খামোশ বললেই জনগণ চুপ হবে না : প্রধানমন্ত্রী

খামোশ বললেই জনগণ চুপ হবে না : প্রধানমন্ত্রী

পাথেয় রিপোর্ট : যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের ‘চুপ করো, খামোশ’ বলে হুমকি দেওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খামোশ বললেই জনগণ চুপ হবে না।’

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্য, জঙ্গিবাদে জড়িত ব্যক্তিদের এবং হত্যা ও দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘এই অপরাধীদের ভোট দেবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, জনগণ যখন প্রতিহত করেছে তখনই তারা থামতে বাধ্য হয়েছে। সেই খালেদা জিয়া আজ এতিমের অর্থ আত্মস্যাতের অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত। এটা কোন রাজনৈতিক গ্রেফতার ছিল না।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক গ্রেফতার যদি করতে হতো তাহলে ১৪ তেও করা যেতো আবার ২০১৫ সালেও করা যেতো। তখন তিনি তাঁর অফিস নামক বাড়ির মধ্যে ৬২ জন মানুষ নিয়ে ৯২ দিন নিজেই অবরুদ্ধ ছিলেন, আর হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়য়ে হত্যা করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যাদের অপরাধ আজকে প্রমাণিত তাদের সাথে ড. কামাল হোসেন, মান্না, সুলতান মোহম্মদ মনসুর আমাদের কাদের সিদ্দিকীসহ যারা একসময় নীতির কথা শোনাত তারা কিভাবে হাত মেলালেন সেটাই আমার প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যদিয়ে এদেশের নির্বাচনটা হোক, জনগণের অধিকার নির্বাচনে ভোট দেয়া, সেটা তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করুক, সেই শান্তিপূর্ণ অবস্থা যাতে দেশে থাকে এজন্য তাদের সাথে আমি দুই দুইবার সংলাপ করলাম। কিন্তু নির্বাচনে এসে দেখলাম অপরাধী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন ও দুর্নীতিবাজদের। নির্বাচনে এরা প্রতিনিধি হবে সেটা জাতি আশা করে নাই।

সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকরা ড. কামালের কাছে জানতে চান, স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের সর্বশেষ অবস্থান কী? এ প্রশ্ন শুনেই তিনি খেপে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ? তোমার নাম কী? জেনে রাখব তোমাকে। চিনে রাখব।’ তিনি হুংকার দিয়ে বলেন, ‘চুপ করো। চুপ করো। খামোশ।’

বিকেলে ওই আলোচনাসভায় ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খামোশ (চুপ) বললেই কি মানুষের মুখ খামোশ হয়ে যাবে? খামোশ বললে মানুষের মুখ খামোশ হবে না। মানুষকে খামোশ রাখা যাবে না।’

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামীসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অন্যদের স্বজনদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, কামাল হোসেনরা এ লজ্জাটা কোথায় রাখবে? আমার এটাই প্রশ্ন। তারা লজ্জা পায়? নাকি পায় না?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আজকে দেশের রাজনীতিটাকে অপরাধ জগতে নিয়ে গেছে। আজকে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, একটি রাজনৈতিক দল যত রকমের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। কেউ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর, কেউ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বা তাদের পরিবারের সদস্য, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি—তাদেরকে মনোনয়ন দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ করেছে তাদের নির্বাচিত করে তারা দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার কংগ্রেস থেকে একটি তালিকা পাঠিয়েছে, সেখানেও জঙ্গিবাদী হিসেবে এদের নাম রয়েছে এবং ইতিমধ্যে কানাডার আদালত বিএনপিকে একটি জঙ্গিবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এরা যদি নির্বাচিত হয়ে দেশের ক্ষমতায় আসে তাহলে সেই দেশের অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা কিভাবে থাকবে, এ দেশে শান্তি কিভাবে থাকবে, অগ্রগতি কিভাবে হবে? কোনো দিনও হবে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে বলব, অপরাধীদেরকে ভোট দেবেন না, এই অপরাধীরা বাংলাদেশে যেন আর কখনো নির্বাচনে প্রতিনিধি হয়ে আসতে না পারে। যেসব এলাকায় তারা দাঁড়িয়েছে (নির্বাচনে) তাদেরকে চিহ্নিত করুন এবং তাদেরকে একেবারে বয়কট করে দিন।’ তিনি বলেন, ‘এরা ক্ষমতায় এলে এ দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এ দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে, এ দেশের ভাগ্য গড়ার জন্য আজকে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নটা হচ্ছে, সেটাও থেমে যাবে।’

দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, দলের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা সভায় বক্তব্য দেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী এবং শহিদ শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সারও বক্তব্য দেন। সভা পরিচালনা করেন দলের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *