হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক : অবৈধ বিয়ের প্রতি ঝুঁকবে দেশ
মাওলানা আমিনুল ইসলাম :: এনজিওকর্মীদের কিছু কিছু খেদমত প্রশংসনীয়। মানবসেবায় অনেক অবদান তারা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। অসহায় নিপীড়িত মানুষের খেদমতে নিয়োজিত তারা। বহু জায়গায় তারা মানুষের পাশে দাঁড়ায়। খুব ভক্তি ভালবাসা নিয়ে মানুষের খেদমতে কোরবান হয়ে যাচ্ছে তারা।
কিন্তু এই অতিভক্তি নিয়ে খেদমত করতে গিয়ে হারাম- হালাল বাছাই করতে পারছে না। কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম, এটা বোঝার সক্ষমতা তাদের নেই।
আলেম- উলামার দেশ বাংলাদেশ। একটি মুসলিম অধ্যুষিত এরিয়া। এখানে কোনটা হারাম আর কোনটা হালাল, এব্যাপারে আলেমদের সাথে মতবিনিময় করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটা না করে একটা “হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক” স্থাপন করে ফেলল তারা। যেটা খুবই দুঃখজনক।
এনজিওকর্মীদের পরামর্শ দেব। এব্যাপারে আলেমদের সাথে মত বিনিময় করুন। যেহেতু একটা ইসলামী কান্ট্রি। এখানে হারাম – হালালের ব্যাপারে আলেমদের পরামর্শ জরুরি।
দেখুন! আমরা মানুষ। আমরা কিন্তু পশু নই। মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য রাখতে হবে। পশু যার দুধ পান করে, আবার তার ওপরে সওয়ার হয়। সেই দুধ পান কারিনীর সাথে সেক্স করতে দ্বিধাবোধ করে না।
কিন্তু আমরা মানুষ। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, লা কাদ খালাক নাল ইনছানা ফি আহছানি তাকয়িম” “আমি মানুষকে সুন্দর অবয়বে তৈরী করেছি। (সূরা ত্বীন)
সুতরাং মানুষ আর জানোয়ারের মধ্যে পার্থক্য রাখতে হবে। মানুষকে পশুর কাতারে নেওয়া যাবে না। পশু যে কাজ করে, সে কাজ মানুষে করতে পারবে না।
ইসলামের দৃষ্টিতে যে বাচ্চাটি কোন মহিলার দুগ্ধ পান করবে, তখন সে মহিলার সাথে তো বিবাহ হারাম হবে, সেই সাথে ঐ মহিলার ছেলে-মেয়ে গুলো দুগ্ধ পান কারীর শিশুর দুধ ভাই- বোন ছাবেত হয়ে যাবে। আর ঐ দুধ পানকারী বাচ্চার সাথে তার দুধ ভাই -বোনদের বিবাহ হারাম।
“হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক” নামে যে সিষ্টেম চালু হয়েছে, এটা অস্পষ্ট একটা বিষয়। সেখানে বিভিন্ন মহিলার দুধ জমা হবে। কোন জায়গার, কোন এলাকার মহিলার দুধ জমা হচ্ছে, সেটাতো অস্পষ্ট। সুতরাং কোন একটা বাচ্চা যখন দুধ পান করবে, সে কোন মহিলার দুধ পান করেছে, সেটা অজানা।
ভবিষ্যতে ঐ দুধ পানকারী বাচ্চা যখন বড় হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এমন হতে পারে, সে যে মায়ের দুধ পান করেছিল, তার সন্তানদের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এমনও হতে পারে, সে যে মহিলার দুধ পান করেছিল, সেই মহিলাকে বিয়ে করারও সম্ভাবনা থেকে যায়।
একটা হারাম কাজের দিকে ধাবিত হয় এই মিল্ক ব্যাংকের সিষ্টেম। মায়ের সাথে বিবাহ বন্ধনের সম্ভাবনা, দুধ পানকারী ভাই- বোনের সাথে বিয়ের সম্ভাবনা রয়ে যায়। যেটা একদম হারাম, সেই কাজের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে।
পশুদের স্বভাব তো মায়ের সাথে সেক্স করা, আপন ভাই- বোনদের সাথে সেক্স করা, ঠিক এই মিল্ক ব্যাংকের পদ্ধিতিতে সেই গর্হিত কাজের দিকে আহবান হচ্ছে।
মানুষ আর পশুর মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য রাখা প্রয়োজন। মানুষকে পশুর কাতারে নেওয়া যাবে না কোনদিন।
এই ধরনের হারাম কাজ থেকে বেঁচে না থাকলে, আমাদের এই মুসলিম জাতির অধঃপতন অনিবার্য। হারামে যখন দেশটা ভরে যাবে, মানুষ আর পশুর মাঝে যখন কোন তফাৎ থাকবেনা, তখনই এই জাতি ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।
এনজিও ভাইয়েরা একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন, কোন মুসলিম দেশে এই মিল্ক ব্যাংক পদ্ধতি চালু নেই। আর মুসলিম বিশ্বের কোন আলেম এটাকে সমর্থন করেননি।
বিশ্বের খ্যাতনামা আলেম ও ফকীহ গণ এই মিল্ক ব্যাংক সিষ্টেমকে না জায়েজ বলেছেন। কোন আলেম এটাকে জায়েজ ফতোয়া দেয়নি।
মুসলিম বিশ্বের এক গ্রহণযোগ্য সংস্থা, ওআইসি। এই সংস্থার ফতোয়া বোর্ড মিল্ক ব্যাংক পদ্ধতিকে না জায়েজ বলেছেন। সুতরাং এনজিও ভাইদের ভাববার বিষয়। তাদের অনেক চিন্তা করতে হবে। যেখানে ওলামায়ে কেরাম অবৈধ হওয়ার পক্ষে, তাই মিল্ক ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হোক, এই কামনা রইল।