হেফাজত আন্দোলন; নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ

হেফাজত আন্দোলন; নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ

হেফাজত আন্দোলন; নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ

আবুদ্দারদা আব্দুল্লাহ ❑ বর্তমান সরকারের নারীনীতি ও শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই বলে আসছে যে, তারা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন।

হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই একটা আন্দোলন বাদে তারা মাঝখানে দুইবছর নিস্ক্রিয় ছিলো। ২০১৩ সালে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কটূক্তিকারী কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলাম গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় লংমার্চ করে এবং শাপলা চত্বরে জমায়েত শেষে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে। তারা দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে এক মাস সময় বেঁধে দেন। সে মোতাবেক গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ করা হয় এবং অবরোধ চলাকালেই দলের নীতিবিরোধী কয়েকটা ভুল করে বসেন তারা। যার কারণে তাদের কোন দাবী দাওয়াই আলোর মুখ দেখেনি।

৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ব্যর্থ হওয়া এবং গভীর রাতে তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের বাধ্য হয়ে আক্রমণ করার অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের আমির বা দলনেতার নির্দেশ অমান্য করা। হেফাজতে ইসলাম যেহেতু একটা অরাজনৈতিক ইসলামি দল এবং তাঁরা নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে সর্বাঙ্গে মানেন সুতরাং আমি কুরআন এবং নবিজির হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাস থেকে হেফাজতে ইসলামের ভুল এবং তাদের ব্যর্থ হওয়া সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘ঝগড়া ফাসাদ, দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ (সূরা বাক্বারা-১৯১)

তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে ইসলামের দ্বিতীয় যুদ্ধ ওহুদ সংঘটিত হয়। মদিনার মসজিদে নববি থেকে উত্তরে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওহুদের প্রান্তর। বদর যুদ্ধের ঠিক এক বছর পর ওহুদ যুদ্ধ হয়। মক্কার অমুসলিম ও মদিনার মুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী সাথী তথা সাহাবায়ে কেরামকে অনেকগুলো নির্দেশ দিলেন। তার মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের নেতৃত্বে ওহুদের প্রান্তরে ছোট্ট আকারের পাহাড় জাবালে রুমা অর্থাৎ রুমা পাহাড়ে নবীজি ৫০ জন তিরন্দাজ সাহাবিকে নিযুক্ত করে বলেছিলেন, আমাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তোমরা এখানে থাকবে।

রাসুল (সা.) তাঁদেরকে আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর নেতৃত্বে থাকার নির্দেশ দিলেন। যুদ্ধের শেষদিকে শত্রু বাহিনীকে পালাতে দেখে নিজেদের জয় হয়েছে ভেবে তাঁরা নবীজির নির্দেশনার কথা ভুলে যান এবং গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু নবীজির নির্দেশ উপেক্ষা করার মাশুল তাঁদের দিতে হলো। যখন তিরন্দাজরা গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন, তখন অমুসলিম বাহিনী গিরি অতিক্রম করে মুসলমানদের পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতিতে মুসলমানরা দিগ্বিদিক ছুটতে লাগলেন।

অমুসলিমদের আক্রমণে হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা:) ও নবীজির চাচা হজরত হামজা (রা:) শহীদ হন। নবীজি (সা:) আহত হয়েছিলেন। শুধু হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ অমান্য করার কারণে নিশ্চিত জয়ী হওয়া যুদ্ধে মুসলমানরা হেরে যান। এই যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবি শাহাদত বরণ করেন। তাঁদের সবাইকে ওহুদ প্রান্তরে দাফন করা হয়। ওহুদ যুদ্ধে যেসব শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুরা আল-ইমরানের ১২১ নম্বর আয়াত থেকে শুরু করে ১৬০ নম্বর আয়াতের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে মুসলমানদের রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা অমান্য করা, মতভেদ করা এবং ছত্রভঙ্গ হওয়ার মন্দ পরিণাম সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া, যাতে তারা ভবিষ্যতে সতর্ক হয়ে যায় এবং যেসব বিষয় তাদের পরাজয়ের কারণ হতে পারে, তা থেকে বিরত থাকে।

হেফাজত নেতৃবৃন্দ নবিজি সা.-এর হাদীস মানার ক্ষেত্রে দুইটা অমান্য বা অবমাননা করেছেন।

৫ মের দিনে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের অনুমতি ছিলো বিকাল পর্যন্ত এবং সন্ধ্যার আগেই হেফাজত আমীর আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের মোনাজাতের মাধ্যমে উক্ত সমাবেশ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু শফী সাহেব নির্ধারিত সময়ে আসতে পারেননি যার কারণে মোনাজাতও হয়নি। শফী সাহেবের স্টেজে না আসতে পারার কারণ ভিতরের তথ্য অনুযায়ী যা জানা যায় তা হচ্ছে , দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করার জন্য একদল বিপথগামী তাঁকে হত্যা করে আওয়ামী লীগের উপরে দোষ চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো, তাতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা হেফাজত আমিরের মৃত্যুর কারণে বিরাট আন্দোলনের ডাক দিতো যার দরুণ দেশে একটা অরাজকতা তৈরি হয়তো যা তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম করতো। কিন্তু আল্লাহ পাকের রহমতে আমাদের চৌকস গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা এই ভয়ংকর ষড়যন্ত্র টের পেয়ে শফী সাহেব হুজুরকে হেলিকপ্টারে করে চিটাগং পাঠিয়ে দেন। বিপদগামীরা তাদের এই চাল ব্যর্থ হওয়ায় হয়তো হেফাজত নেতৃবৃন্দকে বুঝিয়েছে যে, শফী সাহেবকে সরকার ইচ্ছা করে মঞ্চে আসতে দেয়নি। সুতরাং তাঁকে আসতে না দেয়ার প্রতিবাদ স্বরূপ শাপলা চত্বরেই অবস্থান করা হোক। হেফাজতের লোকদের সন্ধ্যার পরে অবস্থানের দ্বারা ঐ সন্দেহটা পাকাপোক্ত হয়। শফী সাহেব যেহেতু আসতে পারেননি সুতরাং ঐ মুহুর্তে নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস অনুযায়ী শফী সাহেব হুজুরের স্থলাভিষিক্ত কেউ মোনাজাত করে সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা দিলে সবচেয়ে ভালো হতো। তাতে করে হেফাজত কর্মী তথা সরলমনা মুসলমানও হতাহত হতেন না এবং সবকিছু নির্বিঘ্নে হতো এবং দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারও নমনীয় হতো কিন্ত দুঃখজনক হলো, রাসুলল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসকে সেখানে একদমই মানা হয়নি। হেফাজত নেতৃবৃন্দ নবিজির হাদীস মানার ক্ষেত্রে দুইটা অমান্য বা অবমাননা করেছেন, একে তো আমিরের হুকুম না থাকা সত্বেও সেখানে তারা সন্ধ্যার পরেও অবস্থান করেছেন। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রের সিস্টেমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। কারণ সরকার কতৃক তাদের সময় ছিলো সন্ধ্যা পর্যন্ত কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও সরকারের নির্দেশকে অমান্য করে তারা সেখানে অবস্থান করেছেন। অথচ হাদীসে স্পষ্ট এসেছে যে, হযরত ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের (তার শাসনকর্তার নির্দেশ) শোনা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য; তার মনঃপূত হোক বা না হোক, যতক্ষণ না তাকে গুনাহের দিকে নির্দেশ করে। কিন্তু যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তা শোনা ও আনুগত্য করা কর্তব্য নয়। (বুখারী ৭১৪৪, মুসলিম ১৮৩৯, আবূ দাঊদ ২৬২৬, তিরমিযী ১৭০৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৯৩, আহমাদ ৬২৭৮।)

সুতরাং হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ উক্ত ঘটনার দ্বারা শাসকের আইন ভঙ্গ করেছেন যা সুস্পষ্ট হাদীসের খেলাফ যার দরুণ হেফাজতের সমাবেশের অবস্থা উহুদের যুদ্ধের মতো হয়েছে এবং মাদ্রাসার অনেক কোমলমতি ছাত্ররা হতাহত হয়েছে যার দায় সম্পূর্ণ হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের। তাঁরা যদি উহুদের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতেন তাহলে বিচ্ছিন্ন দুই একটা ঘটনা ছাড়া সেদিন বড় ধরনের কিছুই ঘটতো না এবং সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হতো না।

কুরআন এবং হাদীস থেকে এই সমস্ত দলীল উল্লেখ করতাম না যদি হেফাজতে ইসলাম নিজেদেরকে ইসলামি দল দাবী না করতো কিন্তু তারা যেহেতু ইসলামি দল সেই হিসেবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রতিনিধি হওয়া সত্বেও হাদীস অমান্য করার জন্য এবং তৃতীয় হিজরির উহুদের ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেওয়ায় হেফাজত নেতৃবৃন্দের অনুতপ্ত হওয়া এবং নিজেদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু দুনিয়াতে থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার পরেও নিজের আত্মসমালোচনা করেছেন। তাঁর শাসনামলে একটা কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় তার জন্যও আল্লাহ পাকের কাছে জবাবদিহিতার ভয় করেছেন সুতরাং উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর জীবন থেকে কি শাপলা চত্বরের আন্দোলনকারীদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু নেই? হেফাজতের নেতৃবৃন্দের শিক্ষনীয় কিছু নেই?

যে লোক মিছিলের অগ্রভাগে “নারায়ে তাকবির” বলে শ্লোগান দিচ্ছিলো তার কানে ছিলো দুল এবং হাতে ছিলো লোহার চুড়ি এবং চেহারাটা একটু অন্যরকম টাইপের।

হেফাজতের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পিছনে অনেকের দায় আছে। তার মধ্যে জামায়াত-বিএনপির দায় কোন অংশেই কম নয় এবং এর জন্য আল্লাহ পাকের কাছে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। তারা সরলমনা মুসলমানের আবেগ নিয়ে খেলা করেছেন। হেফাজতের শাপলা চত্বরের আন্দোলনের উত্থান বা সূচনা মূলত ১৩ই মার্চের লংমার্চ থেকে। আমি ঐ লংমার্চে অংশগ্রহণ করার জন্য গিয়েছিলাম। বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন দেখি বিএনপির একজন নেতা সম্ভবত জনাব হাবিবুর রশিদ হাবিব তরমুজ কেটে কেটে খাওয়াচ্ছেন সাথে বোতলজাত পানি এবং ওরস্যালাইন। সাথে সাথে উৎসাহ দিয়ে তিনি বলছিলেন, আন্দোলন সফল করতে হবে ঠিক আছে? জয় আমাদের আসবেই আসবে। তিনি উৎসাহ উদ্দীপনা মূলক আরো অনেক কথা বলেছিলেন সেগুলো মনে নেই।

ঐদিন দুপুরের দিকে বিশাল বড় একটা মিছিল দেখলাম। যে লোক মিছিলের অগ্রভাগে “নারায়ে তাকবির” বলে শ্লোগান দিচ্ছিলো তার কানে ছিলো দুল এবং হাতে ছিলো লোহার চুড়ি এবং চেহারাটা একটু অন্যরকম টাইপের। তখনই মূলত আমার সন্দেহ জেগেছে যে ইমানের দাবীর পক্ষে সরলমনা মুসলমানদের ভিতরে সন্দেহজনক কিছু দুষ্কৃতকারী লোক ঢুকে গিয়েছে এই মহাসমাবেশকে বানচাল করার জন্য কারণ “নারায়ে তাকবিরে”র শ্লোগান কানে দুল এবং হাতে চুড়ি পরিহিত লোকের দেয়ার কথা না। পরে মিছিলে অংশগ্রহণকারী একজনের কাছে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে ঐটা ছিলো বিএনপির মিছিল।

হেফাজতের আন্দোলন যখন ব্যর্থ হলো তখন বিএনপির লোকেরা এহেন কোন খারাপ গালিগালাজ নেই যা হেফাজতের আমিরকে উদ্দেশ্য করে করেননি। সেটা থেকেই বোঝা যায় হেফাজতের আন্দোলনের পিছনে কলকাঠি কারা নেড়েছে। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফী সাহেবকে গালিগালাজ করে তারা এখানেই ক্ষান্ত দেয়নি বরং বর্তমান সরকার কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের সমমান দেয়ায় আহমদ শফী সাহেব হুজুরের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শুকরানা মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। তার জন্যও বিএনপির নেতারা অপপ্রচার করেছেন। অথচ শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিলো মূলত সরকারের কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য কারণ কাউকে উপকার করার পরে কৃতজ্ঞতা আদায় না করলে আল্লাহ পাক কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কুরআন পাকে বলেছেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন।’ (সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৭)

আল্লাহ পাকের কুরআনের কথার আমল করতে যেয়ে মূলত আল্লামা শফী সাহেব শুকরানা মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন এবং তিনি সেটা মিডিয়াতেও স্পষ্ট করে বলেছেন। সুতরাং বিএনপির উচিত ছিলো এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানানো কারণ তারা তাদের আমলে এই স্বীকৃতি নিয়ে অনেক গড়িমসি করেছে এবং তাদের জোটের অন্যতম শরীক শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হককে জেলে পর্যন্ত ঢুকিয়েছে।

একজন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের মানুষের এমন দ্বিমুখী আচরণ কেন?

দুঃখের বিষয় হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক দেয়া কওমির স্বীকৃতিকে তারা স্বাগত না জানিয়ে উল্টো হুজুরদেরকে নিয়ে বিষোদগার করেছেন এবং আহমদ শফী সাহেব হুজুরের মতো একজন শ্রদ্ধাভাজন মানুষকে ল্যাংটা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছে ফটোশপ এডিটের মাধ্যমে। তাদের এই গালিগালাজের ধারা এখনো অব্যাহত আছে। বিএনপির সদস্য জনাব গোলাম মাওলা রনি সাহেব সেদিন এক ভিডিও বার্তায় জামায়াতের নায়েবে আমীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে আজীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের মুক্তি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। মুক্তি চাওয়ার কারণ, তিনি বয়োবৃদ্ধ এবং একজন আলেম। তাকে মুক্তি দিয়ে দোয়া করালে দোয়া কবুল হবে অথচ তার কিছুদিন আগে তিনি আলেমদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে যেয়ে “কাঠমোল্লা” বলে জঘন্য ভাষায় গালি দিয়েছেন। অথচ যাদেরকে কাঠমোল্লা বলে গালি দিলেন তাদের কাতারে সাঈদী সাহেবও পড়েন কারণ তার ভাষায় সাঈদী সাহেব বিরাট আলেম। সুতরাং এই বিরাট আলেমকে একমাস আগে বললেন কাঠ মোল্লা আর একমাস পরে যেয়ে তাকে দাবী করলেন দোয়া কবুল হওয়া বুজুর্গ। ভীষণ আশ্চর্য লাগে। একজন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের মানুষের এমন দ্বিমুখী আচরণ কেন? আর বিপদ থেকে দোয়া কবুল শুধুমাত্র সাঈদী সাহেবের ক্ষেত্রে হবে কেন?

ইসলামী শরীয়তে এমন কোন কথা তো নেই। যে কারো দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ পাক সবচেয়ে দয়ালু। তাঁর কাছে কোন ডিভাইড নেই, কোন পার্থক্য নেই। সবাই তাঁর কাছে সমান। মিথ্যা প্রভুত্বের দাবিদার যে ব্যক্তি তার জন্যও উন্মোচিত আসল প্রভুর রহমতের দুয়ার।আল্লাহ পাকের সুস্পষ্ট ঘোষণা, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না সন্দেহ নেই, আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন নিশ্চয়ই তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা যুমার (৩৯) : ৫৩)

যারা নিয়মিত নামাজ রোজা আদায় করেন, তাদের যেহেতু দোয়ার কথাগুলো ভালো করে জানা এবং মুখস্থ এই কারণে সবাই তাদের পিছনে হাত তুলেন। এখানে গোলাম মাওলা রনি সাহেব ইসলামের বড় একটা বিষয় দোয়ার ব্যাপারেও মানুষের মনে নেগেটিভ ধারণা দিয়েছেন যা কোনভাবেই কাম্য নয়। কারণ দোয়ার বিষয়টা যেহেতু ধর্মীয় ব্যাপার, এদেশের মানুষও ধর্মপ্রাণ এবং ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়গুলোও খুব সেন্সেটিভ। সুতরাং এইসব বিষয়ে রনি সাহেবের কথা না বললেই ভালো হতো বরং এ বিষয়ে কথা বলবেন বাংলাদেশের যোগ্য মুফতিয়ানে কেরাম। সরকারের উচিত হবে ফতোয়া দেয়ার বিষয়ে আইন প্রনয়ণ করে নির্দিষ্ট কয়েকজন বিজ্ঞ মুফতি সাহেবদের তত্ত্বাবধানে একটা ইফতা বোর্ড গঠন করা এবং এই বোর্ডের বাইরে কেউ ফতোয়া দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

মোদ্দাকথা: হেফাজতের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পিছনে বিএনপির যেমন বিরাট দায় আছে তেমনি হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দেরও দায় আছে । বিএনপি যে উপকার করার কথা বলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং হেফাজতে ইসলামের বিরাট ধরনের ক্ষতি করেছে সেটাও হেফাজতকে স্বীকার করতে হবে সাথে সাথে হেফাজত নেতৃবৃন্দের নিজেদের আত্মসমালোচনাও করতে হবে। ভুল শুদ্ধ নিয়েই মানুষ সুতরাং আত্মসমালোচনা দোষের কিছু না। শুভবুদ্ধির উদয় হোক এটাই কামনা।

লেখক : প্রবন্ধকার, গল্পকার ও শিক্ষক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *