবদানের কথা আমরা জানি। স্বীকৃতি সাফল্যে আপনার মন্তব্য কী?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : যদি প্রতিক্রিয়ার কথা বলেন তাহলে আমি আমার অভিব্যক্তি পেশ করতে পারি।

পাথেয় : জ্বী, আপনার প্রতিক্রিয়াই জানতে চাচ্ছি।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : কওমী শিক্ষা সনদ বাস্তবায়ন কমিটি পারিষদ এবং আল হাইয়াতুল উলইয়া ও কওমী মাদরাসার সকল উলামা ও তলাবার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ স্বাধীনতা অর্জনে তাদের যে অবদান রেখেছে এরপরে জাতীর জন্য তাদের সবচেয়ে বড়ো অবদান হলো কওমী মাদরাসা শিক্ষাসনদের স্বীকৃতির এই বিল পাস করা। ইতিহাসে এটা তাদের সবচেয়ে বড়ো সফলতা- তারা যে এ কাজটা করতে পেরেছে। এরসাথে যে সব উলামায়ে কেরাম এই স্বীকৃতি আদায়ে অবদান রেখেছেন তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। বিশেষভাবে এই স্বীকৃতিটির জন্য আলাপআলোচনা অনেক আগ থেকেই চলছিল এমনকি বিএনপি ও বিগত জোট সরকারের আমলে এটার বিজ্ঞপ্তিও হয়েছিল। তখন এটা কোমায় ঢুকে যায়। এরপর আর এটি আলোর মুখ দেখছিলো না। কিন্তু ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আবার ক্ষমতায় এলেন, তখন উলামায়ে কেরামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরে যখন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে দেয়া হয়।তারপর ওই কমিশনের তৎপরতায় কাজ যখন বেগবান হচ্ছিলো তখন আমাদের দেশের কিছু উলামায়ে কেরাম এটাতে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী রেখেছিলো (আমি তাদের নাম বলতে চাই না)। তারা হাজার হাজার লাশ ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। যদি তারা এমনটি না করতো, তাহলে তখনি স্বীকৃতিটা হয়ে যেত। মূলত তাদের এ হুমকির কারণেই স্বীকৃতিটা আবার কোমায় ঢুকে যায়। বিষয়টি স্থবির হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৬ সালের ১১আগস্ট কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে জঙ্গিবাদবিরোধী ঐতিহাসিক লক্ষ আলেমের স্বাক্ষরসম্বলিত মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া তুলে দেয়ার অনুষ্ঠানে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ আবারো এই স্বীকৃতির কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, আপনি অনেক জটিল পরিস্থিতি আপনার বিচক্ষণতা দিয়ে আল্লাহর রহমতে উতরে গেছেন। এখন কওমী স্বীকৃতির বিষয়টিও একটি জটিলতায় রূপ নিয়েছে। আপনি চাইলে এটার সুরাহা হতে পারে। স্বীকৃতি আসতে পারে এবং আমরা এর আশা করতে পারি। উনার এ কথার ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী তখন বললেন ‘আপনারা ঐকমত্য হয়ে আসুন ‘। যদি তা না পারেন, তাহলে যত জন পারেন তত জন আসুন। আমরা স্বীকৃতি দিয়ে দেব। এরপরই আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুফতী আবুল কাসেম সাহেবকে আহ্বায়ক এবং আমাকে সদস্য সচিব করে কওমী স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ গঠন করা হয়। এরপর আমরা গণসংযোগ শুরু করলাম। তখন ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, চিটাগাং, সিলেট, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপক সাড়া পেতে লাগলাম। যখন পুরো দেশ থেকে সাড়া পেতে লাগলাম তখন ওই যারা বিরোধিতা করেছিল তারা ভাবলো যে আল্লামা ফরীদ মাসঊদের নেতৃত্বে যে বোর্ড হয়েছে এই বোর্ড স্বীকৃতি নিয়ে নেবে। সুতরাং স্বীকৃতির পক্ষে আমাদের আসা দরকার।

পাথেয় : হযরত, ওই স্বীকৃতিসফরে সফরে কী আপনারা কোনওরকম বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আলহামদুলিল্লাহ! না, ওই সফরে আমরা কোন বাঁধার সম্মুখীন হইনি। বরং বেফাকভুক্ত মাদরাসাগুলো আমাদের ব্যাপক সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছে।

পাথেয় : আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি, একটি শ্রেণিতো লাশ ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলো!

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আমি তাদের নাম নিয়ে তাদের খাটো করতে চাই না। যারা বিরোধিতা করেছিলেন, তারা শেষপর্যন্ত আমাদের স্বীকৃতির পক্ষে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

পাথেয় : আসলে বাধ্য হওয়ার মূল কারণটা কী?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আসল ঘটনা হলো, তারা এই সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি নিবে না। সরকারকে এই ক্রেডিটটা দিবে না। তারা অনেক চেষ্টাও করেছে, যে সরকার যেন এই ক্রেডিটটা না পায়। কিন্তু মাননীয় প্রধামন্ত্রীর বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তা চলে আসে। তার প্রশংসা করতেই হয়, সেসময় যারা তার বিরোধিতা করেছিল এখন তিনি তাদের সঙ্গে বসেন, সাক্ষাৎ করেন। এমনও তো শোনা যাচ্ছে বিরোধী কেউ কেউ আসন পাওয়ার প্রত্যাশায় পেছনে ঘুরঘুর করছেন। তবে দুঃখের বিষয় হলো, আপনারা ঘরোয়াভাবে স্বীকার করেন যে, আল্লামা ফরীদ মাসঊদের ত্যাগের কারণেই আমরা স্বীকৃতিটা নিতে পেরেছি এবং এ পর্যায়ে আমরা আসতে পেরেছি। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে বলেন না। তবে উনারা যদি প্রকাশ্যে বলেন, তাহলে দিয়ানতদারীতার পরিচয় হবে। আর প্রকাশ্যে যদি কথাটা চেপে যান, তাহলে সত্য চেপে যাওয়ার গুনাহের অপরাধ হবে। সে অপরাধে তারা অপরাধী হবেন। আমি তাদের আহ্বান জানাবো, তারা যেন সত্যটা চেপে না গিয়ে খোলাখুলি বলেন যে, আজ যে স্বীকৃতি এসেছে এর পেছনে আল্লামা ফরীদ মাসঊদের অবিস্মরণীয়, ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। কোমায় ঢুকে যাওয়া একটি বিষয়কে পুনরায় আলোর মুখ দেখানোর ঐতিহাসিক ভূমিকা তারই। যদিও পরে স্বীকৃতি আন্দোলনে অনেকেই যুক্ত হয়েছে। এর পেছনে প্রধান ভূমিকাটা যে উনার, এটা স্বীকার করলে তারা খাটো হবে না বরং তারা আরো উঁচু হবে। সত্য চেপে থাকবে না। একসময় তো ‘সত্য প্রকাশিত হবেই। তখন উনারা উনাদের ভক্তবৃন্দের কাছে খাটো হবে। তারাই বলবে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে এতোদিন তারা ধামা চাপা দিয়েছিলো!

পাথেয় : সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে অনেকেই স্বীকৃতির এ বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা করছে যে, আমাদের সিলেবাসে কোনওরকম রদবদল হয়ে যাবে কী না! আরেকটা কথা, আমরা তো অনেক ভালো ভালো কিতাব আমাদের সিলেবাস থেকে বাদ দিয়েছিলাম, স্বীকৃতির ফলে এগুলো কী আবার সংযোজন করা হবে কী না! সম্ভাবনা কতটুকু?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আসলে মৌলিক কোনও কিতাব আমরা বাদ দিইনি। যেগুলো আমাদের মূল শিক্ষা কারিকুলাম, মূল সিলেবাস সেগুলো বাদ দেয়া হয়নি। বাদ দেওয়া হবেওনা। হ্যাঁ! যুগের চাহিদায় এসবে সংযোজনের প্রয়োজন হতে পারে। অথবা এটিকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন কিছুর প্রয়োজন হতে পারে। কোনও পদ্ধতি আবিষ্কার হতে পারে। কিন্তু আমাদের যে মূল কাঠামো, সে কাঠামো আমরা নষ্ট করবো না।

পাথেয় : আপনি কওমী মাদরাসা নিয়ে সামনে কোনও শঙ্কা দেখছেন?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : শঙ্কা আমি দেখছি না। তবে এতটুকু ভাবনা আসে ‘হাইয়াতুল উলইয়ার’ যে চারটা ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। তা থেকে একটির ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন তুললে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাব। তা হলো ৬ বোর্ড মিলে গঠিত একটি কমিটি। তারমধ্যে এক বোর্ডেরই সভাপতি, সহসভাপতি পদাধিকার বলে হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান হবেন এ জিনিসটা একটা স্বেচ্ছাচারীতার মতো হয়। যে কেউ এর উপর প্রশ্ন তুলতে পারে, তখন আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়বো। এ ছাড়া আর কোনও শঙ্কা বা সমস্যা আমার মনে হয় না।

পাথেয় : আসলে আপনি কী চান? এ বিষয়টাকে এভাবে বলার উদ্দেশ্য কি আপনার! পরিষ্কার করে বলবেন?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আমি চাই এটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অবলম্বন করে সে প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা। এবং যে ছয় বোর্ড আছে, তারাও নিজেরা বসে পরামর্শের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান নির্ধারণ করতে পারেন। অথবা তারা বড়ো বোর্ড তাই তাদের থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলো। বাকী পাঁচ বোর্ড থেকে কো-চেয়ারম্যান নির্ধারিত হবে।

পাথেয় : আরেকটা বিষয় জানতে চাই আপনার কাছে। গত জোট সরকারের আমলেও কিন্তু এভাবেই নির্বাচনের আগেই স্বীকৃতি নিয়ে একটা ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আবারো এই নির্বাচনের আগেই স্বীকৃতির ঘোষণা হয়ে সংসদে বিল পাস হয়ে গলো। এ দুটি বিষয়কে আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : এটা পরিষ্কার বিষয়। বিএনপি, জোট সরকার একটা চাপের মুখে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছিলো। কিন্তু এখন যে স্বীকৃতি এলো এটা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতায় এসেছে। তারা অান্তরিক হয়ে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বরং যা দেরী হয়েছে তা আমাদের নিজেদের গড়িমসির কারণেই হয়েছে। এই সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা যেহেতু শুরু থেকেই ছিলো, তাই বিএনপি সরকার আর এই সরকারের স্বীকৃতির ব্যাপারে কোনও মিল নেই। তাই আগের সাথে বর্তমানের তুলনা করাটাই আমি অন্যায় মনে করি। তারা শুধু ভোটের রাজনীতির কারণেই চাপের মুখে তখন স্বীকৃতি দিয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে অনেক অাপত্তি ও কথা থাকার পরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার কারণেই সংসদে এটি পাস হলো।

পাথেয় : তাহলে কি আপনি বলছেন বেগম খালেদা জিয়ার কোনও সদিচ্ছা ছিলো না।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : না! কোনও সদিচ্ছা, কোনও অান্তরিকতা ছিলো না। এটি স্পষ্ট।

পাথেয় : আপনি তো কওমী সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন মান কমিটিতে কাজ করছেন, আপনার কি মনে হয় আমাদের ছেলেরা যে পড়াশোনা করছে তা করে কর্মমুখী জীবনে তারা কোনও সুযোগ সুবিধা লাভ করতে পারবে?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসলামী চিন্তক। তাই যেটা সরকারি হোক বা আধা সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক সেসব ইসলামি সেক্টরে আমাদের ছেলেরা ভূমিকা রাখতে পারছিলো না তাদের সনদের অভাবে। আলিয়া, বেদাতি, জামায়াতে ইসলামির সার্টিফিকেটধারী মৌলবীরা আবর্জনায় সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো ভরে ফেলেছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো আবর্জনা মুক্ত করাই আমাদের মৌলিক উদ্দেশ্য। সুতরাং এই সনদপত্রের কারণে আমাদের ছেলেদের অনেক কর্মক্ষেত্র তৈরী হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন ধর্মীয় বোর্ডে আমি শিক্ষক নিয়োগ করতে চাই। প্রায় ১ লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার শিক্ষক আমাদের দরকার। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তি দিলেই আসবে আমাদের শত্রুরা। যাদের আমরা পছন্দ করি না। যেহেতু কওমী মাদরাসার সনদ নাই। একারণে আমরাও তাদের সেখানে সেট করতে পারবো না। তো ওইখানে আমাদের ছেলেরা যেতে পারে না, শুধু সনদের অভাবের কারণে। ওইসব আবর্জনাযুক্ত এলাকাকেই মুক্ত করার জন্য আমরা কওমী স্বীকৃতির আন্দোলন করেছি। এখন অনেক কর্মসংস্থান আমাদের ছেলেদের জন্য সৃষ্টি হবে।

পাথেয় : আমরা কওমী সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের কথা জানি। আপনি নিজেও বলেছেন আপনি সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করছেন। তো প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় কওমী স্বীকৃতির যে বিলটি আমরা পাস হতে দেখলাম। আর আমরা জানি, আপনি অনেকগুলো মিটিং করেছেন, আন্দোলন, গণসংযোগ করেছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে আপনাদের কোনও এক্টিভিটি দেখছি না! আপনারা কোনও কিছু করবেন কী না?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আসলে আমরা প্রদর্শনীর জন্য এই মানসিকতা নিয়ে মাঠে ছিলাম না। এখনো তাই, আগামীতে এমন কোনও ইচ্ছা ও নেই। তবে জাতীর সামনে সঠিক ইতিহাসটুকু আসুক এটাই আমার ও আমাদের চাওয়া।

পাথেয় : শিক্ষা সনদ বাস্তবায়ন কমিটির তো অনেক অবদান। আপনাাদের চেষ্টা, কষ্ট, প্রচেষ্টার বদৌলতেই কিন্তু এই প্রাপ্তি।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : এটাতো আপনাদের সাংবাদিক মহলের কাজ। আপনারা যারা আছেন, তারা ময়নাতদন্ত করে এটা বের করবেন। জাতীর সামনে তুলে ধরবেন। তবে এ ক্ষেত্রে আমরাও আমাদের কিছু ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করি। সেটা নিয়ে আমি ইচ্ছা করেছি এই স্বীকৃতির আদ্যোপান্ত সঠিক ইতিহাস, আমাদের কিছু বক্তব্য ইউটিউবে ছাড়বো। যেন জাতীর জন্য এটি দলীল ও ইতিহাস হয়ে থাকে। সাথে এই স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ছাত্রদের নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি সংবর্ধনা দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

পাথেয় : এ ব্যাপারে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. এর সঙ্গে আপনার কোনও আলোচনা হয়েছে কী?

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : হ্যাঁ! হুজুরের সঙ্গে আমার অালাপ আলোচনা হয়েছে এবং হুজুরও নীতিগতভাবে এটাকে সমর্থন করেছেন। তবে কীভাবে এটিকে বাস্তবায়ন করা হবে এটি এখনো প্রক্রিয়াধীন।

পাথেয় : আরেকটা কথা যারা স্বীকৃতি দিলে লাশ ফেলে দেয়ার কথা বলেছিলো তখন। তারাই এখন মানববন্ধন, র।‌্যালী করে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : এ বিষয়ে তাদেরকে অভিনন্দন। তারা যে এই সত্যকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং আগে তারা যা করেছে ভুল করেছে এ কর্মকাণ্ডের দ্বারা তা তারা স্বীকার করলেন। আর ওই হুমকিটা তারা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দিয়েছিলো, আসলে তারা স্বীকৃতি চান না বিষয়টি এমন না। বরং তারা এই সরকারকে ক্রেডিট দিতে চাচ্ছিলেন না।তাই তারা এমন করেছিলো। যেটি তাদের ভোগাচ্ছিল এবং এখন তা স্বীকার করে তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করছে। এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।

02
মাওলানা ইয়াহয়া মাহমুদ। ছবি : শেখ মুহাম্মদ, ইকরা মাল্টিমিডিয়া, পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম, বৃহস্পতিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাথেয় : হুজুর, একজন প্রসিদ্ধ আলেম এই স্বীকৃতিকে পেশাবের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন!

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আসলে প্রসিদ্ধ আলেম, কিন্তু আলেমের কথা এতো নিম্নমানের হতে পারে না। ‘এই শিক্ষা সনদের উপর আমি পেশাব করি’ এটা কোনও আলেমের কথা হতে পারে না। আলেম অনেক বড়ো একটি শব্দ। এই তকমাধারী ব্যক্তির মুখ দিয়ে এমন অশালীন, যা শুনতেও শ্রুতিকটু, বিচ্ছিরি লাগে এমন কোনও বাক্য কোনও আলেমের মুখ দিয়ে বের হবে, তা আমি চিন্তাই করতে পারি না। যদি কেউ বলে থাকেন, তাহলে হয়তো তখন তার নিজেরই এ কথা মনে ছিলো না যে সে আলেম।

পাথেয় : আরেকটি প্রসঙ্গ! অন্যান্য ইউনিভারসিটিগুলোর শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করতে পারেন আমাদের এই সিলেবাসে কুরআনের উপরে, হাদীসের উপরে ইসলামিক স্কলারের উপরে এমন কোনও সুযোগ থাকবে কি না! যে এই সিলেবাসে পড়েও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করতে পারবে।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : নিশ্চয়! এই তো আমাদের কওমী মাদরসার ছাত্র আল্লামা মোস্তাক আহমেদ। উনি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। আমাদের ছেলেদেরও আমরা এমন সুযোগ করে দিতে পারবো।

পাথেয় : ডক্টর মোস্তাক সাহেব তো ঢাকা ইউনিভারসিটির আন্ডারে করেছেন। বলছিলাম, আমাদের কওমী মাদরাসায় পড়ে এটার সম্ভাবনা কতটুকু! এখন তো স্বীকৃতি হলো।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আমরা কেবল যাত্রা শুরু করলাম। আসলে ওই পর্যায়ে যেতে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়! অন্যদিকে আমরা মাত্র শুরু করলাম। এখনি আমাদের ডক্টরেট ডিগ্রী আনতে যাওয়াটা আমি সঠিক মনে করি না। আমরা সামনে চলি। সবকিছু সময়ই বলে দিব।

পাথেয় : কওমী সনদের স্বীকৃতি বিল পাস হওয়ার পরে, আপনি আপনার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন!

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো। আমরা কখনোই হীনম্মন্যতাগ্রস্থ ছিলাম না। কখনো এর স্বীকার হওয়াও উচিৎ নয়। কিন্তু আমাদের সমাজের অবস্থাটাই এমন। আমাদের ছেলেরা মনে করে আমরা এই পড়াশোনা করে যাবার পর আমাদের তো কোনও সামাজিক মান-মর্যাদা নেই। এই একটা বিষয় ছিলো হীনম্মন্যতাবোধের। এখন আর সেটা নেই। তাই তোমাদের হীনম্মন্যতায় ভোগার কোনও কারণ নেই। তোমরা আত্মমর্যাদা সম্পন্ন হও যে, আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর দ্বীনি ইলমের সাথে সাথে লোক দেখানো যে মর্যাদা সেটিও আমাদের অর্জন হয়ে গেলো। সুতরাং তোমাদের এই কওমী মাদরাসা নিয়ে আমি বলতে পারি, এই কওমি মাদরাসা দুনিয়াবী অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সমৃদ্ধ হয়ে গেলো, যেখানে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টি এসে গেলো। সুতরাং শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হবার আহ্বান জানাই।

পাথেয় : হযরত, সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।


গ্রন্থনা : কাউসার মাহমুদ

স্বীকৃতি নিয়ে মাওলানা ইয়াহয়া মাহমুদের ভিডিওটি দেখতে পারেন…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *