হঠাৎ কিডনি বিকলের কারণ ও প্রতিকার

হঠাৎ কিডনি বিকলের কারণ ও প্রতিকার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ কিডনি। পিঠের নিচের দিকে মেরুদণ্ডের দুই পাশে একটি করে শিম বিচির আকৃতির অঙ্গের নাম কিডনি বা বৃক্ক।

কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। পিঠের নিচের দিকে মেরুদণ্ডের দুই পাশে একটি করে দুটি শিম বিচির আকৃতির অঙ্গটিই কিডনি বা বৃক্ক, যার আকৃতি ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটারের মতো।

প্রতিটি কিডনির ভিতরে লাখ লাখ কোষ থাকে, যা নেফ্রন নামে পরিচিত। কিডনি অকেজো হলে শরীরে দূষিত পদার্থ জমে যায়, ফলে নানান উপসর্গ দেখা দেয়। কিডনি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শরীরে রক্ত তৈরি করতে সহায়তা করে।

ফলে এই অঙ্গটি স্বাভাবিক না থাকলে রক্তশূন্যতা, রক্তচাপ বৃদ্ধিসহ শরীরে দেখা দেয় বহু সমস্যা। জীবন হয় ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে কিডনির কিছু হলে সেটি ভীষণ ভয়ের। তবে চিকিৎসা ও যথাযথ পদক্ষেপ পারে কিডনি ভালো রাখতে।

কিডনি ভালো রাখার কিছু পরামর্শ জানিয়েছেন ভারতের অ্যাপলো হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নীতীশ জৈন।

কিডনি বিকলের লক্ষণ

ধীরে ধীরে কিডনি অকার্যকর হওয়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে বর্জ্যও জমতে থাকে। এটিই শরীরে প্রভাব ফেলে।

কিডনি বিকলের কয়েকটি লক্ষণ হচ্ছে, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধা না পাওয়া, গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি, প্রস্রাবের রক্তক্ষরণ, পেশীতে খিঁচুনি এবং মাথা ব্যথা।

এসবের কোনোটা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ভারতের হায়দ্রাবাদের যশোদা হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শশী কিরণ এ বলেন, একিউট কিডনি রোগটি হঠাৎ করে কিছু বোঝার আগেই হয়ে যায়। আকস্মিক কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত ডায়রিয়া, বমি বা মাত্রাতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে শরীরে পানিশূন্যতা। এছাড়া যে কোনো কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। পাশাপাশি নেফ্রাইটিস বা জীবাণুজনিত ইনফেকশন, সেপটিক শক, ডেঙ্গু জ্বর, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া এবং গর্ভকালীন জটিলতায়ও আকস্মিক কিডনি রোগের কারণ।

ক্রনিকের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কিডনি রোগ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসজনিত অথবা উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়। এ ছাড়া ক্রনিক নেফ্রাইটিক সিনড্রমের কারণেও এ ধরনের কিডনি রোগ হতে পারে। সময়মতো কিংবা যথাযথ চিকিৎসা না করালে আকস্মিক কিডনি রোগও ক্রনিক রোগে পরিণত হতে পারে।

  • বাঁচার উপায়

ডায়ালাইসিস

একটি যন্ত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য ফিল্টার করার প্রক্রিয়াকে ডায়ালাইসিস বলা হয়। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা শরীর থেকে বর্জ্য, অতিরিক্ত পানি ও লবণ অপসারণ করেন।

প্রতিস্থাপন

কিডনির অবস্থা অতিরিক্ত খারাপ হলে এটি প্রতিস্থাপন করতে হয়। এজন্যে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির কিডনি বাদ দিয়ে সুস্থ কার্যকরী কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

এছাড়াও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে, কিডনি রোগ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যায়। যথাসম্ভব কেমিক্যালযুক্ত খাবার পরিহার করা। সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার ও লবণ কম খাওয়া, সবুজ-শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খাওয়া এবং পরিমিত পানি পান করা।

কিডনি ফেইলিউর হলেই তা হয় ব্যাপক ও মারাত্মক। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। অনেকাংশে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নষ্ট না হওয়ার আগে কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। কিডনি সামান্য খারাপ হলে তা অনেক সময় বোঝা যায় না। তবে একটু সচেতন হলেই এবং লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রার প্রণালি বদলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে চললে কিডনি বিকল হওয়ার কারণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা খুব জরুরি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *