আখেরাতে হাতপা কীভাবে সাক্ষী দেবে?

আখেরাতে হাতপা কীভাবে সাক্ষী দেবে?

আব্দুল্লাহ হবিগঞ্জী
মাধবপুর, হবিগঞ্জ।

প্রশ্ন : আমরা লোকমুখে শুনি কিয়ামতের দিন আমাদের হাত পা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে। কথাটি কতটুকু সত্য? কুরআন হাদিসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : আমাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি কথা, আমাদের উঠা-বসা, চলা-ফেরা সবকিছুর ভালো-মন্দের থাকছে চারটি সাক্ষী। আমরা যেখানেই থাকি; আলোতে বা আঁধারে, জনসমাবেশে বা লোকচক্ষুর অন্তরালে, দিনে কিংবা রাতে, সকালে কি সন্ধ্যায়, সব সময়ই আমরা চারটি সাক্ষীর আওতাভুক্ত। কোনো কথা বা কোনো কাজ যত গোপনেই করি না কেন, চারটি সাক্ষী থেকে আমরা তা গোপন করতে পারি না। তারপরও কীভাবে আমরা নাফরমানীর পথে পা বাড়াই!

প্রথম সাক্ষী : জমিন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেন,

” يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ”

(তরজমা) সেদিন জমিন তার যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে দেবে। (সূরা যিলযাল ৯৯ : ৪)

তারপর বললেন, তোমরা কি জানো, ‘জমিনের সংবাদ’ কী? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তার সংবাদ’ হল, প্রতিটি বান্দা-বান্দি জমিনে যা করেছে সে তার সাক্ষী দিবে; অমুক বান্দা অমুক অমুক কাজ করেছে, অমুক দিনে করেছে। এটাই হল, ‘তার সংবাদ’। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪২৯

দ্বিতীয় সাক্ষী : ফিরিশতা (ও তাদের লিপিবদ্ধ আমলনামা)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ، كِرَامًا كَاتِبِينَ، يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ، إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ، وَإِنَّ الْفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ.

(তরজমা) অবশ্যই তোমাদের জন্য কিছু তত্বাবধায়ক (ফিরিশতা) নিযুক্ত আছে। সম্মানিত লিপিকরবৃন্দ। তোমরা যা কর তারা সব জানে। পূণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বচ্ছন্দে; এবং পাপাচারীরা তো থাকবে জাহান্নামে। [সূরা ইনফিতার ৮২: ১০-১৪]

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ

‘তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন কথাবার্তা ও তাদের কানাকানি শুনতে পাই না? অবশ্যই শুনতে পাই। তাছাড়া আমার ফিরিশতাগণ তাদের কাছেই রয়েছে। তারা (সবকিছু) লিপিবদ্ধ করছে।’ -সূরা যুখরুফ : ৪৩ ৮০

ইরশাদ হচ্ছে,

وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا

(তরজমা) ‘‘আর কিয়ামতের দিন আমি (তার আমলনামা) লিপিবদ্ধরূপে তার সামনে বের করে দেব, যা সে উন্মুক্ত পাবে।’’ [সূরা বনী ইসরাঈল ১৭: ১৩]

اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا

‘‘(বলা হবে) তুমি নিজ আমলনামা পড়। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাব নেয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ -সূরা বনী ইসরাঈল ১৭: ১৪

অন্যত্র বলেন,(তরজমা) ‘…এটা কেমন কিতাব (আমলনামা) তা তো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয় না; বরং সবই পঙ্খানুপুঙ্খু হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি যুলুম করেন না। – সূরা কাহ্ফ

অন্যত্র বলা হচ্ছে, (তরজমা) সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে এবং কাফের বলবে, হায়, আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।’ [সূরা নাবা ৭৮: ৪০]

অন্য আয়াতে বলেন, (তরজমা) ‘অতপর যাকে আমলনামা দেওয়া হবে ডান হাতে, সে বলবে, এই যে আমার আমলনামা, তোমরা পড়ে দেখ। আমি আগেই বিশ্বাস করেছিলাম, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং সে থাকবে সুখময় জীবনে। সেই সুউচ্চ জান্নাতে- যার ফল থাকবে ঝুঁকে (হাতের নাগালের মধ্যে)। (বলা হবে) তোমরা বিগত জীবনে যেসব কাজ করেছিলে, তার বিনিময়ে খাও ও পান কর স্বাচ্ছন্দ্যে।

আর যার আমলনামা দেওয়া হবে তার বাম হাতে; তো সে বলবে, আহা! আমাকে যদি আমলনামা দেওয়াই না হত! আর আমি জানতেই না পারতাম, আমার হিসাব কী? আহা! মৃত্যুতেই যদি আমার সব শেষ হয়ে যেত! আমার অর্থ-সম্পদ আমার কোনো কাজে এলো না! আমার থেকে আমার সব ক্ষমতাও লুপ্ত হয়ে গেল! (এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে হুকুম দেয়া হবে) ধর ওকে এবং ওর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর ওকে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে।’ -সূরা আল-হাক্কাহ্ ৬৯:১৯-৩১

তৃতীয় সাক্ষী : অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ

তৃতীয় সাক্ষী হল আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আমার হাত, যা দ্বারা আমি ধরি। আমার এই পা, যা দ্বারা আমি চলি। আমার চোখ, যা দ্বারা আমি দেখি। কান, যা দ্বার আমি শুনি। এমনিভাবে আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা আল্লাহ আমাকে দান করেছেন।

الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দিব। ফলে তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।’ [সূরা ইয়াসীন ৩৬: ৬৫]

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,

حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

(তরজমা) অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। [সূরা হা-মীম আসসাজদাহ্ ৪১: ২০]

তখন মানুষ নিজের শরীরের চামড়াকে বলবে,

وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا

‘তারা তাদের চামড়াকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন?’ সেগুলো উত্তর দিবে-

أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ

‘আল্লাহ আমাদেরকে বাকশক্তি দান করেছেন, যিনি বাকশক্তি দান করেছেন প্রতিটি জিনিসকে।’ [সূরা হা-মীম আসসাজদাহ্ ৪১: ২১]

চতুর্থ সাক্ষী : আল্লাহ

চতুর্থ সাক্ষী আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ্ই হলেন সবচেয়ে বড় সাক্ষী, প্রথম ও শেষ সাক্ষী, যদিও এখানে চতুর্থ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি হলেন সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, যিনি অন্তরের কথাও জানেন। ইরশাদ হচ্ছে ” আপনার প্রভুর জন্য এটা কি যথেষ্ট নয় যে, তিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *