সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধ করতেই হবে

সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধ করতেই হবে

মাসউদুল কাদির ● মানুষের জীবনের নিরাপত্তার প্রতি সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্বিকার অবহেলার দৃষ্টান্ত প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি, অন্তত বিদ্যমান আইন-কানুন মেনে শৃঙ্খলা আনার প্রতিও প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। সড়কে চলছে অব্যাহত মৃত্যুর মিছিল, এ মিছিল থামানো যাচ্ছেই না। গত রোববার স্বাধীনতা দিবসের সকালে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর মহাসড়কে দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুরে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে স্থানীয়ভাবে ‘আলমসাধু’ নামের বৈধতাহীন মোটরযানে গাদাগাদি করে চলা দিনমজুরদের ১৩ জনের মৃত্যু এক মর্মান্তিক অধ্যায় রচনা করেছে।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে এক জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা মোট ২৩। এর দু’দিন আগে ট্রাকে সিমেন্টের বস্তার ওপরে বসে যাওয়ার সময় ময়মনসিংহের ভালুকায় উল্টে পড়ায় মারা গেল এক পরিবারের পাঁচজনসহ ১০ জন শ্রমজীবী মানুষ। সেদিনও ছয় জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১৭। এমনই চলছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য, ২০১৪-১৬ প্রতি বছর কমবেশি সাড়ে আট হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। পঙ্গু ও আহত ১৮ হাজারের মতো। সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের মতো প্রতিভাবান মানুষের মৃত্যু জাতির প্রভূত ক্ষতি করেছে।

প্রবল আলোড়নও হয়েছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত বাস-ট্রাক-নছিমন-করিমন দুর্ঘটনায় অতি সাধারণ গরিব মানুষ মারা যায় বলেই কি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে মাথাব্যথা নেই? একেকটি মৃত্যু একাধিক পরিবারকে বিধ্বস্ত করে দেয়। শ্রমজীবী মানুষগুলোর মৃত্যুও জাতীয় ক্ষতি। প্রতিদিন এমন অপঘাত মৃত্যু জাতির মনস্তত্ত্বের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। আমরা জানি, রাস্তা তথা অবকাঠামোর সমস্যা আছে। কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আইন, নিয়মবিধি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কেন মানুষ মরবে? কেন ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলবে? কেন লাইসেন্স ছাড়া চালক থাকবে? কেন হেলপার গাড়ি চালাবে? কেন চালক একটানা ১৫-১৬ ঘণ্টা চালিয়ে ঘুমচোখে মানুষ মারবে? সাধারণ নিয়ম-নীতি লঙ্ঘনকে প্রশ্রয় দিয়ে সড়ক পরিবহনকে নৈরাজ্যে নিক্ষেপ করায় দু’একজন মন্ত্রীর ভূমিকা বহুল আলোচিত। মন্ত্রী কেন শ্রমিক নেতা ও মালিক নেতা থাকবেন? গত সোমবার মন্ত্রিসভায় গৃহীত একটি নতুন সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় চালকদের অষ্টম শ্রেণি পাস হওয়ার শর্তসহ আরও কিছু বিধান করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনগুলো যেভাবে অবজ্ঞা করা হয় তাতে নতুন আইন করাই যথেষ্ট হবে কি? বইয়ে, খাতায় বা ডায়েরিতে পড়ে লাভ নেই। বাস্তবজীবনে এসব আইনের বাস্তবায়ন জরুরি।

প্রয়োজন একটি সর্বাত্মক উদ্যোগ। যে উদ্যোগ সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাবে। মানুষ বোধ করবে সড়কে খানিকটা নিরাপত্তা। যারা দায়িত্বশীল আছেন, তাদের দিকে সাধারণ মানুষ চেয়ে থাকেন বছরের পর বছর। যাদের বলার মতো কেউ নেই। তাদের বক্তব্য শোনার মতোও কেউ নেই। সড়ক নিরাপদ হলে যে দেশ বাঁচবে তা হলফ করেই বলা যায়। তাই আশা করবো, আইনের সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মৃত্যু মিছিল থামাতে উদ্যোগী ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *