হোক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

হোক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

মহান বিজয় দিবস

হোক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :: দগদগে নয় মাসের ক্ষতস্থানে যেদিন অসামান্য প্রশান্তি যোগ হয়েছিল সেই গৌরবময় বিজয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল নতজানু পাকহানাদার বাহিনী। চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।বিজয় দেশের প্রতিটি প্রাণে এনেছিল আনন্দ। রাজাকার, আলবদর, আলশামস আর ঘৃণ্য পাকিদের দোষর ছাড়া সবার মনেই জেগে ওঠেছিল অনাবিল সুখ ও তৃপ্তি। আমরা মনে করি, স্বজন হারিয়েছেন যারা তাদের বেদনায় প্রলেপ স্বরূপ এই ষোল ডিসেম্বর।

অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল লালসবুজের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগীপ্রাণদাতাদের, শহীদদের; যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদেরও।

দেশের মানুষ নয় মাস চরম বিভীষিকাময় অবস্থায় কাটালেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্সের ময়দানে ‌মুক্তির বার্তা দিয়ে তখন থেকেই পাকিদের শূলে পরিণত হন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে আটক করে পাকিস্তানে নিয়ে তারা। চরম অন্ধকার প্রকোষ্টে আটকে রাখে নয় মাস। বঙ্গবন্ধুকে আঁতাতের প্রস্তাব দিয়েও গলাতে পারেননি শেষে ভুট্টু খান। শেষে শির উঁচু করে বাংলাদেশে ফিরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এতে ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী রহ.-এর অবদানও। ইন্দিরাকে বাংলাদেশের পক্ষে সহযোগিতার জন্য তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

যারা যেভাবে শ্রম দিয়েছেন, দেশের জন্য লড়াই করেছেন, জনমত তৈরী করেছেন, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন, সবাইকেই আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। স্মরণ করছি কোটি কোটি মানুষকে যিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

আমরা জানি, এ দেশের স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে। ৪৮ বছরের এ পথপরিক্রমায় সে স্বপ্নের কতটা পূরণ হয়েছে, আজ সে হিসাব মেলাতে চাইবে সবাই। এর মধ্যে আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই মোকাবেলা করতে হয়েছে। রাজনীতি এগিয়েছে অমসৃণ পথে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। জনবহুল ও সীমিত সম্পদের এ দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলার কাজও সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কঠিন দিনগুলোয় রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র চালু করতে হয়েছিল।

ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে নিঃসন্দেহে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যত্নবান। তবেই বিজয় হয়ে উঠবে অর্থবহ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত। পরাজিত শক্তি বার বার মাথা উঁচু করে কথা বলতে চায়। যুদ্ধাপরাধীকে তারা বলতে চায় শহীদ। এটা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সবার সামনে তুলে ধরাই হবে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রকৃত জবাব।

অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। রক্তক্ষয়ী যে সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, যে বিজয় লাভ করেছি, এ থেকেই আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।এ সময় এসে আমরা বিভেদ ভুলে যেতে চাই।সবাই মিলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারই হোক বিজয় দিবসের একান্ত ভাবনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *